ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রীর লোমহর্ষক বর্ণনা

অপরাধ আইন ও আদালত শিক্ষাঙ্গন

ঢাবি প্রতিনিধি : গতকাল রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরে ওই ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছে। পরে তারা ঘটনাটি গণমাধ্যমের সাথে শেয়ার করেন।


বিজ্ঞাপন

ভিকটিমের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা ৭টায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পরে থেকে শেওড়ার যে বন্ধুর বাসায় রওনা দিয়েছিলেন সেখানে পৌঁছাতে সবমিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। আর ধর্ষণের ঘটনাটি ওই সময়ের মধ্যেই ঘটে। কতক্ষণ তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন তার সঠিক ধারণা না দিতে পারলেও জ্ঞান ফিরে আসার পর তিনি বুঝতে পারেন, ঘণ্টা দুয়েক পার হয়েছে। ধর্ষক তখনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো।

মেয়েটি জানান, ‘ধর্ষক বারবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছিল। আমি ভাবছিলাম, আমি ঢাবি শিক্ষার্থী বললে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার পরিচয় জানলে আমি বাঁচবো না। ওই লোক খুব দাম্ভিক ছিল। আমি তাকে প্রতিরোধ করতে পারিনি।’

ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাতে হাসপাতালে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম ও সামিনা লুৎফা। ঘটনার বিবরণে ভিকটিম কী বলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সাদেকা হালিম বলেন, ‘মেয়েটির সামনে পরীক্ষা। স্টাডি সার্কেলে পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীরা। সে কারণেই বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তার সঙ্গে বাড়তি পোশাক ছিল, পড়ালেখার বই-নোটস আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। মেয়েটির বিবরণীতে ধর্ষক একজনই ছিল।’

এরমম একটি নারকীয় ঘটনার পর কিভাবে সেখান থেকে মেয়েটি পালিয়ে এলো- সেই প্রশ্নের জবাবে ঢামেক’র ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ‘ধর্ষণের কোনো একসময় মেয়েটি জ্ঞান হারায়। এরপর যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে ধর্ষককে দেখতে পায়। ধর্ষক পেছন ফিরে ভিকটিমের ব্যাগ থেকে কিছু বের করার চেষ্টা করছিল। এই সুযোগে সে ওই স্থান থেকে পালিয়ে আসে।’

এর ধারাবহিকতায় শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘কিছু দূর হেঁটে মেয়েটি চেষ্টা করেছে সিএনজি বা গাড়ি থামাতে। কিন্তু সেটা না করতে পেরে রাস্তা পার হয়ে বন্ধুর বাসায় যখন সে পৌঁছাতে সক্ষম হয় তখন রাত ১০টা ৩০ মিনিট। মেয়েটির বয়স খুবই কম। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, হাতে নানা জায়গায় কালসিটে। অসম্ভব মানসিক শক্তি ছিল বলে প্রায় তিন ঘণ্টা পরে সে ওখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে।’

ধর্ষকের চেহারার বিষয়ে কিছু জানিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে সামিনা বলেন, ‘ধর্ষক কেমন ছিল দেখতে তা বলতে পেরেছে কিনা প্রশ্নে অধ্যাপক সাদেকা বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছিলো সিরিয়াল কিলার। ঠান্ডা মাথায় যে ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটিয়েছে একাধিকবার। মেয়েটিকে জোর করে পোশাকও পরিবর্তন করিয়েছে, আবার ধর্ষণ করেছে। অবয়ব বিষয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছে সেই শিক্ষার্থী।’

এ ঘটনার পর এখন মেয়েটির দরকার সবার আন্তরিক সহযোগিতা। মেয়েটির মা-বাবা তার পাশে আছেন, শিক্ষকরাও আছেন। এখন তার আগামীকে সহজ করে দেওয়ার কাজটি আমাদের সবার- জানান শিক্ষক সামিনা লুৎফা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *