!! জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা কাজের চেয়ে গ্রুপিং আর তদরিরে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া কে কার লোক, তা দেখে কাজ করা হয়। এ কারণে সেবাগ্রহীতাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি অনেক কর্মকর্তা অফিস চলাকালে গোপন কক্ষে ঘুমিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের লোক বলে পরিচিত ছিলেন এবং আওয়ামী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর সাথে তার সরাসরি সম্পর্ক ছিলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে দেশের সরকার পতনের পর তারাই ভোল পাল্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। নিজেদের স্বার্থে বৈষম্যের শিকার বলে বিভিন্ন দাবি দেওয়ার নামে আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা করে গৃহায়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নিজেদের শক্তির জানান দেন !!
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীসহ দেশের শহর এবং গ্রামাঞ্চলে আবাসন সংকট নিরসনকল্পে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (জাগৃক)। তবে এক দশক ধরে উল্টোরথে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আবাসন সমস্যা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় দলিল করে দেওয়া, নথি গায়েব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়নসহ সব ক্ষেত্রেই চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও তার আঁচ লাগেনি গৃহায়নে।
বিগত সরকারের আমলে দাপট দেখিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবে ছিলেন যারা, এখন তারাই আবার ভোল পাল্টে পালন করছেন সরব ভূমিকা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে ৪/১নং প্লটের সামনে ৩.০৬ কাঠা খণ্ডজমি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী যার বাড়ির সামনের জমি তাকেই বরাদ্দ দিতে হয়। কিন্তু তা না করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই জমি অন্যদের নামে লিজ দলিল করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইকবাল রোডের ওই জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভূমি বরাদ্দ সুপারিশ জাল করে বোর্ড কমিটিতে অনুমোদন করানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে লিজ দলিলে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। একইভাবে ভূমি বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্ত জালিয়াতি করে ক্রমিক নং ১৫ এরপর দেখানো হয়েছে ক্রমিক নং ১ ও ২। এতেই প্রমাণ হয়, ভূমি বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্তপত্রে ভুয়া সিদ্ধান্ত প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে কাটপেস্ট করা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) কুদ্দুছ আলী সরকার গুরুতর এ অনিয়মের নেপথ্যে মূল ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, এই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাড়ে তিন কাঠা সরকারি জমি আইনবহির্ভূতভাবে ব্যক্তির নামে খণ্ডজমি হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছেন। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের বি-ব্লকের ৮ নম্বর রোডের ৫ নম্বর প্লটের ক্ষেত্রেও জালিয়াতি হয়েছে। অন্যদিকে মিরপুর-২নং সেকশনের ২ নম্বর রোডের ৯-বি প্লটটি বর্তমান মালিক নূর বানুর বাবার নামে প্রথম বরাদ্দ করা হয়। তারা গত জুলাই মাস পর্যন্ত সেখানে নির্বিঘ্নে বসবাস করলেও কুদ্দুছ আলী সরকার কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে পৌনে পাঁচ কাঠা জমি স্থানীয় ভূমিদস্যু ইউসুফ সাঈদ বাহিনীর সদস্য মো. রফিকুল ইসলামের নামে বিকল্প প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেন। এরপর তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্লটটি রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে দখল করা হয়।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর হাউজিং এস্টেটের প্লটের জালিয়াতি ছাড়াও গত কয়েক মাসে ১০টি প্লটের নথি জালিয়াতি করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
অভিযোগ আছে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা কাজের চেয়ে গ্রুপিং আর তদরিরে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া কে কার লোক, তা দেখে কাজ করা হয়। এ কারণে সেবাগ্রহীতাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি অনেক কর্মকর্তা অফিস চলাকালে গোপন কক্ষে ঘুমিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের লোক বলে পরিচিত ছিলেন এবং আওয়ামী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর সাথে তার সরাসরি সম্পর্ক ছিলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে দেশের সরকার পতনের পর তারাই ভোল পাল্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। নিজেদের স্বার্থে বৈষম্যের শিকার বলে বিভিন্ন দাবি দেওয়ার নামে আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা করে গৃহায়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নিজেদের শক্তির জানান দেন।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কুদ্দুছ আলী সরকারের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর মধ্যে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ পাওয়া সাতজনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি শাখায় পোস্টিং করা হয়েছে। অথচ নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এই কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ অস্থায়ী অবস্থায়ই তাদের দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি, নামজারি, আমমোক্তার, লিজ, কাজের অনুমতিপত্র স্বাক্ষরসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা হলেন মো. জাহিদুল হুদা, কৃষ্ণ ভৌমিক, মো. হাবিবুর রহমান, শাহরিয়ার আহাম্মেদ সুমন, মো. সাজ্জাত হুসাইন, টিপু সুলতান, রাকিবুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কুদ্দুছ আলী সরকার তাদের গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন।
অভিযোগ আছে, ক্ষমতার জোরে অনিয়মকেই নিয়ম বানান কুদ্দুছ আলী সরকার। টাকার বিনিময়ে সরকারি প্লট ব্যক্তির নামে দেওয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িত তিনি। এসব বিষয় জানাজানি হলে নিজের অপরাধের দায় ছোট কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে করা হয় বদলি। বাইরে সেবাপ্রত্যাশীরা ভিড় করলেও অফিস চলাকালে দরজা বন্ধ করে ঘুম পাড়েন। অনিয়ম-দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।
অভিযোগ আছে, জাতীয় গৃহায়নে ঘুষ ছাড়া তিনি কোনো কাজ করেন না। কাজের ঘুষ নেন তার ব্যক্তিগত সহকারী শোয়েব উল আহসান ও তার ড্রাইভারের মাধ্যমে। টাকা না দিলে মাসের পর মাস গৃহায়নের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সমাধান হয় না। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও কুদ্দুছ আলী তার পিএ শোয়েব উল আহসানকে মিরপুর ১১নং সেকশন ও রূপনগর আবাসিক এলাকায় কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এসব কাজ থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন কুদ্দুছ আলী নিজেই।
সরেজমিন দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকারের সাক্ষাৎ পান না সেবাপ্রত্যাশীরা। জাতীয় গৃহায়নে সরকারি হাউজিংয়ের নথি গায়েব করে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া প্লট ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন গৃহায়নের কর্মকর্তারা। এই জাল দলিলে কুদ্দুছ আলীরও স্বাক্ষর আছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা উইংয়ের সদস্য (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকার গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা বলার আগে চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।’ এরপর নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
যোগাযোগ করা হলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. হামিদুর রহমান খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, ‘কুদ্দুছ আলী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) অভিযোগ জমা পড়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অবস্থায় মসজিদ, মাদ্রাসার নামে বরাদ্দকৃত টাকা এবং মন্ত্রণালয় ঠিকাদারের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে কুদ্দুস আলী সরকারের বিরুদ্ধে। এক বছর আগে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও গৃহায়ন ভবনে যোগদান করে ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় সদস্যপদে কর্মরত থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে চলছেন তিনি।