কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকিঁ দিয়ে বেপরোয়া মাদকের রমরমা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের শীর্ষ মাদক কারবারী মাসুদ। সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে আধিপত্য সেই সাথে আকারের সাথে বেড়েছে ব্যবসার পরিধি।

একটি সূত্র জানায়, পরমতলা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা মিয়ার ছেলে মাসুদ দীর্ঘদিন যাবত কারবারে জড়িত। মাসুদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও, এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রতিনিয়তই ইয়াবা,গাজাঁ সহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা হচ্ছে। প্রশাসন জানে, তবু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”

ভারত সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় মাদকের হটস্পট কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা। এক দশক ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত। বাবার জুতার দোকানে সময় দিতেন একসময়। পরে মোবাইল মেরামতের দোকান দিয়েছিলেন মাসুদ।

কোনো রকম টেনেটুনে সংসার চলত তাঁদের। এখন মাসুদের উত্থানের কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। কাঁধে চারটি মামলা থাকলেও মাদক ব্যবসা করে তাঁর সাফল্যের ঝুড়িতে আছে একাধিক গাড়ি, ঢাকায় বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট, মুরাদনগর উপজেলা সদরে বাড়ি ও ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা। এই উপজেলার ২২ ইউনিয়নের শতাধিক লোক মাদকের কারবারে জড়িয়ে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন।

দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁরা আড়ালে-আবডালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সখ্য রেখে চলেন কিছু সাংবাদিক, নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও।
উপজেলা কমপ্লেক্সের পেছনে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। এই এলাকায় তিনতলার ভিলায় থাকেন মাসুদ।
আবাসিক এলাকার প্রবেশপথসহ দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বহু স্থানে লাগানো আছে সিসি ক্যামেরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাঁর গণ্ডির আধা কিলোমিটারের মধ্যে এলেই টের পান মাসুদ। তাই গত এক বছর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাসুদের এক সহকর্মী বলেন, ‘আগে বিকাশ বা নগদে টাকা পেমেন্ট করলেই মাদক পৌঁছে দেওয়া হয়। তার সহযোগি শরীফ সহ আরো বেশ কয়েকজ মিলে চালাচ্ছে এই কার্যক্রম।
কে কখন কোথায় মাদক নিয়ে যাবে, তা সরাসরি মাসুদ ডিল করেন। পলিথিনে মুড়িয়ে গাড়ির তেলের ট্যাংকির ভেতরে করে ইয়াবা ও সবজি (গাঁজা) পৌঁছে দেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গতিবিধি জানানোর জন্যও কর্মী নিয়োগ করা আছে। সে মিনিট দশেক পর পর আপডেট দেয়। মাসুদ যখন ঘুমান তখন শিল্পী নামের এক নারী দায়িত্বে থাকেন।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আবাসিক এলাকা যেন মাদকের হাট বানিয়েছেন মাসুদ। তাঁর এখানে কিছু বিশেষ বিশেষ লোকের আসা-যাওয়া দেখে স্থানীয়রা হতবাক। ভয় নিয়ে মুখ বন্ধ করেই চলাচল করতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে একাধিক সচেতন নাগরিক বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে যতবারই অভিযোগ করা হয়েছে, ততবারই দেখা গেছে কিছুদিনের মধ্যে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় তারা আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে।”
মাদকের প্রভাবে যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, বেকার যুবক থেকে শুরু করে অনেকেই মাদকের জালে আটকা পড়ছে। অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু কখনো কখনো কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, “আমরা সব ধরনের মাদকবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছি। কেউ যদি তথ্য দেয়, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
তবে এলাকাবাসীর দাবী, শুধু কথায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপেই মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব উপেক্ষা করে শীর্ষ মাদক কারবারীকে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।