নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই বিপ্লবে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা ও তাদের পুনর্বাসনে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, আজ রবিবার ৮ ডিসেম্বর, বিকেলে রাজধানী ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতাকে দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসনে বিজিবির উদ্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজাহার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অব.), উইমেন সাপোর্ট গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠাতা মিসেস তৌহদা হক, আহত ছাত্র-জনতা ও তাদের অভিভাবকগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরুতেই বিজিবি মহাপরিচালক তার স্বাগত বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারী বীর যোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাঁদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এক নতুন বাংলাদেশের ঠিকানা পেয়েছে। সেই অভিষ্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজিবিও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকেই বিজিবি স্ব-উদ্যোগে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন আহত ছাত্র-জনতা কে বিভিন্ন মেয়াদে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। সহযোদ্ধা হিসেবে আহত ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ১০৭ জন ছাত্র-জনতাকে পুনর্বাসন করার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ০৭ জন যোদ্ধাকে সহযোগিতা করা হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান ছাড়াও ইতোপূর্বে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র উদ্যোগে শহীদ আবু সাঈদ ফাউন্ডেশনে ০৫ লক্ষ টাকা, জয়পুরহাটের শহীদ নজিবুল সরকার বিশাল এর পরিবারকে ০৩ লক্ষ টাকা এবং রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ০৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। সীমান্তে যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে ‘সবার উপরে দেশ’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বিজিবির প্রতিটি সদস্য ‘সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে কাজ করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারাদেশে বিজিবি অত্যন্ত সহনশীল, মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয় পরবর্তী সময়ে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যেকোনো সময়ের চেয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, থানাসমূহকে কার্যকর, রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, কল-কারখানা সচল রাখাসহ পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনে বিজিবি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।
ছাত্র জনতার বিজয় অর্জনকে সুসংহত করতে বিজিবি সীমান্তে জোরদার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তৎকালীন সরকারের প্রায় অর্ধশত বিতর্কিত ব্যক্তিদের সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টাকালে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে বিজিবি। নতুন প্রেক্ষাপটে বিজিবি দেশের সীমান্ত রক্ষায় জোরদার ভূমিকা পালন করে গত ০৩ মাসে সীমান্তে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চোরাকারবারিদের আটক ও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চোরাচালানী মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিস ফরিদা আখতার বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসের উত্তাল সময়ে বিজিবির ইতিবাচক ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ছাত্র-জনতার বিজয় পরবর্তী সময়ে বিজিবির ভূমিকার অত্যন্ত প্রশংসা করে বলেন, গত দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচার রোধে বিজিবি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও ভারতে ইলিশ পাচার রোধে বিজিবি আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কবি, লেখক, গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজাহার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অব.) দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা জুলাই বিপ্লব ও বিজয় পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবির ভূয়সী প্রশংসা করেন।