বাহারছড়া রেঞ্জের শিলখালী বিটে দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম।
শাহিন আলম (টেকনাফ) : দেশের বনাঞ্চল ও বনভূমি রক্ষার্থে সরকারের আলাদা ভাবে একটি বনবিভাগ অধিদপ্তর থাকলেও তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় এসব রক্ষা তো দুরের কথা ধ্বংস করতেই কাজ করে যাচ্ছে দায়িত্বে থাকা বাহারছড়া রেঞ্জের কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে বাহারছড়া শিলখালী রেঞ্জের বিটে ঘুরে দেখা যায়, বনাঞ্চল উজাড় করে বিশাল পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। পাহাড় বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার সামাজিক বনাঞ্চল গুলো। শুধু তাই নই, পাহাড়ে এস্কেলেটর মেশিন বসিয়ে বিশাল বিশাল পাহাড় এখন সমতল ভূমিতে পরিনত করেছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী পাহাড় খেকোরা সমতল করা জায়গায় আবার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে দেদারসে। উক্ত বনের বিষয়ে বাহারছড়া রেঞ্জের শিলখালী বিটে দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম রহস্যজনকভাবে নিরব ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। এসবের সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না এ দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারাও।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের শিলখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তারা টাকার লোভে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করতে পরস্পর যোগসাজশে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে সরকারি বনসম্পদ ধ্বংস করে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে সরকারি বনভুমির জায়গাকে বৈধতাও দিচ্ছে এ কর্মকর্তা। অন্যতায় এই এরিয়াতে বিশাল বনভূমির জায়গা প্রায় অবৈধ দখলদারদের হাতে হওয়ার কথা না! এত বড় বড় সবুজ শ্যামল পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানেও অনেক পাহাড় বিলীন হওয়ার পথে! স্থানীয় সিএমসির সভাপতি পরিচয় ও হেডম্যান নামধারী দালালদের সাথে রহরম দহরম সম্পর্ক রয়েছে এ কর্মকর্তাদের।
স্থানীয় এক ইউপি সদস্য জনবাণী কে জানান, হেডম্যান পরিচয়ধারী কয়েকজন ব্যাক্তি এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়, কারও গরু, মহিষ ও ছাগল পাহাড়ের আশেপাশে যায়কিনা নিত্য পাহারায় থাকে। যদি পাহাড়ের আশেপাশে যায় তারা আটকে অর্থ দাবি করে। কারও থেকে ৫ হাজার, কারও ১ হাজার আবার কারও ৫’শ টাকা। যদি কারও টাকা দিতে বিলম্ব হয়, বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তিনি আরও জনায়, এলাকার অসহায় গরিব পরিবারের লোকজন পাহাড়ের আশেপাশে লাকড়ি বা পানের বরজে গেলে ঐ হেডম্যান পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা পাহাড়ি অস্ত্রধারীদের যোগসাজশে শারিরীক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায়ের অনেক নজির রয়েছে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাহারছড়া ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াস বলেন, উপকূলীয় বাহারছড়ার শিলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চল প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাহাড় কেটে দালান নির্মাণ তো নিত্যদিনের ঘটনা। বনভূমি দখল ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে কোন সাংবাদিক বা পরিবেশবাদীরা যদি বনবিভাগকে অভিযোগ দেয় ঐ দখলদারদের বিরুদ্ধে একটা করে মামলা ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই বাড়িটি দ্রুত নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। তবে হয়নি উচ্ছেদ অভিযান। এই মামলা তাদের কাছে বনবিভাগের জায়গা গিলে খাওয়ার জন্য অনেকটা সার্টিফিকেট হিসাবে অর্জন করা হয় বলে মন্তব্য করেন।
সরজমিনে দেখা যায়, শিলখালী রেঞ্জের আওতাধীন বিটে জাহাজপুরা গর্জনবাগান সংলগ্ন এলাকায় হুমকির মুখে গর্জনবনে ঝুঁকি নিয়ে অর্থের বিনিময়ে দুলা মিয়ার পুত্র মো: বেলাল এর বসত বাড়ি নির্মাণের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এ বাড়িটি বড়ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন মূহুর্তে উপর থেকে গর্জন গাছের ডাল ভেঙে বড়ধরনের দূর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন লোক নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক জানায়, যারা বনবিট কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে পারে তাঁদের বাড়ি দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়। আর গরীব, অসহায় পরিবার টাকা দিতে না পারলে ঝুঁপড়ি ঘরও নির্মাণ করা অসম্ভব হয়।
এদিকে স্থানীয়দের প্রশ্ন, এই বিটে শত শত একর বনভূমির জমিতে অবৈধভাবে দালান ঘর নির্মাণ কারীদের মামলা দেওয়ার কথা শুনলেও কোনদিন এসবের উচ্ছেদ অভিযান না হওয়াতে মামলা নামক মিথ্যা নাটকের অবসান ছেয়ে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বাহারছড়ায় বনরেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাকের ডগায় বনবিভাগের জায়গায় ভুমিদস্যুরা বিশাল বহুল দালান তৈরি, বিভিন্ন খামার গড়ে তুলা,পাহাড় কেটে পানের বরজ তৈরি, ঝাউগাছ কর্তনসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে বনবিভাগের কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে প্রকাশ্যে দিবালোকে দালান বাড়ি নির্মাণ করলেও সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কর্মকর্তা ও বিট অফিসার নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে।
উল্লেখ্য: গত ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) ভোর ৫ টার দিকে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নোয়াখালী কোনার পাড়া এলাকায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এক বন্যহাতির মৃত্যুর ঘটনায় আসামি বাদ দেওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা মোটা অংকের বানিজ্য নিয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে..
এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বাহারছড়া শিলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম সৈকত কে বলেন, নতুন স্থাপনা ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। দেশের যে পরিস্থিতি চলতেছে আমি কি কাইর খাবো? আমার বিটে বনভূমির জায়গায় যারা বাড়ি-ঘর করতেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।
কক্সবাজারের দক্ষিণ বনবিভাগের টেকনাফের সহকারী বনরক্ষক (এসিএফ) মনিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড় নিধন করে দালান নির্মাণকারীদের তথ্য গুলো দেন। এ বিষয়ে বনবিভাগ সবসময় কঠোর রয়েছে। অভিযান চলচে চলতেই থাকবে। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।