গাজীপুরের জয়দেবপুরে সাংবাদিক আমিনুল কে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা  :  উলটো তাকেই আসামি বানালেন ওসি হালিম

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

গাজীপুর প্রতিনিধি  :  গাজীপুরের ভবানীপুর বেপারীপাড়ায় সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে চড়াও হয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে কুড়ালের সাহায্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়ায় সাংবাদিক স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা পাপিয়াসহ দুই সহোদর গুরুতর আহত হন। তাঁদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে গেলে সাংবাদিক আমিনুলের প্রাণ রক্ষা পায়।


বিজ্ঞাপন

উপস্থিত লোকজন রক্তাক্ত আমিনুলকে সংকটাপন্ন অবস্থায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। ধারালো কুড়ালের উপর্যুপরি কোপে তার হাত, পা ও দেহের নানা স্থানে গভীর ক্ষত হয় ও প্রচুর রক্তক্ষরণ ঘটে।


বিজ্ঞাপন

আহত সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম ভবানীপুরের মৃত লাল মিয়ার ছেলে, তিনি গাজীপুরের স্থানীয় দৈনিক আজকের জনতা পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মামলা নিতে জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম গড়িমসি করেন এবং আহত সাংবাদিক আমিনুলের বিরুদ্ধেই উলটো মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও ওসি হালিমকে এ মুহূর্তেই অপসারণের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জয়দেবপুর। এরই মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রেসক্লাব ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে।

ওসি হালিম ছুটছেন উলটো পথে, ঊর্ধ্বশ্বাসে :  মামলা না নেওয়া, অপরাধীদের পক্ষাবলম্বন, পালটা মামলার মাধ্যমে বাদী-সাক্ষীদের হয়রানি চালানোর এন্তার অভিযোগ আছে জয়দেবপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। থানার ওসি আব্দুল হালিম দিন দিনই অপরাধীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা হয়ে উঠেছেন। পুলিশ “দুষ্টের দমন- শিষ্টের লালন”কে মূলমন্ত্র বানিয়ে সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ওসি হালিম ছুটছেন পুরোপুরি উলটো পথে, ঊর্ধ্বশ্বাসে। এতে দাপটের সঙ্গে বেশুমার অর্থবিত্ত জোটাতে পারলেও পুলিশের ‘টিম জয়দেবপুর‘ আবার দাঁড়াতে যাচ্ছে জনতার মুখোমুখি।

শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা যেখানে রাত দিন পরিশ্রম করে, অভাবনীয় ধৈর্যের মাধ্যমে পুলিশের প্রতি জনআস্থা ফেরাতে ব্যস্ত, সেখানে ওসি হালিম শ্রেণীর পুলিশ সাহেবরা ব্যক্তি স্বার্থে সবকিছু নস্যাৎ করে দিচ্ছেন। আবার তারা মেতে উঠছেন পুরোনো অপকর্মে। থানা, ফাঁড়ি, পুলিশকে গুটিকয়েক মানুষের আজ্ঞাবহ বানিয়ে তাড়িয়ে বেড়ান সাধারণ জনতাকে।

জয়দেবপুরে ওসি সিন্ডিকেট : গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়ালগড়, পিরুজালী, মির্জাপুর ইউনিয়নের চিহ্নিত চাঁদাবাজ, দখলবাজ আর দলের অপরাধী নেতাদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়েছেন ওসি। তারাই জিডি, মামলা, আসামি ধরা, ছাড়ার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিচ্ছেন। এমনকি এলাকার ডাকসাইটে দুর্বৃত্ত-অপরাধীদের গ্রেফতার করে পুলিশ কর্মকর্তারা থানা হাজতে নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন না, পথিমধ্যে ওসির দাপটে ধমকি দিয়ে আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছেন যুবনেতারা। দখলবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে উলটো মামলা দিয়ে হয়রানির বিপরীতে অভিযুক্তদের জামাই আদর করার বেশ কয়েকটি রেকর্ডও রয়েছে ওসি হালিমের।

মামলা নয়, মীমাংসা খুঁজেন তিনি :  গাজীপুর সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য, সাংবাদিক আমিনুল ইসলামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার অপচেষ্টা চালালেন ভাওয়ালগড়ের ছাত্রলীগ পান্ডা খ্যাত জাহিদ ও তার সহযোগীরা। সেই নৃশংস হামলা ও কোপানোর লোমহর্ষক ভিডিওচিত্রও ঘুরছে মানুষের হাতে হাতে, মোবাইলের স্ক্রিনে স্ক্রিনে। অথচ সাংবাদিক হত্যাচেষ্টার মামলাটি রেকর্ড না করে ধামাচাপা দেয়ার ফন্দি আঁটেন ওসি। কারণ, অভিযুক্ত জাহিদ হাসান হচ্ছেন ওসির অর্থ বাণিজ্য সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। কিন্তু রক্তাক্ত সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের পাশে দাঁড়ান তার ক্ষুব্ধ সহকর্মীরা। ওসি হালিমের মামলা রুজু না করার টালবাহানায় বাদপ্রতিবাদ, উত্তেজনার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় জেলা পুলিশ কর্তাদের ধমকে দীর্ঘ বিলম্বে মামলা রুজু করতে বাধ্য হন।

তাতে কী? সেখানেই থেমে যাননি ওসি, বরং ভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হন তিনি। ঘটনার দু’দিন পর অভিযুক্ত জাহিদ হাসানের পক্ষাবলম্বন করে থানায় কাউন্টার মামলা সাজানো হয়, চুপিসারে সে মামলা রেকর্ডও করেন তড়িঘড়ি। হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন সাংবাদিক আমিনুলকে আসামি বানিয়ে পালটা ধমকি দিতে থাকেন। দুর্বৃত্ত জাহিদ হাসানের সঙ্গে মিট মীমাংসা করে নেয়ার ব্যাপারেও শুরু হয় চাপাচাপি।

জয়দেবপুর থানার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘটনা যত গুরুতরই হোক না কেন- সে ব্যাপারে মামলা রেকর্ডের ক্ষেত্রে ওসি হালিমের বেজায় আপত্তি। বেশিরভাগ ঘটনা থানায় বসেই মিট মীমাংসা করে দেন তিনি। এরপরও কেউ কেউ অনুনয়বিনয় করে মামলা রুজু করলে তার যেন আর রেহাই নেই। পরক্ষণেই বাদী-সাক্ষীদের কাউন্টার (পালটা) মামলার আসামি বানিয়ে তাড়িয়ে বেড়ায় পুলিশ। তখন অপরাধের শিকার ভিক্টিমদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থায় পড়তে হয়।

পুলিশ হয়ে উঠেছে সেই আতঙ্ক :  থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রশিক্ষণে দুর্বল, বিধি-বিধানের প্রতি অমনোযোগী থাকলেও ওসি আব্দুল হালিম বিচার-সালিশ, বৈঠকি সমঝোতায় খুবই পটু। জায়গা- জমির বিরোধ, অংশীদারিত্বের বণ্টন, দখল-বেদখল, জাল- জালিয়াতির অপরাধ বিষয়ে প্রতি দিনই থানায় দুই-চারটি সমঝোতার বৈঠক বসে।

নিজের এসব কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দলের শেল্টারও জুটিয়ে নিয়েছেন ওসি। প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নানা আপদ থেকে ওসিকে রক্ষার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার ঝুট বাণিজ্য বাগিয়ে নিচ্ছেন অনায়াসে। রীতিমতো চোরে চোরে মাসতুতো ভাই‘র আত্মীয়তা চলছে জয়দেবপুর থানা পুলিশে। অন্যদিকে অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীরা পালিয়ে থাকাই নিরাপদ ভাবছে, তাদের কাছে পুলিশ হয়ে উঠেছে সেই আতঙ্ক।

ওসি হালিমের ধারাবাহিক অপকর্ম থেকে জয়দেবপুরবাসীকে রেহাই দিতে এরই মধ্যে তাকে অপসারণের জোর দাবি উঠেছে। সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও ওসি হালিমকে এ মুহূর্তেই অপসারণের দাবিতে আগামী শনিবার মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রেসক্লাব। তাদের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেও প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের আয়োজন করার খবর পাওয়া গেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *