
নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর মালিক হালিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে আবারও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক নিষিদ্ধ, ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ তৈরি ছাড়াও কর্মকর্তা -কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ না করে আত্মসাত করার মতো গুরুতর এক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগমতে, চলতি বছরের ১৯ মে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর মেসার্স প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর প্রাক্তন সাতজন কর্মকর্তা, অভিযোগকারী সাত কর্মকর্তারা যথাক্রমে, মতো: জাকারিয়া ফারুকী (ম্যানেজার, কোয়ালিটি এসিওরেন্স), মো: ইসমাইল হোসেন, (ম্যানেজার, এসিওরেন্স), মো: ফারুক উজ-জামান, (সিনিয়র সহকারী ম্যানেজার প্রডাকশন), কাওসার আহমেদ (ডেপুটি ম্যানেজার কোয়ালিটি এসিওরেন্স) মো: সজল হোসেন, (ডেপুটি ম্যানেজার কোয়ালিটি কন্ট্রোল) মো: সুজিত সাহা,( ম্যানেজার প্রডাকশন) এবং মো: ইদ্রিস আলী আহম্মেদ, (কোয়ালিটি ম্যানেজার) ওই সাত কর্মকর্তা প্রদত্ত অভিযোগের বিষয় বস্তু হুবহু তুলে ধরা হলো :

জানাব, সবিনয় নিবেদন এই যে, মেসার্স প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ শিশু পল্লী রোড, টেপিরবাড়ী, শ্রীপুর, গাজীপুর জেলায় অবস্থিত এই ফার্মাসিউটিক্যালস এর ব্যবস্থপনা পরিচালক জনাব হালিম হাওলাদার গত তিন চার বছর যাবৎ কতিপয় কর্মকর্তার স্যালারী আত্মসাৎ করে উৎপাদন অব্যহত রেখে আসছে এবং প্রত্যক কর্মকর্তার সাথে অপেশাদার আচরণ করেন। বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দান কালে বিভিন্ন রকম আশ্বাস প্রদান করে আসছে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে মাস শেষ হওয়ার পর স্যালারী প্রদানের সময় ঠিকমতো স্যালারী না দিয়ে বিভিন্ন রকম তালবাহানা করে। কর্মকর্তাদের টাকা আটকে দেয় এবং স্যালারী বা তাদের পাওনা টাকা না দিয়ে বিভিন্ন রকম হুমকি ও অসভ্যমূলক আচরণ করেন। তার ফলসৃতিতে অনেকে পাওনা টাকা না পেয়ে Resignation Letter দিয়ে নিরবে কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাছাড়া এই প্রাইম ফার্মার কারখানার দুই বছর পরপর নবায়নের নিয়ম থাকলেও তা আদৌ নবায়ন করা হয় নি। উল্লেখ্য যে, বিগত শেষ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২০২১ সালে নবায়ন হয় যাহা পরবর্তী ২০২৩সালে নতুন করে নবায়ন কথা থকলেও প্রায় দেড় বছর অতিবাহীত হয়ে যাওয়ার পরেও নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া অধিকাংশ ঔষধ পণ্যের কোনো ডি.আর নম্বর নবায়ন নেই।

এমতাবস্থায় উপরোক্ত বিষয়গুলোর সুষ্ঠ তদন্ত করে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহন ও আমাদের নিম্নে বর্ণিত কর্মকর্তাদের প্রাপ্য স্যালারী আদায়ে আপনার একান্ত হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছি।”
উপরোক্ত অভিযোগের সাথে সংযুক্তি আবেদনকারীদের নিয়োগ পত্র, নিবন্ধন পত্র, হাজীরার প্রমাণপত্র এবং বেতন ভাতা পরিশোধের নিবন্ধন বহি দেওয়া হয়। যার অনুলিপি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গাজীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযোগ শাখা এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

জানা গেছে, মেসার্স প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের অবস্থান টেপির বাড়ি শিশু পল্লী রোড গাজিপুর। উৎপাদন লাইসেন্স নাম্বার জৈব -২২৫ এবং অজৈব -৪৫৪। পূর্বের অফিসের ঠিকানা বাড়ি নাম্বার -৩৫, ( দ্বিতীয় তলা) রোড নাম্বার -৭ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। বর্তমান অফিসের ঠিকানা :প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যাল লি. হাউজ নং-১৭,রোড নং-৭১/ এ,ব্লক-ই,বনানী,ঢাকা-১২১৩।উক্ত কোম্পানির মালিক মো: হালিম তিনি বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রকার ঔষধ তৈরির র-মেটেরিয়াল (কাঁচামাল) প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি করে তা মিটফোর্ড সহ বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে সরবরাহ করে থাকেন।
আবার অনেক সময় তিনি নিজেও মিটফোর্ডের ক্যেমিকেল ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে র-মেটেরিয়াল নিয়ে ফিনিস প্রডাক্ট সরবরাহ করেন। তার কোম্পানির উৎপাদিত ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ মিটফোর্ডের ঔষধের পাইকারী বাজারে আন্ডার রেটে বিক্রির কারণে সারাদেশের ঔষধের পাইকারী ও খুচরা বাজারে মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি করে নিজের পকেট ভারি করলেও বিতর্কিত ও নিম্নমানের ঔষধ কিনে প্রতারিত হচ্ছে জনগণ।প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর তৈরি করা পিয়ার – ২০ ( ওমিপ্রাজল বিপি-২০ মি.গ্রা) নামক ১০০ টির ১ বক্স গ্যাস্টিকের ক্যাপসুলের মুল্য মোড়কের গায়ে ৪৫০ টাকা মুদ্রিত আছে অথচ ওই ১০০ টির ১ বক্স পিয়ার -২০ মিটফোর্ডের পাইকারী বাজার সহ সারাদেশের পাইকারী ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯০ টাকায়।

তাহলে ঔষধের নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক এসব কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধের মুল্য নির্ধারণ করে কি লাভ? পিয়ার -২০ নামক ক্যাপসুল এর ব্যাচ নাম্বার -০০৬, ডিএআর নাম্বার -৩১৩-২০-২৯, উতপাদন তারিখ -ফেব্রুয়ারি-২০২৩, মেয়াদ উত্তির্নের তারিখ -ফেব্রুয়ারি- ২০২৫। এছাড়াও প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ট্যাবলেট সেনক্যাল-ডি (ক্যালসিয়াম), নিউরো -পি ( ভিটামিন বি১, ভিটামিন -বি৬, এবং ভিটামিন -বি১২) পিট্রোলাক ( ক্যাটোরোলাক ট্রমিথামন-২০ মি.গ্রা), প্রিজিথ-৫০০ এম জি (এরিথ্রোমাইসিন -৫০০ মি গ্রা), প্রিডন -১০ (ডমপ্রিডন-১০ এম জি), জোকন ৫০ এম জি ( ফ্লুকোনাজল-৫০ এম জি) ক্যাপসুল, প্রিটল -৫ এম জি (লিভোকট্রাইজিন-৫ এম জি) ট্যাবলেট, ডায়ালাক্স -৮০ এম জি (গ্লিক্লাজাইড-৮০ এম জি) ট্যাবলেট, গ্রোফেনাক-১০০ এম জি (এসিক্লফেনাক বিপি -১০০ এম জি) ট্যাবলেট, প্যান্টাপ্রাজল পিপিএল -২০ (প্যান্টাপ্রাজল বিপি-২০ এম জি) ট্যাবলেট এবং ডায়াফরমিন-৫০০ (ডায়াফরমিন এইচসিএল – ৫০০ এম জি) ট্যাবলেট। এসব ঔষধ মিটফোর্ডের ঔষধের পাইকারী বাজার সহ সারাদেশের পাইকারী ও খুচরা বাজারে আন্ডার রেটে বিক্রি হচ্ছে। প্রসঙ্গ পূর্বক উল্লেখ করা যায় কোম্পানিটি ৪৫০ টাকার ওমিপ্রাজল -২০ (১ বক্স ১০০ টি ক্যাপসুল) যদি ৯০ টাকায় বিক্রি করে তাহলে কি পরিমাণ কাস্টমসে ভ্যাট পরিশোধ করে? কারণ ১৫% ভ্যাট দিতে হলে ৪৫০ টাকার ভ্যাট ই আসে ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা ১০০ টির ১ বক্স ওমিপ্রাজল-২০, ৯০ টাকায় বিক্রি করলে (৯০.০০-৬৭.৫০)=২২.৫০ ওই হিসেবে প্রতি ১০০ টির ১ বক্স ওমিপ্রাজল ক্যাপসুলের দাম পড়ে সাড়ে ২২ টাকা। তাহলে ১ কেজি ওমিপ্রাজলের কাঁচামালের দাম কতো? আর ১ কেজি ওমিপ্রাজলে কতো পিস ক্যাপসুল তৈরি করা হয়। ওমিপ্রাজল -২০ মিলিগ্রাম ক্যাপসুলের ওজন কি ২০ মিলিগ্রাম আছে?

মিটফোর্ডের একটি সুত্রের দাবি পূর্বে প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ১০/১২ জন ব্যাবসায়ীক অংশীদার থাকলেও বর্তমানে টিকে আছে ১ জন। বর্তমানের ব্যাবসায়ীক অংশীদার কে কোম্পানির ব্যাবসায় লোকসান দেখাচ্ছেন তিনি নতুন করে ব্যাবসার জন্য অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব করলেও রহস্যজনক কারণে প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর মালিক মো: হালিম হাওলাদার টাকা না নিয়ে নানাবিধ তালবাহানা করে মিটফোর্ডে আন্ডার রেটে প্রতিমাসেই প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার ঔষধ বিক্রি করছেন। এতে করে তার নিজস্ব আয় হচ্ছে প্রায় ৫০ লাখের মতো।
গত ২০/০৪/২০২১ তারিখে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশান (ডব্লিউ এইচ ও) এর নিয়মানুসারে গুড ম্যানুফেক্সারিং প্রাক্টিস ( জিএমপি) এর গাইডলাইন অনুসরণ না করায় প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সহ বেস কয়েকটি কোম্পানির কারখানায় ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদনের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় ওই সকল ঔষধ কোম্পানির ঔষধের কারখানায় সকল প্রকার ঔষধ প্রস্তুত ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়।
উক্ত পত্রের স্মারক নং-ডিজিডিএ/২৯-২/০৯/৭৭৬২। এছাড়াও মেসার্স প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড টেপির বাড়ি শিশু পল্লী রোড গাজিপুর প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের স্মারক নং-ডিএ/এমএল-৩১৩/৯৯/১৭৪৫ মোতাবেক সেফালোস্পোরিন জাতীয় পদ ব্যাতিত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন লাইসেন্স (অজৈব-৪৫৪ ও জৈব-২২৫) এর আওতায় সকল প্রকার ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরন সাময়িক বাতিল করা হয়।উক্ত অফিস আদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান ২০ এপ্রিল ২০২১ সালে স্বাক্ষর করেন।

মেসার্স প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর বিরুদ্ধে ড্রাগ কোর্টে বেঙ্গল ড্রাগ রুলস অনুযায়ী মামলা চলমান। ২০২১ সালে কোম্পানির কারখানায় কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা শাখা অভিযান পরিচালনা করে।এছাড়া প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর লাইসেন্স নবায়ন প্রায় দেড় বছর ডেট ফেল এবং ওই কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধের পদও নবায়ন নাই, তাহলে কোম্পানিটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঔষধের উৎপাদন তারিখ, ভিএআর নাম্বার, ব্যাচ নাম্বার ও মেয়াদ উত্তির্নের তারিখ ব্যাবহার পূর্বক ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাত করছে কোন প্রক্রিয়ায়? বর্তমানে প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর ফাইল এর কাজ চলমান আছে।
সম্প্রতি উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত পিয়ার-২০ (ওমিপ্রাজল- ২০) ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরিক্ষায় পিয়ার-২০ নামক গ্যাস্টিকের ঔষধের মধ্যে মাত্র ১৯% ওমিপ্রাজল শনাক্ত হয়েছে, এখানেই প্রামান পাওয়া যায় প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাতের বিষয় টা চলমান প্রক্রিয়া, ঠিক এভাবেই কোম্পানিটি বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গাজিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কতোবার প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর কারখানা পরিদর্শন ও যথাযথ তদারকি করেছেন।
জানা গেছে, আগামীকাল রবিবার ৬ অক্টোবর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শক টিম প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর ঔষধ তৈরির কারখানা পরিদর্শনে যাচ্ছেন,উদ্দেশ্য প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লি: এর উৎপাদন লাইসেন্স নবায়ন, ও উক্ত কোম্পানির অনুমোদিত ঔষধের পদসমূহের নবায়ন এবং কারখানাটি ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউ এইচ ও) এর গুড ম্যানুফ্যাক্সারিং প্রাকটিস (জিএমপি) গাইড লাইন অনুসরণ করে কি না এসব দেখার জন্য ।
প্রসঙ্গঅনুযায়ী গাজীপুর বা দেশের আনাচে-কানাচেতে প্রত্যান্ত অঞ্চলে অবস্থিত প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর মতো ঔষধ কোম্পানির সংখ্যা ও তো কম নয় তাহলে এই শ্রেণির কোম্পানির দেখভাল করছেন কোন সংস্থা ?
প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর মালিক মোহাম্মদ হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসে বসার কথা বলেন, এরপর তিনি বক্তব্য দেওয়ার কথা বলে কোন প্রকার বক্তব্য প্রদান করেন নি বিধায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না। ।