অনুসন্ধানী প্রতিবেদন !! কেওয়াট খালী সেতু ও সড়ক প্রকল্পে দুর্নীতি তদন্তে মন্ত্রনালয় !!   প্রতিবেদন ঠেকাতে সওজ প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন ময়মনসিংহ রাজধানী সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক  :  ওবায়দুল কাদের ও বর্তমান সড়ক সেতু উপদেষ্টা ফয়জুল করিমের সমান আস্থাভাজন বলে ক্ষ্যাত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান। “মন্ত্রী-উপদেষ্টা যার যার – ক্ষমতা মইনুলের ” এ কথার সাক্ষী যেন সড়কের প্রতিটি ইটের কণা। ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্বে ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ব্রক্ষপুত্র নদীর উপর নির্মিত হতে যাওয়া সর্ববৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নকশা প্রণয়ন ও ভূমি অধিগ্রহণে প্রকল্প পরিচালকদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্প একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপে প্রকল্পের ব্যয় ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা থেকে আরও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এই সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে জরিপ কার্য সম্পাদন করা হয়। এরপর ২৩/৯/২০২১ ইং তারিখে একনেকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয়। ঐদিনই প্রকল্পটি অনুমোদন করাতে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কিছু রাজনীতিবিদ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালক মিলে একনেকের চূড়ান্তভাবে পাশ হওয়া নকশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে।


বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর একনেকে সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়কের বর্ধিত নকশা পাশ হওয়া কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল সেতু প্রকল্পটির কাজ ০১/০৭/২০২১ইং তারিখে শুরু হয়ে ৩০/৬/২০২৫ ইং তারিখে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি প্রকল্পের কাজই শুরু করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

একাধিক গণমাধ্যমের তথ্যসূত্র ও প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী একনেক সভায় অনুমোদিত নকশাটি পরিবর্তন করে নদীর উত্তর পূর্বাংশের সংযোগ সড়কের নকশাটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে নেওয়া হয়। তাতে সংযোগ সড়কের দূরত্ব কমপক্ষে ১ কিলোমিটার বেড়ে যায় যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর ফলে প্রকল্প ব্যয় ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রায় ২-৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।

বিভিন্ন মহল ও স্থানীয় জনগণ জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রীর দপ্তরে কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের সম্ভাব্যতা তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও অদৃশ্য কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।

একনেক কর্তৃক পাশকৃত প্রকল্প কেন পরিবর্তন করা হলো; এর জবাব এখন পর্যন্ত পাওয়া না গেলেও প্রকল্প পরিচালক ও তার অনুগত সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ ও আমলাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রকল্প পরিচালক নূর-ই-আলম (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্বরত রয়েছেন। মূলত তার সময়েই নকশা পরিবর্তনের সমস্ত কর্ম সম্পাদন করা হয়। প্রকল্পের ম্যানেজার দিদারুল আলম ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোক হওয়ার সুবাদে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের তিনি উৎসাহ দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কেন আলোচিত কেওয়াটখালী সেতু প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করা হলো সেই তথ্য খুঁজতে ‘দ্যা ফিন্যান্স টুডে’র প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে রীতিমতো কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে।

সূত্রমতে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান তৎকালীন ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্বে ছিলেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে যে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অত্যন্ত আস্থাভাজন সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে ঘিরে যত অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে তার মূল মাস্টারমাইন্ড বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল মেম্বার।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে যদি কোন দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয় তার দায় কোনোভাবেই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই প্রধান কর্মকর্তা এড়াতে পারেন না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, যে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি সেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম কিভাবে সংঘটিত হলো? সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও সরকার অনুগত কিছু ব্যক্তিদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই নকশার এই পরিবর্তন করা হয়েছে।

একনেকে যখন এই সেতু প্রকল্প পাশ হয়েছিল এবং ২০২১ সালে যখন কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো তখন বিশ্ববাজারে ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা যা বর্তমানে ১২০ টাকার অধিক। নকশা পরিবর্তন না করেও বর্তমান অনুমোদিত প্রকল্পের নকশায় কাজ করলে অতিরিক্ত যে ৩৫-৪০% টাকা খরচ করতে হবে এর দায়ভার কে নিবে? সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।

জনস্বার্থে এলাকাবাসীর পক্ষে জনৈক মোশাররফ হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ডিএফডিপি শাখা স্মারক নং ৩৫.০০.০০০০.০২৯.২৭.০৩৭.২৪.০৯ অফিস আদেশে ময়মনসিংহ জেলার কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্প সংযোগ সড়কের নকশা প্রণয়ন ও ভুমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি তদন্তরে জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব গোপাল চন্দ্র দাস আহবায়ক, একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও সহকারী সচিব খন্দকার মোঃ আবু জাফর এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

বিগত ২২/০১/২০২৫ ইং তারিখে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহিদুল ইসলাম এই আদেশে স্বাক্ষর করেন। কমিটিকে ২২/০১/২০২৫ইং তারিখ হইতে পরবর্তী ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যরা প্রকল্প এলাকা ও ময়মনসিংহ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব গোপাল চন্দ্র দাস ও সদস্য উপ-সচিব মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ‘দ্যা ফিন্যান্স টুডেকে বলেন, ‘কমিটি তাদের কাজ শেষ করেছে। দুই একদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কমিটির রিপোর্টকে প্রভাবিত করতে একটি মহল তৎপর রয়েছে যাদের কারনে দীর্ঘদিন প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জুড়ে বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদেরের অনুসারী ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারগণ এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ এখনও এদের দখলে। সর্ষের মধ্যে ভুত রেখে ভুত তাড়ানো কখনোই সম্ভব নয়।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে যে দুটি হাউজিং প্রকল্পকে সুবিধা প্রদান করতেই প্রকল্পের নকশার পরিবর্তণ করা হয়েছে সেটা হচ্ছে ময়মনসিংহ হাউজিং ও ব্রক্ষপুত্র হাউজিং। এই দুটি প্রকল্পের চেয়ারম্যান হলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম। অন্য দিকে সরকারী খাস জমির পরিবর্তে ব্যক্তি মালিকানাধীণ জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

মূলত: অধিগ্রহন খাতে মাত্রাতিরিক্ত অতিরিক্ত ব্যয়ের অপকৌশলের অংশ হিসেবে সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়কগুলো ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে ঘণ জনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে নির্মাণের ক্রটিপূর্ণ নকশা করার অভিযোগ উঠেছে।

কেওয়াটখালি সেতুটি অষ্ট্রেলিয়ার সিডনী হারবার ব্রীজের মত ষ্টীল সেতু বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ৮২ লাখ ও বাকী অর্থ এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইবিবি) দেওয়ার কথা ছিলো। বর্তমান সরকার জনস্বার্থে দ্রুত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ করবে বলে এলাকাবাসী আশায় বুক বেঁধে আছে। কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে কোন পরিষ্কার কথা বলছে না মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পটি প্রজেক্ট মরযানেজার দিদারুল আলম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ধামাচাপা দিতে যুগ্ম সচিব গোপালচন্দ্র দাস কে মোটা অঙ্কের আর্থিক প্রলোভন দিয়েছেন। ২০১৮ ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা একটি নতুন দলও সড়কের প্রধান প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মকর্তাদের হয়ে তদন্ত ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে চাইলে সওজ প্রধান প্রকৌশলী (বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা ও সাবেক বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা) ফোন ধরেনি। এ বিষয়ে মুখ খুলেনি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট যুগ্ম সচিব ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন গোপাল চন্দ্র দাস। তথ্যসূত্রঃ এনবিবি


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *