বিশেষ প্রতিবেদক : শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) দীর্ঘদিন যাবত চেয়ারম্যান শুন্য রয়েছে। দেশের শাসন ক্ষমতার পটপরিবর্তন ও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহন হেতু সঠিক সময়ে চেয়ারম্যানের শুন্য পদে কোন দক্ষ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে দেখা দিয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। একই সাথে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মধ্যে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অনিহা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী আমলে গত ১৫/১৬ বছর যাবত প্রধান কার্যালয়ে বড় বড় চেয়ার আকড়ে থাকা কর্মকর্তাদের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে বদলী করা ফরয হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাইতো বিসিকে সংস্কার চাইছেন সিংহভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। এ বিষয়ে তারা শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
একাধিক সুত্রে জানাগেছে,বিসিকের প্রশাসন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার অদক্ষতা, অযোগ্যতা, আন্তরিকতার অভাব, সরকারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং উদাসীনতা প্রদর্শন, এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করণ প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এবং অসংখ্যবার গণমাধ্যমে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তথাপিও আজ অবধি কার্যকরি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সময়কালে আগাগোড়া অনিয়মে অভ্যস্ত বিসিকের বিসিকের কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ নাজমুল হোসেন এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন এর গুরুতর অসদাচরণ, সরকারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বার্থ বিনষ্টকরণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থকরণ, সরকারের প্রচলিত নিয়ম নীতির বত্যয় ঘটিয়ে সরকারী দপ্তরে অসস্তোষ সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় কাজে ব্যবহারে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন এর কারণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কার্য চলমান এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির সদস্যদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার কারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারী করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের স্মারক নং-৩৬.০২.০০০০.০৪০.২৭.০০৮.২২/ ১০২৭১, তারিখঃ ০৭ জুলাই ২০২৪ এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ জারীর স্মারক নং-প্রশাসন/ব্যঃ নঃ/৭৭১৭/১০৩০৯, তারিখঃ ০৭ জুলাই ২০২৪। সংশ্লিষ্ট দুজন কর্মকর্তার অযোগ্যতা, অদক্ষতা এবং বে-আইনী কার্যক্রমের সবিস্তার প্রতিবেদন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং বিসিক কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সঠিকতা প্রমাণ করে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পত্র সূত্র নং-৩৬.০০.০০০০.০৬৫.২৭.০০৯.১৯.২০৮ তারিখঃ ০৪ জুন ২০২৪ এর নির্দেশন অনুযায়ী কমিটি গঠন এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিসিক কর্তৃপক্ষের অনীহার আসল কারণ কি? এক মাসেরও অধিককাল সময় পরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । এবং মহাদুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেনকে সদস্য হিসাবে নিয়োগ দান করা হয়েছে।
উক্ত দুজন কর্মকর্তার সরকারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রদর্শন, সরকারী নিয়ম নীতি অনুসরণ না করে বে-আইনী কার্যক্রম সম্পাদন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্থকরণ বিষয়ে অভিযোগের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ হতে দীর্ঘদিন যাবত এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে-উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ বরাবর উদাসীনতা প্রদর্শন করে বে-আইনী কার্যক্রমে অভ্যস্ত দুইজন কর্মকর্তার পক্ষ অবলম্বন করে কাজ করে আসছে-বিষয়টি নিরপেক্ষতার সাথে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
যে দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তাদেরকে স্বপদে বহাল রেখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তদন্ত কাজে প্রভাব বিস্তারের সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা অনুযায়ী তাদের দপ্তর পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ লোক দেখানোর জন্য এ ধরনের তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ জারী করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখা সুশাসন ও আইনের শাসনের দৃষ্টিতে শোভনীয় নয়।যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তাদেরকে স্বপদে বহাল রেখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু একটি বিষয়।
প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত কমিটি এবং প্রশ্নবিদ্ধ কারণ দর্শানোর নোটিশ। আইনের শাসন বাস্তবায়নে উক্ত দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দায়িত্ব বিসিক চেয়ারম্যান এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের।