বাড়ছে নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা

অপরাধ রাজধানী স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেশি রাজধানীতে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ার সাথেই বাড়ছে সাধারণ মানুষের নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা।
রাজধানীতে রাজারবাগ, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, চকবাজার, যাত্রাবাড়ি, বংশাল এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ত্রিশের বেশি। এসব এলাকা লকডাউন করা হলেও বেশিরভাগ বাসিন্দাই মানছেন না বিধি নিষেধ। স্বাভাবিকভাবেই বাইরে চলাচল করছেন তারা। বিভিন্ন সড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল।
অপ্রয়োজনে কেউ বের হলে সড়ক আইনে মামলা করছে পুলিশ। বাসায় থাকা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কাজ করছে সেনাবাহিনীও। এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতেও রয়েছে ভিড়। ফলে, বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।
বাড়েনি সচেতনতা : করোনা সতর্কতা উপেক্ষা করে বেড়েছে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হবার প্রবণতা। অনেক সময় নেয়া হচ্ছে নানা অপকৌশল। আবার কর্তৃপক্ষের চাপে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই কেউ কেউ চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বলছে, পরিচয় যাই হোক মানতে হবে সরকারি নির্দেশনা।
সকাল সাড়ে ৭ টা। ঢাকার প্রবেশ পথ গাবতলী চেকপোস্টে সন্দেহ হলে একটি এ্যাম্বুলেন্স থামায় পুলিশ। সেখান থেকে একে একে বের হয়ে আসনে ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বলছে, এভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাউকেই চলাচল করতে দেওয়া হবে না। যাত্রীদের সঙ্গে এর দায় কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে।
এদিকে, সাধারণ ছুটির প্রায় এক মাস হতে চললেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়েনি সচেতনতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তৎপরতাতেও দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব।
ঢাকার মতো একই অবস্থা অন্যান্য প্রবেশপথ গুলোতেও। অন্য দিনের মতো আজও নানা অযুহাত দেখিয়ে পথে নেমেছে মানুষ। এছাড়া চেকপোস্ট থেকে যাত্রী নামিয়ে দেয়ার পর কিছুদূর হেটে গিয়ে আবারও একই গাড়িতে উঠে গাদাগাদি করে তারা যাত্রা করছেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বের হতে উল্টো পথও ব্যবহার করছেন অনেকে।
কিছুকিছু চেকপোস্টে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতাতেও দেখা গেছে ঢিলে ভাব। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভুয়া ব্যানার লাগিয়ে ঘোরাফেরা : গাড়ির সামনে একটি ব্যানারে ‘জরুরি ঔষধ সরবরাহ’ লেখা। দেখেই মনে হবে ওষুধ উৎপাদন, বিপনন বা বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত কোন পরিবহন। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই ভুয়া ব্যানার লাগিয়ে এভাবে অহেতুক ঘোরাফেরা ও লকডাউন অমান্য করছিলো একাধিক গাড়ি। অবেশেষে ভ্রাম্যমান আদালতের বিশেষ অভিযানে ধরাও পড়ে। এরকম ১৪ জনকে মোট ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিনটি গাড়ি জব্দ করা হয়।
বুধবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত আইডিতে এমন তথ্য জানান র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
তিনি জানান, কোন প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়াকে আড়াল করার জন্য কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে ভূয়া ব্যানার/স্টিকার লাগিয়ে বের হয়েছেন। অভিযানের সময় দেখা যায়, এই যানের সাথে ঔষধ উৎপাদন, বিপনন বা বিক্রয়ের কোন সম্পর্ক নেই অথচ জরুরি ঔষধ সরবরাহের নামে ব্যানার লাগানো হয়েছে।
পুরাতন ঢাকার চাঁনখারপুল ও বকশী বাজার এলাকায় অহেতুক ঘোরাফেরা করায় এবং লকডাউন ভেঙ্গে নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকায় আসায় ১৪ জনকে ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিনটি গাড়ি জব্দ করেছে র‌্যাব-১০ এর সহযোগিতায় পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত।
রাতে গাড়ির বাধাহীন চলাচল : রাজধানীতে ঢোকা-বের হওয়া ঠেকাতে দিনভর পুলিশের তৎপরতা থাকলেও রাতের চিত্র বেশ উদ্বেগজনক। বেশিরভাগ চেকপোস্টেই চোখে পড়ে না পুলিশের উপস্থিতি। আর সে সুযোগে নগরীতে অবাধে যাওয়া-আসা করছে যাত্রীবাহী যানবাহন। এই সুযোগে গাবতলী, কাচপুর এলাকায় জবাবদিহী ছাড়াই ঢুকছে বের হচ্ছে যানবাহন।
পুলিশের দাবি, রাতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। একজন কর্মরত পুলিশ বলেন, যারা আসছে তাদের আমরা আটকিয়ে দুই ঘণ্টার মতো রেখে ছেড়ে দিতেছি। তবে বেশিরভাগ পয়েন্টেই তেমন একটা তৎপরতা চোখে পড়েনি।


বিজ্ঞাপন