যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শণ করলেন ৩ মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা

Uncategorized খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর)  :  হোহাংহো নদীকে বলা হতো চিনের দুঃখ।বর্তমানে যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের স্লুইচ গেট। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি অপসারণ না হওয়ায় নিয়মিত জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন ভবদহ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। আর এই জলাবদ্ধতাকে পুজি করে এক শ্রেনির মানুষ সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট করেন। এজন্য প্রতি বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ওই এলাকার মানুষের কাছে নিছক সান্ত্বনা ছাড়া কিছু নয়, এটা তারা মেনে নিয়েছে।


বিজ্ঞাপন

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভবদহ স্লুইসগেট ২১ ভেন্ট এলাকা পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবালয়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এসময় তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

সকাল ১০ টার পর পরই অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে তারা হেলিকাপ্টার যোগে অবতরণ করেন। সেখানে ব্রিফিং শেষে রওনা হয় ভবদহ স্লুইচগেট পরিদর্শনে।


বিজ্ঞাপন

পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফ করেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, গতবারের মত এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায় নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হয়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপারে মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।” আজ সকালে নওয়াপাড়াতে নেমে ধান ক্ষেত পরিদর্শন করেন সকল উপদেষ্টারা।

উল্লেখ্য, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল গঠিত। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে।

ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে।

অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *