মেঘনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। নদীভাঙন বৃদ্ধি, ফসলি জমি হারানোর শঙ্কা এবং বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আতঙ্কে অসহায় হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। এসব অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে মহিষারচর প্রাইমারি স্কুল মাঠে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে স্থানীয় জনসাধারণ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে নদীর ভাঙন দিন দিন বেড়ে চলেছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এই দুর্বিষহ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে চাই।”
এদিকে এলাকার কৃষকেরা জানান, ফসল উৎপাদনে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। নদীভাঙনে আবাদযোগ্য জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মানববন্ধন আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, “আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং এই অবৈধ বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করবে। মেঘনা উপজেলাবাসীর অধিকার রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ।”
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান হচ্ছে না। ফলে তারা এ ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরতে বাধ্য হচ্ছেন। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। তারা আরও বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্টের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।
এ মানববন্ধনের মাধ্যমে এলাকাবাসী তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন। তারা আশাবাদী, এই প্রতিবাদের জেরে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। একসঙ্গে সচেতন জনগণ ও প্রশাসন কাজ করলে মেঘনা নদী ও এর তীরবর্তী এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এ বিষয়ে মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হ্যাপী দাস বলেন, “অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে আমরা সবসময় তৎপর। এলাকাবাসীর দাবি যথাযথভাবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”