# নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাজধানীতে গড়ে উঠছে শতশত বহুতল ভবন। সাধারণ মানুষতো বটেই আইনের ব্যত্যয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ খোদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ কিংবা নকশা বহির্ভূত ভবনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে গেলেও নিজ কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে অনেকটাই নীরব রাজউক। অনিয়মের সত্যতা মিলেছে স্বীকার করে রাজউক চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম দিয়েছেন গতানুগতিক তদন্তের আশ্বাস #

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাকার বিনিময়ে বিধিমালা ভেঙে এক জোনের দায়িত্বে থেকে আরেক জোনের আওতায় সাতটি ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আশরাফসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নকশা জালিয়াতি ছাড়াও ভবনের ত্রুটি ধরে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও মিলেছে এই অফিসারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের অনুসন্ধানে নামলে সময় সংবাদের হাতে আসে কয়েকটি ভবনের রাজউকের দেয়া অবৈধ অনুমোদনের নকশার নথি। এতে দেখা যায় অনলাইন আবেদন ফর্মে নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়াকে ১০তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, রাজউকের জোন-১ বাসান মৌজা, জয়দেবপুর থানা। তবে অনুমোদিত নকশার মূল কাগজে দেখা যায়, অনুমোদন দেয়া হয়েছে রাজউকের জোন-৩/১ ঢাকার জোয়ার সাহারা মৌজায়।

আবেদনের আর এস নম্বর ধরে রাজধানীর মিরপুর ইসিবি চত্ত্বর থেকে সামনে বিল্লাল হোসেন সড়কের সরু গলির রাস্তা ধরে সামনে এগোলে দেখা যায় সড়কের শেষ প্রান্তে চলছে বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণের কাজ। ২০২২ ড্যাপ এর ম্যাপ বলছে এটি একটি রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া। কিন্তু গুগোল ম্যাপের ২০১০ থেকে ২০২৫ পযর্ন্ত দেখা যায় এলাকাটি পুরোটায় জলাশয় ও কৃষি জমি। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছেন, বছর দুয়েক আগেও এখানে একপাশে ছিল জলাশয় আর কৃষি জমি। এখানে ভবন নির্মাণ অবৈধ হলেও টাকা দিয়ে নাকি পাওয়া যায় বৈধতা।
নকশা অনুমোদনে দালাল ও দুর্নীতি ঠেকাতে ২০১৯ সালে অনলাইন সেবা চালু করে রাজউক। নতুন এ নিয়মে আবেদনকারী যে আইডিতে ছাড়পত্রের আবেদন করবে একই আইডিতে নকশার জন্যও আবেদন করতে হবে। কিন্তু অবৈধভাবে অনুমোদন পাওয়া সকলেরই অনলাইন আইডি পাসওয়ার্ড হারিয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে রাজউকের ভূমি ছাড়পত্রগুলোর সত্যতা নিয়ে। ছাড়পত্রে দেয়া, কিউ আর কোড স্ক্যান করলে কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না।
রাজউকের আদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি সহকারী অথরাইজড অফিসার থেকে অথরাইজড অফিসার পদে পদন্নোতি দেয়া হয় শেগুফতা শারমিন আশরাফকে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় তিনি কখনো ৩/১ জোনের দায়িত্বে ছিলেন না।পদন্নোতির এক মাসের মধ্যে বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে সাতটি ১০তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেসময়ে জোন-১ এর দায়িত্বে থাকা ইমারত পরিদর্শক ও বিসি বোর্ডের সদস্যের নাম। এনিয়ে ইমারত পরিদর্শক আর বিসি বোর্ডের এক সদস্য নিজেদের সাফাই গেয়ে দায় চাপান একে অন্যের ওপর।
এসব অভিযোগ নিয়ে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা জোন-৩/২ অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আশরাফের মহাখালী অফিসে গেলে প্রথমে রুমে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। পরে অপেক্ষা করতে বললেও ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে ফিরে যেতে বলা হয়।
এদিকে রাজউক কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ে একদিনের সময় নেন রাজউক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, আমাকে একটা দিন সময় দিন। জিজ্ঞাসা করি। ভুলত্রুটিতে আমাদের ভূমিকা, হাউজিংয়ের ভূমিকা, তাদের কেউ তো একটা সুযোগ দিতে হবে তাই না।
পরদিন গণমাধ্যম কর্মীকে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করানোর পর অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে গতানুগতিক তদন্ত করে ব্যবস্থার আশ্বাস দেন রাজউক চেয়াম্যান।
একদিকে অনিয়মের সুযোগ দিয়ে গড়ে তোলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে ভবন। অন্যদিকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হচ্ছে নকশা বহির্ভূত ভবনের অতিরিক্ত অংশ।