বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে নানা বিতর্ক ও উত্তেজনা হয়েছে। কারণ নির্বাচন কমিশন প্রথমে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিল ৩০ জানুয়ারি। অথচ সেদিন সরস্বতী পূজা। সরস্বতী পূজার দিন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপতা দেখা দেয়। নির্বাচন পেছানোর জন্য অনুরোধ জানানো হলে নির্বাচন কমিশন তা অগ্রাহ্য করে। উচ্চ আদালতে আপিল করা হলেও সেটা নাকচ হয়। নির্বাচনের তারিখ পেছানোটা অসম্ভব বলে ধারণা দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে গেলে এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচন এবং পূজা বর্জনের হুমকি দেয়ার প্রেক্ষাপটে শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হলে তাদের আপত্তি নেই। এরপর নির্বাচন কমিশনের কানে পানি যায়। তারা তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে নির্বাচনের তারিখ পুনর্র্নিধারণ করে। এতে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিও পিছিয়ে দিতে হয়। একটি এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা। অন্যটি একুশের গ্রন্থমেলা।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ছিলো ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হয় ১০ জানুয়ারি।
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে- ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে ডিএনসিসি গঠিত। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ডিএসসিসিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাঈদ খোকন দক্ষিণের মেয়র এবং আনিসুল হক উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হন। আর আনিসুল হক মারা গেলে উপনির্বাচন হয়েছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। তখন মো. আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন।
উত্তরে ভোট : উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা মোট ৫৪টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ৩১৮টি, যাতে রয়েছে সাত হাজার ৮৪৬টি কক্ষ। মোট ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন পুরুষ আর ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন নারী।
দক্ষিণে ভোট : দক্ষিণে মোট সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৭৫টি। আছে ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। এক হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্রে মোট কক্ষ ছয় হাজার ৫৮৮টি। পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন আর নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন। মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন।
আচরণবিধি : মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা কড়াকড়ির কথা বললও অনেকটা ‘নির্বিকার’ ছিলেন।
ইভিএম বিতর্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশন শুরুতে বলেছিলেন, যদি সব দল না চায় তাহলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে না। তবে পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, সব কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএমে। যদিও এ নিয়ে বিভিন্ন প্রার্থী আপত্তি জানিয়ে আসছে৷
সিইসির আশ্বাস
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনের কালচারটা অনেকদিন ধরেই এরকম নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। নির্বাচনের কালচার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। ইভিএম যদি দাঁড় করাতে পারি, তাহলে কারো ভোট কেউ দিতে পারবে না।
পোস্টার : নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাকে এখন পোস্টারের নগরী বলা যায়। কিন্তু এসব পোস্টারের অধিকাংশই মোড়ানো ক্ষতিকর পলিথিনে। যা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বুধবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপা ও প্রদর্শন বন্ধের এ নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে।
প্রচারে হামলা : বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথের প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটে। গাবতলীর পর্বতার কলাবাজার এলাকায় মঙ্গলবার জনসংযোগে নামলে তিনি ও তার কর্মীরা হামলার শিকার হন। তাবিথ অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ আতিকুলের লোকজনই হামলায় জড়িত। জবাবে আতিকুল তার এই মন্তব্যকে ছেলেখেলা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তথ্য গোপনের অভিযোগ : উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে। সুইডেনভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে তাবিথ সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেডের মালিকানায় রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। হলফনামায় ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দেখালেও এই প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি উল্লেখ করেননি।
নৌকা এগিয়ে চলবে : ঢাকা উত্তরে আতিকুল ইসলাম মেয়র প্রার্থী হিসেবে বলেন, আমরা আশা করছি, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নাই। নৌকা এগিয়ে চলবে।
ঢাকাবাসীর জন্য নবসূচনা : আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আমি আশা করি, ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনা করতে পারব। আমরা সব সময় চেষ্টা করব নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। ঢাকাবাসী যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই নির্বাচনে ভোট দেয়।
শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব : উত্তরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, একটা বিতর্কিত নির্বাচন অতীতে হয়েছে। আর বিতর্ক না বাড়িয়ে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না। আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস। নির্বাচনে যত সমস্যাই আসুক, আমরা সবগুলোকে অতিক্রম করে চেষ্টা করব, এগিয়ে যেতে। শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।
নির্বাচন কমিশনের দ্বিতীয় সুযোগ : দক্ষিণের বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ক্রান্তিকাল চলছে, কোনো গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই। সবাইকে নিয়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করব। আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশনের কাছে এটি দ্বিতীয় সুযোগ।