বিশেষ প্রতিবেদক : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে শস্যের মধ্যে ভুত ঢুকে পড়েছে। আর এই ভূত কিছুতেই তাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে কেনাকাটার নামে সরকারী অর্থ হরিলুটের প্রতিযোগিতা চলছে। এফএমডি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পিপিআর নির্মূল প্রকল্পের আওতায় ১০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যাকসিন কেনা নিয়ে দীর্ঘ দিন লুকোচুরি খেলার পর মন্ত্রনালয়ের সর্বোচ্চ কর্তার নির্দেশে সর্বনিম্ন দরদাতা অপেক্ষা ২১ কোটি টাকা বেশী মুল্যে ভ্যাকসিন কেনার সুপারিশ করেছেন বিগত ৪ঠা আগষ্ট কথিত শান্তি সমাবেশের নেতৃত্বদানকারী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে মুজিব কর্ণার নির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান ।

এফএমডি ভ্যাকসিন কেনায় যে অনিয়ম করতে যাচ্ছে তা আগ থেকেই জানা গিয়েছিল এবং অনিয়মের বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছিল। এমন কি বিষয়টা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে বিস্তারিত জানানোর পরেও তিনি কোন প্রতিকার তো করেনইনি উপরন্ত অনিয়মকেই সমর্থন করেছেন বলে একাধিক সুত্র দাবী করেছে।

উল্লেখ্য যে, বিগত দরপত্রে ৭ টি টেন্ডার জমা পড়ে । সেখান থেকে ৩ টি দরপত্র সরাসরি বাতিল হয়ে যায় এবং ৪ টি দরপত্র বিবেচনায় রাখা হয়। ৪ টি দরপত্রের মধো জেনটেক সর্বনিম্ন ৭৯.২৫ কোটি টাকা দর প্রদান করে এবং ওএমসি ৮২.৫০ কোটি টাকা দর প্রদান করে ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হয়। কিন্ত ঐ সময় ওএমসির কাগজপত্র সঠিক না থাকায় দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্ববান করা হয়। পুনরায় দরপত্র আহবানে ওএমসিকে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কিছু শর্ত শীতিল করা হয় যা পিপিআর বহির্ভূত ।

সর্বশেষ দরপত্রে মোট ৩ টি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহন করে। তনমধ্যে জেনটেক ৭৬.৩৫ কোটি টাকা, ওএমসি-৯৬.৯৭ কোটি টাকা এবং রেনেটা গতবারের ন্যয় ৯৭.১৪ কোটি টাকা দিয়ে ৩য় নিম্ন দরদাতা বিবেচিত হয়।
এখানে লক্ষনীয় জেনটেক গতবারের চেয়ে ২.৯০ কোটি টাকা দর কম দিলেও ওএমসি ১৪.৪৭ কোটি টাকা বেশী দর প্রদান করেছে। কথিত আছে ওএমসি, উপদেষ্টা , ডিজি এবং পিডির সাথে চুক্তি করেই ১৪.৪৭ কোটি টাকা বেশী দিয়েছে । ওএমসিকে কাজ দেয়া হবে বলেই দরপত্রের শর্ত শিথিল করা হয়েছিল এবং অতিরিক্ত ১৪.৪৭ কোটি টাকা নিজেরা ভাগাভাগি করে নিবেন মর্মে তাদের মধ্যে গোপন চুক্তি রয়েছে। তথ্যমতে, ওএমসিকে কাজ দিবে বলেই জেনটেককে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নন রেসপনসিভ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দরপত্র সাব কমিটির সভাপতি ডা: মোস্তফা কামাল, পরিচালক এলআরআইকে জিজ্ঞাসা হলে তিনি জানান, তার কিছুই করার ছিল না । উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী সুপারিশ করা হয়েছে এবং সংগত কারনেই জেনটেকরে নন রেসপনসিভ করা হয়েছে। দরপত্র কমিটির সভাপতি ও অধিদপ্তরের পরিচালক ( প্রশাসন ) ডা. ভয়েজার রহমান জানান, সাব কমিটি যেভাবে সুপারিশ করেছে তিনি সেভাবেই সুপারিশ করেছেন । এখানে তাকে যাচাই বাছাই করার সুযোগ দেয়া হয়নি।
সুত্রটি আরো জানায়, ওএমসি আর্জেন্টিনার তৈরী ভ্যাকসিন সরবরাহ দিবে, যে ভ্যাকসিনের কোন রেজি: বাংলাদেশে নেই। এছাড়া আর্জেন্টিনার আবহাওয়া ও বাংলাদেশের আবহাওয়া এক নয় তার পরেও শুধু উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বেশী মূল্যে এই নন রেজিষ্টার ভ্যাকসিন কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে জেনটেক কতৃক যে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য দরপত্র জমা দেয়া হয়েছিল সেটি চায়না সরকারের নিজস্ব এবং গুনগতমান অনেকভাল ।
যা ল্যব পরীক্ষায়ও প্রমানিত হয়েছে। শুধু আর্থিক সুবিধা গ্রহনের জন্যই এধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। সুত্রটি দাবী করেছে যে চায়না সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টা এবং মৎস্য ও প্রানিসমপদ উপদেষ্টা অবহিত করে প্রতিকার চেয়েছে।
আর এ অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদুকে অভিযোগও জমা পড়েছে। তারা এই অভিযোগটি তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন। কথা বলার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান এর ফোনে বারবার কল করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সরকারী অর্থ সাশ্রয়ের নিমিত্তে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।