মেজর সাদিক, তার স্ত্রী সুমাইয়া।

বিশেষ প্রতিবেদক : মেজর সাদিক, তার স্ত্রী সুমাইয়া এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট গুলশান আরা’র কেসটাকে আমরা যতটা সহজ হিসেবে নিয়েছি, আদতে এটা অতটাও সহজ নয়। যথেষ্ট কমপ্লিকেটেড। তাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে আমরা যতটুকু জেনেছি, আসল পরিকল্পনা তার চেয়েও ডেঞ্জারাস এন্ড ইফেক্টিভ।

আওয়ামিলীগের কর্মীদের ট্রেনিং দেওয়ার ব্যাপারে মেজর সাদেকের নাম, পরিচয়, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তাকে তো ঠিকই এরেস্ট করা হয় কিন্তু তার ওয়াইফ সুমাইয়াকে এরেস্ট করার প্ল্যান কিন্তু ছিল না।

সুমাইয়াকে যেদিন এরেস্ট করা হয়, সেদিন কক্সবাজারে ১০ম পদাতিক ডিভিশন বা রামু ক্যান্টনমেন্টের একজন ব্রিগ্রডিয়ার জেনারেল সহ আর্মির তিন থেকে চারজন মেজর সাদেকের স্ত্রী সুমাইয়ার সাথে একটি রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মাঝে কথাবার্তা চলাকালীন সময়েই ডিসি-ডিবি (ডিভিশনাল ক্রাইম ডিটেক্টিভ ব্যুরো) তার টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ডিসি-ডিবি উপস্থিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে বলেন: “স্যার, উনাকে (সুমাইয়া) আমাদের কাছে দিতে হবে, আমাদের হাতে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে”; কিন্তু তিনি সুমাইয়াকে হ্যান্ডওভার করতে না চেয়ে বরং বলেন “তার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে”। পরবর্তী ডিসি-ডিবি জোরাজুরি করলে তিনি আর্মি হেডকোয়ার্টার ডিপিএসকে (ডাইরেক্টর পারসোনাল সেক্রেটারি) কল করেন। ডিপিএস আমতা আমতা করলে ডিরেক্ট চীফকে কল করা হয়। অতঃপর চীফ কোনোপ্রকার বাছ বিছার না করে সুমাইয়াকে ডিবির হাতে হ্যান্ডওভার করার জন্য এক্সেস দেন।

সাদিক-সুমাইয়া-গুলশান আরা’র কেসটি বর্তমানে হ্যান্ডেল করছে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল/টিম। অর্থাৎ ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, ডিবি সমন্বয় করে কাজ করছে। এর আগে বহুদিন যাবত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল শুধুমাত্র ডিজিএফআইয়ের কন্ট্রোলে ছিল (ক্ষেত্রবিশেষে র্যাবের’ও)। তবে একটি আনপপুলার ওপেনিয়ন দিতেই হচ্ছে: ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এই জায়গায় বেশ জবরদস্ত ব্রেকথ্রু দিয়েছেন। তিনি ডিবিকে প্রোপারলি ফাংশন করার সুযোগ দিয়েছেন, যার ফলশ্রুতিতে ডিবিকে আমরা এত সুন্দর কাজ করতে দেখছি।

তো যা বলছিলাম, খুব বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানতে সমর্থ হয়েছি: সাদেক সুমাইয়রা যাদের ট্রেনিং করিয়েছেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। তাদেরকে যে ট্রেনিংটা দেওয়া হয়েছে, এর নাম “সাব টেক্টিক্যাল আর্বান ওয়ারফেয়ার”। এটাকে আমরা অনেকে সহজভাবে গেরিলা ট্রেনিং বলেও জানি।
তাদের প্ল্যান ছিল ঢাকা শহরের কেপিআই বা “কী পয়েন্ট ইন্সটলেশন” গুলিকে টার্গেট করা; সিগনিফিকেন্টলি- ‘এম্বাসি’। এছাড়া কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটাল, সিএমএইচ, পপুলার হসপিটাল, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি। এধরণের হাই ভ্যালু টার্গেটের আফটার ইফেক্ট হয় অত্যন্ত মারাত্মক, আর সেসব দিক বিবেচনা করেই তারা এসব ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুলিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর পরিকল্পনা করেছিল।
তাদের মূল লক্ষ্য ছিল চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের মাঝে দেশে এনার্কি বা ক্যাওস তৈরী করা। কয়েকটি এম্বাসিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো গেলে আন্তর্জাতিকভাবেই বাংলাদেশ কোনঠাসা হয়ে পড়ত। পতিত ফ্যাসিস্ট রেজিমের মন্ত্রী এম্পি সহ রেজিম কর্তৃক বিভিন্নভাবে বেনিফিসিয়ারি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশানগুলোর যে তদন্ত চলমান— সে কাজগুলি বাধাগ্রস্থ হতো এবং এটাকে লেন্থি বা কমপ্লিটলি স্টপ করানোর উদ্দেশ্যেই উক্ত পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
একইসাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর মন্দিরে হামলার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
পরিকল্পনা সফল হলে বাংলাদেশ এমনিতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমর্থন হারাতো, আর ঠিক সেটারই এডভান্টেজ নিয়ে ফায়দা লুটত ভারত। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কার্ডকে পুনরায় জাগ্রত করে বিভিন্ন কন্সাল্টেন্সি এবং লবিং ফার্মকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করিয়ে ইন্টারিম সরকারকে রিজাইন করানো’ও ছিল তাদের পরিকল্পনার অংশবিশেষ।
শুধু তাই নয়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারত তাদের এয়ার এসেটস দ্বারা বাংলাদেশ সীমান্তে ২ থেকে ৩ দিনের লিমিটেড স্ট্রাইক করবে— এই তথ্যও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এই প্ল্যান একদম ম্যাক্সিমাম লেভেলের জন্য, প্রাইমারি লেভেলে দেশের অভ্যন্তরে ক্যাওস তৈরী করাটাই ছিল তাদের লক্ষ্য।
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল নিশ্চিত হয়েছে, তাদের সাথে ইন্ডিয়ান ইন্টিলিজেন্স সরাসরি কাজ করেছে। তবে যেহেতু উক্ত র্যাকেটের অন্যতম দুই মাস্টারমাইন্ড এখন বন্দী, একইসাথে ট্রেইংপ্রাপ্ত ৪০ জনের অধিক এরেস্টেড, তাই উক্ত পরিকল্পনা আপাতত ভেস্তে গেছে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। আমি বিশেষভাবে ডিবিকে ধন্যবাদ দিব, তারা অসাধারণ কাজ করে দেখিয়েছে। (ফেসবুক থেকে নেওয়া)