রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস।( ছবি সংগৃহীত)

নিজস্ব প্রতিবেদক : একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। রাজউকের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন গেড়ে বসেছে। সংস্থাটির সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরেই দুর্নীতি ও ভয়াবহ অনিয়ম রয়েছে।

আর এসব দুর্নীতির ক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত স্পষ্ট। ফলে, রাজউক কর্তৃক সার্বিক জবাবদিহি কাঠামো কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন ব্যহত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পাওয়া গেল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াসকে। জানা যায়, রাজউকের চাকরিতে যোগদানের পর হতে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশাল ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। সুত্রে জানা গেছে, ইলিয়াস একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে দপ্তরটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আর এই সিন্ডিকেটের অবদানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শত-শত ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। কখনো কখনো এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ প্রস্তাব পাশ হয়। কিন্তু সেটিও একসময় ধামাচাপা পড়ে যায় এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে।
এছাড়াও ছাড়পত্র ও নকশার অযুহাত দেখিয়ে মাসের পর মাস ফাইল আটকে রেখে গ্রাহক হয়রানি এই সিন্ডিকেটের নিয়মিত কর্মযজ্ঞ। ঢাকাকে একটি সুন্দর পরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রাজউকের পথ চলা শুরু হলেও এই সিন্ডিকেটের কারণে তা প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, রাজউক জোন ৫/২ এর অথরাইজড অফিসার ইলিয়াস এর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি পদে পদে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অত্র জোনের প্রতিটি উচ্ছেদ অভিযানকে অথোরাইজ অফিসার ইলিয়াস নানা কৌশলে টাকা কামানোর মেশিন হিসাবে পরিনত করেছেন। প্রতিটি উচ্ছেদ কার্যক্রম যেন তার কাছে হয়ে উঠে এক একটি চাঁদ রাত। তার এই সিন্ডিকেটে রয়েছে বেশ কিছু পরিদর্শক, রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী কিছু নেতা, ঊর্ধ্বতন ২/১ জন কর্মকর্তা ও কিছু দালাল চক্র।
স্থানীয় এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উচ্ছেদ পরিচালনার সময় এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অত্র এলাকায় নানা কৌশলে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। এছাড়া উচ্ছেদের তালিকায় থাকা এমন অনেক ভবন রয়েছে- যেগুলো প্রকৃতপক্ষে উচ্ছেদ হয়নি।
এমনও শোনা যাচ্ছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে অংঙ্গীকারনামায় ভবন মালিকের স্বাক্ষর নিয়ে আসে এই সিন্ডিকেট। যাতে লেখা থাকে মালিক পক্ষ নিজ খরচে আপত্তিকর বা অবৈধ অংশটুকু ভেঙ্গে দিবে। এরপর ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেট। এ নিয়েও পরদিন থেকে বিরতিহীনভাবে সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে চলে ঘুষের দেন দরবার। কাংখিত চাহিদা পূরণ হলে তবেই মেলে অনুমোদন। মিলে যায় মিটারে পূণ:সংযোগ। এরপর সবই ঠিক হয়ে যায় আগের মতই। এভাবেই দিনের পর দিন বিশাল এই রাজধানীতে শতশত ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ইলিয়াস সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে।
জানা যায়,নিয়ম বহির্ভূত ভবনের নোটিশের ফাইল ধামাচাপা পড়ারও অসংখ্য নজির আছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এছাড়া তাদের সহযোগিতায় নকশার পরিবর্তন, বহুতল আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক ভবন, এমনকি উচ্চতাও বাড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে। নকশার আবেদন ফাইল মাসের পর মাস নিজ জিম্মায় রেখে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। এমনও অভিযোগ আছে, সদস্যদের মাধ্যমে রাজউকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ইলিয়াসরা।
উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় ক্ষেত্র বিশেষ তিনি নোটিশ প্রদান করেন একটি, দুইটি, তিনটি, কখনো বা চূড়ান্ত নোটিশ। সময় বিশেষ তা আবার ধামাচাপা দেয়া হয়। নেয়া হয়না কোন ব্যবস্থা। এমনকি উচ্ছেদ প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরও এমনটি হয়েছে। জানা যায়, ইলিয়াস ও তার সিন্ডিকেটের ঘুষ, দুর্নীতির অন্যতম একটি সাইড হলো আবাসিকের নকশায় অনুমোদিত তলার চেয়ে বেশি তলা করার সহযোগিতা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া।সিন্ডিকেটের গ্রাহক হয়রানি ও বানিজ্য শুরু হয় ছাড়পত্র আবেদনের পর থেকেই।
বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে যেমন কাগজপত্রে ঠুনকো সমস্যা, জমির পাশের রাস্তা কমবেশি, ড্যাপের ঝামেলা ইত্যাদির অযুহাত দেখিয়ে মাসের পর মাস ফাইল আটকে রেখে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ইলিয়াস সিন্ডিকেট। এসব বিষয়ে ইতিপূর্বে কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিক ভুক্তভোগী ও প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। ইলিয়াস সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার বা ব্যবস্থা নেয়ার সাহস করেন না।
সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াস নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। গাড়ি, ঢাকায় বাড়ি, প্লট ছাড়াও নিজ এলাকায় করেছেন অঢেল সম্পদ। তার অফিসে গিয়ে দেখা গেছে অনেক গ্রাহক দিনের পর দিন ঘুরছে ফাইল নিয়ে। তার পছন্দের মতন ঘুষ দিতে না পারায় ফাইল পাস হয় না।
গ্রাহকের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগও পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে। অফিসের এক কর্মকর্তা তার খারাপ আচরণের প্রতিবাদ করলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ইলিয়াস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি ইলিয়াসের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাসহ দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে ইলিয়াস কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন।
উপরোক্ত বিষয়ে সরাসরি মো. ইলিয়াস হোসেন এর মন্তব্য জানতে অফিসে গেলে তিনি ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান এর সাথে কথা বলতে বলেন। পরে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান দুপুরের খাবার খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে কোন মন্তব্য ছাড়াই বিষয়টি এড়িয়ে যান।