ওহিদুল ও সজল সিন্ডিকেটে জিম্মি ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) মো. ওহিদুল ইসলাম ও ঠিকাদার সজল সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তারা একটি সিন্ডিকেট গঠন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সমস্ত প্রকার বদলী, নিয়োগ, টেন্ডার, রেশন, গাড়ি মেরামত,ষ্টেশন রক্ষণাবেক্ষন,উন্নয়ন, ফায়ার সেফটি,হাইডেন্ট ও যাবতীয় কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব খাতে গত ২ বছরে তারা কয়েকশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঠিকাদার সজল খান মনি উপ পরিচালক মো: ওহিদুল ইসলামের সাথে ব্যবসায়িক পার্টনার হিসাবেও কাজ করেেছন বলে তথ্য পাওয়াগেছে। যে কারণে তিনি মন্ত্রণালয়ে তদবীর করে উপ পরিচালক ওহিদুল ইসলামকে রাজশাহী থেকে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে উপ পরিচলক (উন্নয়ন) পদে বদলী করে এনেছেন।


বিজ্ঞাপন

ঠিকাদার সজল খান মনি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, তার বাড়ী রাজশাহী জেলায়। তবে তিনি প্রায় ২ বছর ধরে ঢাকার শ্যামলী ও মিরপুরে ২ টি অফিস ভাড়া নিয়ে ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন। তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম: ঢাকা ফায়ার ফাইটিং এন্ড কোং। গত ২ বছরে এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় শত কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

ঠিকাদার সজল খান মনি ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সারা বাংলাদেশে তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেশন,গাড়ি মেরামত,ষ্টেশন রক্ষণাবেক্ষন,উন্নয়ন,ফায়ার সেফটি,হাইডেন্ট ও যাবতীয় মালামাল সরবরাহের কাজ করছেন। তার অস্বাভাবিক দৌরাত্বের কারণে অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেকার হয়ে বসে আছে।

সুত্রমতে,ঠিকাদার সজল খান মনি কেবল ঠিকাদারীই নয় নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য করেও কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর তাকে সর্বাত্তোক সহযোগিতা করছেন উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) মো: ওহিদুল ইসলাম। উত্তরার কামরুল, গুলশানের আমিন ও বগুড়ার শাহিনকে ফায়ার ফাইটার পদে চাকুরী দানের আশ^াস দিয়ে তাদের কাছ ধেকে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই সজল খান মনি এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া পছন্দনীয় স্থানে বদলী করার কথা বলে সারা বাংলাদেশের ফায়ার ষ্টেশনে কর্মরত ফায়ার ফাইটারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেখেছেন তিনি।

এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ভারত সহ বিভিন্ন দেশে হুন্ডি বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। তার মোবাইলের মাধ্যমে বিশে^র বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন ১৫/২০ কোটি টাকা (হুন্ডি) লেনদেন হয় বলে দাবী করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়োগ,বদলী ও অন্যান্য খাতের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশেও পাচার করা হচ্ছে। এভাবে টাকা ইনকাম করে তিনি নিজের গ্রামের বাড়ীতে একটি ডেইরী ফার্ম স্থাপন করেছেন। যে ফার্মে শতাধিক গরু রয়েছে। ঠিকাদার সজল খান মনির এসব অপকর্ম জানতে পেরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর লেভেলের কর্মকর্তারা এই ঠিকাদার সজল খান মনির হাতে জিম্মি হয়ে আছেন। তার কথামত কাজ না করলেই মন্ত্রণালয়ে তদবীর করে বদলী করে দিচ্ছেন। এত করে ফায়ার সার্ভিসের প্রশাসনিক ,উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এক কথায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে নানাভাবে বিতর্কিত করছেন এই ওহিদুল ও সজল খান সিন্ডিকেট। অধিদপ্তরের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে তারা রাতারাতি কোটি কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। আর ঠিকাদার সজল খানকে সকল প্রকার বুদ্ধি পরামর্শ ও প্রশাসনিক সহযোগিতা করছেন উপ পরিচালক (উন্নয়ন) মো: ওহিদুল ইসলাম।

উল্লেখ্য যে, ইতিপুর্বে উপ-পরিচালক মো: ওহিদুল ইলামের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে পাওয়া সকল অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে প্রশ্নাতীতভাবে সকল অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় মো. ওহিদুল ইসলামকে উপ পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে উপ পরিচালক হিসেবে রাজশাহীতে বদলী করা হয়। কিন্তু রাজশাহীতে থাকতে নারাজ মো. ওহিদুল ইসলাম। ঢাকায় পোস্টিং পেতে বিভিন্ন মহলে তদবীর করে তিনি সফল হয়েছেন। গত ১৪ মে তাকে রাজশাহী থেকে বদলী করে ফের ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পরিচালক উন্নয়ন পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ জন্য তিনি কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ দিকে এমন একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে আবার অধিদপ্তরে ফিরিয়ে আনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কেউ কেউ বলাবলি করছেন যে, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর এবার দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত হবে। এ ক্ষেত্রে টাকার যোগান দিয়েছেন তারই ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার সজল খান মনি। যার অফিস ঢাকার শ্যামলী ও মিরপুরে অবস্থিত। জানা যায়, উক্ত ঠিকাদার মো. ওহিদুল ইসলাম থেকে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। পছন্দের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুবিধাজনক পদে বদলী করে এনে তার মত করে সকল ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্যেও রয়েছে উক্ত ঠিকাদারের সম্পৃক্ততা। উল্লেখ্য, ঠিকাদার সজল নিজেকে ফায়ার সার্ভিসের ছায়া ডিজি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সে ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর সিরাজ এবং তার সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সেফটি প্ল্য্যান, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বদলি তদবির করেন।যার কারনে অন্যান্য ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।

অতীতে বিএনপি জামাতপন্থী ঠিকাদার সজল খান মনি ও মো. ওহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এর আগেও মো. ওহিদুল সহকারী পরিচালক, ওয়ার হাউস ও ফায়ার প্রিভেনশন এর দায়িত্বে থাকাকালীন সময় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। মো. ওহিদুল ইসলাম এডি ওয়্যার হাউজ এবং ডিডি এডমিন থাকা কালিন সময়ে তার স্ত্রীর-সন্তান ও অন্যান্য আত্মীয়দের নামে বগুড়া, ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, জয়দেবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৫ একর জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া স্ত্রীর নামে ও মেয়ের নামে ২টি প্লট ২টি গাড়ী রয়েছে তার। উত্তরাতে ঠিকাদার সজলের সাথে পার্টনারশীপে ব্যবসা করে আসছেন। এছাড়াও, উত্তরাতে তার রয়েছে ২০ কাঠা জমি। ঠিকাদার সজলের সাথে গড়ে তুলেছেন ডেইরি ফার্ম যার আনুমানিক মূল্য হবে ৫ কোটি টাকা। মো. ওহিদুল ইসলামের এহেন কর্মকান্ডে বিব্রত খোদ ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকা এবং ডিপার্মেন্টের ভেতরে বেপরোয়া কর্মকান্ডে বিরক্ত ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যার ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্ট্যান্ড রিলিজ করে উপ-পরিচালক, রাজশাহী হিসাবে বদলি করে ওহিদুলকে। সেখানে গিয়ে তিনি আগের চেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া ও দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বারবার তাকে সতর্ক করার পরেও তিনি তার কাজ অব্যাহত রাখতে থাকেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ পুনরায় তাকে উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) হিসাবে অধিদপ্তরে বদলি করেছে।

তবে ওহিদুল সেখানে যোগদান না করে উপর মহলে তদবীরের মাধ্যমে উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) অথবা উপ-পরিচালক ঢাকা হওয়ার জন্য হাইভোল্টেজ তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে মন্তব্য নেওয়ার জন্য মো. ওহিদুল ইসলামের ফোনে কল করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদার সজল খান মনি বলেন, আমি ঠিকাদারী ব্যাতিত অন্য কোন কাজ করি না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা এ বিষয়ে তদন্তের দাবী তুলেছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *