গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রভাবশালী নির্বাহী মো: সাইফুজ্জামান চুন্নু।

বিশেষ প্রতিবেদক : গত বছরের ৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীনকালীন সরকার গঠিত হয়। অন্তবর্তীনকালীন সরকার গঠনের পর সারাদেশে মাদক, অস্ত্র ও চালবাজ -সন্ত্রাসী ধরতে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালনা করেন অপারেশন ডেভিল হান্ট।
এছাড়াও সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক কে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেশের চলমান দুর্নীতি দমন করতে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক কে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান পরিচালনায় মাঠে নামান। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক যথারীতি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বসঋিলো।যার ফলশ্রুতিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর, ও পরিদপ্তরে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম প্রতিনিয়ত তাদের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে।

অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতির বিরোধী অভিযান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রভাবশালী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক একপ্রকার গতিহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গণপূর্তের সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা । কিছুতেই এই সরকার দূর্নীতির লাগাম টানতে পারছে না। আর গনপূর্তের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প কিছুদিনের মধ্যে গড়ে তুলেছেন শতশত কোটি টাকার সম্পদ ও নগদ অর্থ। বিদেশে অর্থ পাচারের পাশাপাশি বাড়িও গড়ে তুলেছেন দেশের বাইরে।


ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪-এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমান ফরিদপুর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সাইফুজ্জামান চুন্নু। তিনি গোটা আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর নিজস্ব বলয়ে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য। মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর নিজ এলাকা পটুয়াখালিতে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
নাহিয়ান ব্রীকস ফিল্ড, পটুয়াখালি কলেজ রোডে দু’তলা বাড়ী, পটুয়াখালি সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে ৫ একর জমি, পটুয়াখালিতে নেক্সাস নামে একটি গামেন্টস এর শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকা ধানন্ডির সেন্ট্রাল রোডে একটি ফ্ল্যাট, বেইলী রোডে একটি ফ্ল্যাট, এছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে প্রচুর সম্পদ।
তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর গণপূর্ত বিভাগে এমন কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম নেই যা তিনি করেননি। সাইফুজ্জামান চুন্নু সাবেক গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক দাবি করায় কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো শব্দ করতেন না। বর্তমানে তিনি গনপূর্ত উপদেষ্টা , সচিব ও প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যে তার নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মূলত এ সিন্ডিকেটই সরকারের বিগত সময়ে অধিদপ্তরকে নিয়ন্ত্রন করতো। এছাড়া গণপূর্ত ঢাকা মেট্রো জোনের প্রধান নাসিম শিকদারের আস্থাভাজন হওয়ায় নির্বিচারে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে পার পেয়ে গেছেন। শুধু দুর্নীতিই নন, এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা তিনি করেন না।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি সুত্রে জানা যায়, সাইফুজ্জামান চুন্নুর স্ত্রীর নাম ডা: সাইমুন নাহার (এমবিবিএস), তিনি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেকচারার। তিনি তার ভাই (চাচাত) ছাত্রদল নেতা শামীমের মাধ্যমে আর্থিক লেন দেন করেন। পটুয়াখালি যুবদলের সোহেল রানার মাধ্যমে পটুয়াখালির সবকিছু নিংন্ত্রণ করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,সাইফুজ্জামান চুন্নু বেপরোয়া লুটপাট, দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারের শতশত কোটি টাকার ক্ষতি করে বিশাল অংকের টাকা তুলে দিচ্ছেন বাবার হাতে। তার বাবা আব্দুস সালাম মৃধা পটুয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ৫নং কমলা পুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক ইউপি মেম্বার।

দ্বাদশ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপির কেন্দ্রিয় ফান্ডে মোটা অংকে টাকা দিয়েছেন আব্দুস সালাম মৃধা। এলাকায় এমন গুঞ্জন চাউর হয়ে ঘুরছে। কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে দেখা করে তিনি এ টাকা জমা দেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। জানা যায, আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করার পেছনে তার একটা বড় সিন্ডিকেট কাজ করেছিল, যদিও সেটা করে সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আগামী দিনে সরকার পরিবর্তন হলে নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান বা তার চেয়ে বড় কোন পদ পাওয়ার আশা করছেন সেই সাথে ছেলেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। এলাকায় বিএনপি জামায়াতের লোক আব্দুস সালাম মৃধাকে টাকার গাছ হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন। আব্দুস সালাম মৃধার টাকার উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো ঘটনা সামনে চলে আসে।
জানা যায়, আব্দুস সালাম মৃধার অর্থের একমাত্র উৎস হচ্ছে তার ছেলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু। যিনি এখন কর্মরত রযেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তর মিরপুর বিভাগে। এ সময়ে গণপূর্ত বিভাগের সব চেয়ে বেশী প্রকল্প কার্যকর করছে মিরপুর বিভাগ। পরবর্তীতে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এ আসার পরও হাতিয়ে নেয় অনেক বড় বড় কাজ। যার মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
রাজনৈতিক বলয়ের সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র জীবনে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সহ সভাপতি ছিলেন সাইফুজ্জামান চুন্নু। সেই সূত্রে বিএনপি জামায়াতের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের সাথে শুরু থেকেই একটি আদর্শিক সম্পর্ক গড়ে যায় তার।
সে সুযোগে এক সময় তিনি জড়িয়ে যান তারেক জিয়ার ঘনিষ্ট সিন্ডিকেটের সাথে। বিএনপি জামায়াত ঠিকাদারদের আশ্রয় দাতা নুসরাতের সাথে ঘনিষ্ট হন সাইফুজ্জামান চুন্নু। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরতে হয়নি। ইচ্ছে মতো সরকারি টাকা ভাগ বাটোয়ারার পাশাপাশি নিয়োগ বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ গণপূর্র্তের অপ্রতিরোধ্য একজন ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন তিনি।
কয়েক বছরে বনে যান শত কোটি টাকার মালিক। দেশে নামে বেনামে গড়েছেন অনেক সম্পদ। বিদেশে টাকা পাচার সহ বেশ কয়েকটি দেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে তার নামে। এ সব বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

সূত্রমতে,গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠির স্মারক নম্বর- ২৫.০০.০০০০.০৫৩.০০১.০০২.১৯.২৭১। অভিযোগটি গত ২৩ আগস্ট করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে মুহাম্মদ সোহেল হাসান গত ২১ আগস্ট গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলোতে পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মিরপুর পাইকপাড়াস্থ পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টার (পুরাতন) এর ২য় তলার সিড়ির পূর্ব পাশের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত কক্ষ নম্বর ৭ ও ৮ দুটি কক্ষকে আইবি বাংলোতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সংস্কার/মেরামত ও আধুনিকায়ন কাজের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বরাদ্ধকৃত অর্থ ইতোমধ্যে উত্তোলনপূর্বক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু ওই ৭ ও ৮ নম্বর কক্ষে কোনো সংস্কার/মেরামত বা আধুনিকায়নের কাজ করা হয়নি। তবে ৭ নম্বর কক্ষে দুই শ্রমিককে তড়িঘড়ি করে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করতে দেখা গেছে। তখন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো কাজ না করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ওই দুটি কক্ষে যেনো কোনো সংস্কার/মেরামত কাজ না করতে পারে সেজন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর ও নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশ এর সহযোগীতায় উক্ত কক্ষ দুটিতে সিলগালা করার নির্দেশ দেন। যা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা-০৯) মো. মাহমুদুর রহমান হাবিবকে অবহিত করা হয়।
এদিকে কক্ষ দুটি সিলগালা করার একদিন পরই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসান স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠিতে ওই কক্ষ দুটির সিলগালা খুলে দেয়া নির্দেশ দেন।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নু প্রভাব খাটিয়ে এক দিনের মধ্যেই সিলগালা খুলে ফেলোছলেন। এবং তড়িঘড়ি করে শুরু হওয়া ডেকোরেশনের কাজ শেষ করেন।
জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে থাকাকালীন বদলি হওয়ার আগমুহূর্তে অর্থ উত্তোলন করেন এই সাইফুজ্জামান চুন্নু। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর থেকে আবার ঢাকায় আসার জন্য বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন। (চলবে)।