নিজস্ব প্রতিবেদক :: হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত গুলশানের ব্যবসায়ী তানভীর আলী বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করাসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে গুলশান থানা পুলিশ। তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার ব্যবসায়ী তানভীর আলীকে ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যর্থ করে দিতে বিপুল পরিমান টাকা খরচ করেন গুলশানের ব্যবসায়ী তানভীর আলী। এ বিষয়ে তথ্য প্রমান সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত এ বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে গুলশানের ব্যবসায়ী তানভীর আলী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি বড় অংকের টাকা অর্থ দিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতা করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান। তবে তদন্তের প্রয়োজনে আওয়ামীলীগ নেতাদের নাম জানাতে অস্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ওসি তৌফিক আহম্মেদ গণমাধ্যমে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে গুলশানের ব্যবসায়ী তানভীর আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলাসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে আব্দুল্লাহ আল আবিরকে হত্যার অভিযোগে তানভীর আলীসহ দুই শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। তানভীর আলির বিরুদ্ধে বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার অবৈধ অর্থ উপার্জন, ধর্ষন ও নারী নির্যাতন এর একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সেলিনা আক্তার ধর্ষনের মামলা করে হয়রানির শিকার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাকে দীর্ঘদিন ধরে আটক করেনি। অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একাধিক বার নোটিশ করলেও সে হাজির হয়নি।
সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে এবং তাকে একাধিকবার নোটিশ ও করা হয়েছে। ছাত্র গণহত্যার অভিযোগে গত শনিবার দেশ ত্যাগ করে পালানোর সময় গুলশানের বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তানভির আলী সহ মামলার অন্য আসামিরা হলো-জাকের হোসেন বাবুল ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, শিমুল ১৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, আনিসুর রহমান সুজন গুলশান থানা ছাত্রলীগ, মানিক গুলশান থানা ছাত্রলীগ, সোহাগ গুলশান থানা ছাত্রলীগ, মোঃ মহসিন ওরফে কাকরা মহসীন শ্রমিক লীগ, গুলশান থানা, মোঃ জামিল হোসেন যুবলীগ গুলশান থানা,মোঃ শহিদুল ইসলাম যুবলীগ গুলশান থানা,মোঃ আব্দুল হামিদ সহ-সভাপতি আওয়ামী ওলামালীগ গুলশান শাখা সহ আরো ১৫০/২০০ জন অজ্ঞাতনামা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, আসামীরা পরস্পর যোগসাজশী, সন্ত্রাসী, দাঙ্গাবাজ, নরহত্যাকারী, খুনী, উশৃঙ্খল প্রকৃতির এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শনকারী নিষ্ঠুর প্রকৃতির ব্যক্তি। ১নং আসামী তানভীর আলী গুলশান থানাসহ উক্ত এলাকার আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা, এলাকায় মাদক, নারী পাচারকারী, ধর্ষণকারী ও চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা এবং অত্র হত্যার ঘটনার নির্দেশ দাতা।