নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানান্তর হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে। সেখানে বিভিন্ন প্রপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে এসবের মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার।
গোল্ডেন ভিসার সুবিধায় এসব টাকা পাচারের অভিযোগে গত বছরের ৩ এপ্রিল অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে সংস্থাটি সেসব বাংলাদেশির বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। এসব তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে দুদক আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানা গেছে। এ অনুসন্ধান কমিটির টিম লিডার হলেন সংস্থাটির উপপরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল, সদস্য উপপরিচালক আহসান উদ্দিন এবং উপপরিচালক ইসমাইল হোসেন।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
সূত্র জানায়, দুই বছর আগে থেকে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি কেনার প্রবণতা আরও ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করে গেছেন। তবে বাংলাদেশি ধনীরা সবচেয়ে বেশি প্রপার্টি কিনেছেন করোনাকালে। আর ইউএই কর্তৃপক্ষ গোল্ডেন ভিসা সুবিধা চালু করার পর বাংলাদেশিদের দুবাইয়ে প্রপার্টি ক্রয়ের মাত্রা হু হু করে বাড়তে থাকে।
বিত্তবান বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে ২০১৯ সালে এ ভিসা চালু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থসম্পত্তির মালিকানা থাকলেই এ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলোও দূর করা হয়েছে। অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪৫৯ জনের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই হচ্ছে এবং বাকিগুলোর তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত আছে।
সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার পর তা নিয়ে আইনগত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, দেশের ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের অনেকেই ইউএইর দেওয়া এ সুযোগ লুফে নিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের ব্যাংক পরিচালক, পোশাক ব্যবসায়ী, রেল ও সড়কের সামনের সারির ঠিকাদারসহ দেশের বড় ও মাঝারি পর্যায়ের অনেক ব্যবসায়ী এখন আমিরাতের গোল্ডেন ভিসাধারী। এদের মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়েছে। যদিও একসময় অর্থ পাচারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল সিঙ্গাপুর ও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ।
এখন সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে দুবাই। এক্ষেত্রে পাচারের প্রধান মাধ্যম হুন্ডি এবং ডিজিটাল হুন্ডি। আবার বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানির আড়ালে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেও টাকা পাচার করেছেন। জানা গেছে, টাকা পাচারের অভিযোগ থাকলেও ইউএই সরকার গোল্ডেন ভিসার আওতায় আসা বিদেশিদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধার পরিমাণ বিভিন্ন সময়ে বাড়িয়েছে। এই ভিসাধারীদের দেওয়া হয় পরিবারসহ ১০ বছরের রেসিডেন্সিয়াল সুবিধা। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও বেশ সহজ। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও তাদের দেওয়া হয় বিশেষ সুবিধা।
সহজ করা হয় ব্যবসা চালানোর অনুমতির প্রক্রিয়া। আগে গোল্ডেন কার্ডধারীদের টানা ছয় মাসের বেশি ইউএইর বাইরে অবস্থান করার সুযোগ ছিল না। ২০২২ সালের অক্টোবরে এতেও সংশোধন এনে নিয়ম করা হয় এবং গোল্ডেন ভিসাধারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশটির বাইরে অবস্থান করতে পারবেন। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের সংগৃহীত তথ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশের সূত্র ধরেই হাই কোর্টের নির্দেশনায় অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগে বেশ কিছু নাম সংযুক্ত করা হয়। জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত কোনো স্পন্সরশিপ ছাড়াই গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। কাজ, বসবাস ও পড়াশোনার জন্য এমন সুবিধা পাওয়া যায়। আমিরাত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন ভিসা দেয়। মূলত দক্ষ কর্মী ও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতেই এই ভিসা দেয় দেশটি। বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, সরকারি কাজে বিনিয়োগকারী, আবাসন খাতে বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফলকারী, সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা অন্যান্য দেশের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা এই ভিসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান।