আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষত ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। তাঁর পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ছিল জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি, গোলান মালভূমিকে ইজরায়েলের অংশ হিসেবে ঘোষণা, এবং আব্রাহাম চুক্তি—যা ফিলিস্তিনিদের প্রতি মার্কিন সমর্থন কমিয়ে আনে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই পদক্ষেপগুলো আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইজরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখিয়েছে। জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করে দীর্ঘদিনের মার্কিন কূটনীতির একটি বড় পরিবর্তন আনে। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়লেও ট্রাম্পের অবস্থান অপরিবর্তিত ছিল, এবং ইজরায়েলের অধিকারের প্রতি মার্কিন সমর্থনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। গোলান মালভূমির অধিকার ইজরায়েলের কাছে স্বীকৃতি দেওয়াও একই পথে মার্কিন সমর্থনকে জোরদার করে। দ্বিতীয় মেয়াদে, পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপন এবং সি এলাকা সংযুক্তকরণে সমর্থন আরও বাড়ানো হতে পারে, যা ফিলিস্তিনিদের ভূমি অধিকার সংকুচিত করবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল আব্রাহাম চুক্তি, যার মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হয়, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার দাবিতে। দ্বিতীয় মেয়াদে, সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা চলতে থাকলে ফিলিস্তিন ইস্যুটি আরও প্রান্তিক হয়ে পড়তে পারে। ফিলিস্তিনিরা আরব বিশ্বের সহানুভূতি হারাতে পারে, যা তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বড় ধরনের বাধার মুখে ফেলতে পারে।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ওয়াশিংটন অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল, যা ফিলিস্তিনিদের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়। এ ছাড়াও, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আর্থিক সহায়তা কেটে দেওয়া হয়, যার ফলে ফিলিস্তিনি প্রশাসন আর্থিক সংকটে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে এই চাপ আরও বাড়ালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আর্থিক ও রাজনৈতিক অবস্থান আরও সংকটময় হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ইরানবিরোধী নীতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে, যা হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। দ্বিতীয় মেয়াদে এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে সহিংসতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে মানবাধিকার ইস্যুতে উদাসীনতা প্রকাশ পায়, যা আন্তর্জাতিক সমালোচনার কারণ হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, চীনে উইঘুরদের উপর নিপীড়নের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন সরাসরি কঠোর অবস্থান নেয়নি এবং ইয়েমেনে সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও উপেক্ষিত ছিল। গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযানেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তবুও ট্রাম্প প্রশাসন ইজরায়েলের সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে মানবাধিকার ইস্যুগুলো আরও উপেক্ষিত হলে ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন আরও জোরদার হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, ফলে ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের উদাসীনতা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নিপীড়নকে আরও গভীর করবে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ইজরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন, আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, এবং মানবাধিকার ইস্যুতে উদাসীনতা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লড়াইকে আরও সংকটময় করে তুলতে পারে। এর ফলে ফিলিস্তিনিরা আরও চরমপন্থী প্রতিরোধের দিকে যেতে বাধ্য হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়িত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে।