নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির নেতা-কর্মীরা গতকাল রাজধানীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে পুলিশসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তারা দেশের বিচার বিভাগের মর্যাদার প্রতীক মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারপতিদের বাসভবন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, বিভিন্ন পুলিশ বক্স ও পুলিশের গাড়িতে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা একজন পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তাদের হামলায় আহত শতাধিক পুলিশ সদস্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রাজধানীর নয়া পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি দেন। আজ শনিবার সমাবেশে আসা বিএনপির উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে লাঠি, চাপাতি দিয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন।

বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশের এক কনস্টেবলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তার নাম পারভেজ। তিনি ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
গতকাল সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যাওয়ার সময় মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মীদের গাড়ীতে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা আক্রমণ করে ভাংচুর শুরু করে। এরপর কাকরাইলের হেয়ার রোড এলাকায় ২টি পিকআপ, কাকরাইল মোড়ে বৈশাখী পরিবহনের একটি বাস ও কাকরাইলের রমনা পার্কের সামনে আলিফ পরিবহনের একটি বাসসহ বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে হামলা ও ভাঙচুর করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এক পর্যায়ে তারা দেশের বিচার বিভাগের মর্যাদার প্রতীক মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সময়ে জাজেস টাওয়ারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা ডিসি-ট্রাফিক রমনা ও ডিসি-মতিঝিল অফিস এবং মালিবাগ, কাকরাইল, বিজয়নগর ও ফকিরাপুলে বিভিন্ন পুলিশ বক্সে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
তারা বিজয়নগর, নাইটিংগেল মোড়, পল্টন মোড় ও আশপাশ এলাকায় পুলিশের উপর আক্রমণ করে। তারা অডিট ভবনের সামনে ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ও পুলিশের ব্যবহৃত যানবাহনে হামলা চালায়। মতিঝিলের রেলওয়ে অফিসার্স কলোনির সামনে থেকে পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেয় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে, সিসি ক্যামেরা ভাংচুর ও লুটপাট করে। এছাড়া্ও তারা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপরও হামলা করে। এসময় তারা ক্যামেরা ভাংচুর ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন ধরিয়ে দেয়, বাইরে থেকে পুলিশ হাসপাতালের ভেতরে মুহুর্মুহু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং অসংখ্য ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা হাসপাতালের কম্পাউন্ডে থাকা আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্সসহ ২৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। তাদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দরজা-জানালা ভাংচুরসহ ব্যাপক ধবংসযজ্ঞ চালায়।
এ সময় হাসপাতালের কম্পাউন্ডে আহত হয় অনেকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীরা দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি করে। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়।বিএনপির নেতা-কর্মীরা পল্টনে কালভার্ট রোডের কয়েকটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বেইলী রোডের কেএফসি টাওয়ারেও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
বিএনপির হাজার-হাজার নেতাকর্মীরা কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন দোকান ও স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতা, ধৈর্য্য ও পেশাদারিত্বের সাথে বিএনপির হাজার-হাজার উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের তান্ডবলীলা মোকাবেলা করে জন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।