নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদকাসক্তি এবং আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে এবং বাংলাদেশের মাদকবিরোধী সংগ্রামকে শক্তিশালী করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ একটি বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল “Towards A Drug Resilient Nation: Confronting Addiction and Transnational Trafficking in Bangladesh”.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হাসান মারুফ স্যার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআইডি’র ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের এসএসপি মোহাম্মদ বশির উদ্দীন, কেমিক্যাল ল্যাব, সিআইডি-এর চীফ কেমিক্যাল এক্সামিনার মোঃ নজরুল ইসলাম এবং UNODC বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এস. এম. নাহিয়ান। এছাড়া, সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শ্রদ্ধেয় চেয়ারপার্সন, সহযোগী অধ্যাপক শাহারিয়া আফরিন। এছাড়া, সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন:

আইকন কেয়ার লিমিটেডের রাশিক আহমেদ, প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেডের অ্যাডিকশন কাউন্সিলর সাহির জামিল, এবং প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেডের পরিচালক শফিকুল ইসলাম শফিক।

সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা মাদকাসক্তি ও পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা এবং এর চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেন, এবং সবার সম্মিলিত উদ্যোগে মাদকবিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সুচনা করেন।
অনুষ্ঠানে সেমিনারের আয়োজকদের পক্ষ থেকে সম্মানিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সৌজন্যে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যা মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব এবং এই বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সেমিনারের এক বিশেষ পর্বে, মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া দুটি সফল ব্যক্তিত্ব তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। আইকন কেয়ার লিমিটেডের রাশিক আহমেদ এবং প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেডের অ্যাডিকশন কাউন্সিলর সাহির জামিল তাদের যাত্রার গল্প উপস্থাপন করেন।
এছাড়া, সেমিনারে একটি সচিত্র উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন ক্রিমিনোলজি ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা, যারা মাদকবিরোধী বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকি মোকাবিলার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন।
মো. নজরুল ইসলাম নতুন করে মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ সম্পর্কে জানান। তিনি আরও জানান ঔষুধ ও মাদকদ্রব্যের মধ্যে বিভিন্ন সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কেও জানান।
এস এম নাহিয়ান, ইউএনওডিসি এর কার্যক্রম ও জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশন সম্পর্কে আলোচনা করেন। বশীর উদ্দীন তার কর্মজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এছাড়াও মানি লন্ডারিং কীভাবে ড্রাগসের সাথে জড়িত সে ব্যাপারেও আলোচনা করেন।
হাসান মারুফ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিনটি মূলনীতি (To reduce Supply, Demand, Harm) এবং তাদের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরো জানান তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণের থেকে পারিবারিক বন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা এবং সামাজিক সচেতনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মোবাইল এবং ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকার কারণেই মূলত যুব সমাজ মূলত ১৩-২৩ বছর বয়সীরা সমাজের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকছে না। ফলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে জনাব নজরুল ইসলাম “ডেভিলস ব্রেথ” ইস্যু সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং পরিত্রাণের উপায় আলোচনা করেন।
এসময় ক্রিমিনোলজি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন আগ্রহের বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করে।
সবশেষে, এস এম নাহিয়ান এ ধরণের আরও “Knowledge Exchange Program and Seminar” আয়োজনের প্রস্তাব জানান।
সেমিনারের সমাপ্তিতে ক্রিমিনোলজি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিবেশিত একটি নাটিকা “নীরব সীমানা” মাদকাসক্তির করুণ পরিণতি এবং এর বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরে। নাটিকাটি দর্শকদের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং মাদক বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ এই সফল সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজে মাদকাসক্তি ও পাচারের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।