বিশেষ প্রতিবেদক : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণি-সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে ছাগল/ভেড়া ক্রয়ের টাকা হরিলুট করা হচ্ছে মর্মে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়াগেছে। ৫/৬ হাজার টাকা দরে ছাগল/ভেড়া কিনে সেগুলোর দাম নেওয়া হচ্ছে প্রতিটি ১২ হাজার ৩ শত টাকা। প্রতিটি ছাগল/ভেড়ায় প্রায় ৬ হাজার টাকা আত্মসাত করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পিডি ডা: আব্দুর রহিম, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তুষার এন্টারপ্রাইজ ও অধিদপ্তরের ডিজি ড. আবু সুফিয়ান ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় নির্দিষ্ট ৭ টি জেলায় সিলেকটেড গরীব জনসাধারনের মাঝে বিনামূল্যে মুরগী- হাঁস,ছাগল-ভেড়া , গরু বিতরনের সংস্থান রয়েছে। এজন্য প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপিতে ১৬.৪৪০ টি ছাগল কেনার লক্ষে প্রতিটি ১১,২০০/ টাকা হিসাবে মোট ১৮,৪১,২৮,০০০/- টাকার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ডিপিপির বত্যয় ঘটিয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিটি ছাগল ১২,৩০০/ টাকা ধরে মোট ২০,২২,১২,০০০/- টাকার অর্থাৎ প্রায় ১,৮০,০০,০০০/- টাকা বেশী মূল্েয এপিপি অনুমোদন করাইয়া নেয় এবং মেকিং গেম হিসাবে ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে কোন প্রকার প্রতিযোগিতা ছাড়াই মেসার্স তুষার এন্টার প্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়। সে অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জুন-মাসে বিল নেয়ার উদ্দেশ্যে কম ওজনের (৪-৫কেজি ওজনের) রুগ্ন অসুস্থ- ছাগল কোন প্রকার কোয়ারেনটাইন ছাড়াই সরবরাহ করে। যার বর্তমানে বাজার মুল্য সর্বচ্চ ৫-৬ হাজার টাকার বেশী নয়। যদিও ডিপিপিতে ৭-৮ কেজি ওজনের ছাগল কেনার কথা এবং দরপত্রের শর্তে সরবরাহ করার পূর্বে ঠিকাদারের নিজ খরচে কোয়ারেনটাইন করার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সেটি না করায় সরবরাহ কৃত ছাগলের প্রায় সবগুলোই মারা যায়।
একই ঠিকাদার মেসার্স তুষার এন্টার প্রাইজ ১১,৮০০/ টাকা মুল্যে মোট ১৪,২৩,৯৯,১৮২/ টাকার ভেড়া এবং প্রতি কেজি মুরগীর খাবার ৭৩/ টাকা হিসাবে মোট ১৬,৯০,২৬,২১৭/ টাকার কার্যাদেশ পেয়েছে। ঠিকাদার মুরগীর জন্য যে খাবার সরবরাহ করেছে তা এত নিম্ন মানের যে মুরগী সে খাবার খাচ্ছে না। খামারীরা বিষয়টি প্রকল্প কতৃপক্ষকে জানানোর পরেও পিডি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। দরপত্রে যে মানের খাবার দেয়ার কথা তার কোন উপকরনই নেই সরবরাহকৃত খাবারের মধো। সরবরাহকৃত ভেড়াগুলিও ৪/৫ কেজি ওজনের এবং বাজার মুল্য সর্বচ্চ ৫ হাজার টাকার বেশী নয়।

মেসার্স তুষার এন্টার প্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ছাগলের বাজার মুল্য প্রতিটি ৬,০০০/, টাকা হিসাবে ১৬, ৪৪০ টির মুল্য ৯,৮৬,৪০,০০০/ টাকা অর্থাৎ এখানে ৯,৮২,২৯,০১৬/ টাকা বেশী, ভেড়ার জন্য প্রতিটি ৫,০০০/ টাকা হিসাবে ১২,৩৩০ টির মুল্য ৬,১৬,৫০,০০০/ এখানে বেশী দেয়া হয়েছে – ৮,০৭,৪৯,১৮২/ টাকা। আর মুরগীর খাবারের বর্তমান বাজার মুল্য ৩৮ টাকা কেজি হিসাবে মোট ২৩,১৫,৪২৭ কেজির মুল্য আসে ৮,৭৯,৮৬,২৪৯ টাকা। কিন্তু কার্যদেশ দেয়া হয়েছে ১৬,৯০,২৬,২১৭ টাকা। অর্থাৎ ৮,১০,৩৯,৯৬৭/ টাকা বেশী। তারপরেও নিম্ন মানের খাবার দেয়া হয়েছে। মেসার্স তুষার এন্টারপ্রাইজকে মোট ৩ টি প্যাকেজের জন্য বর্তমান বাজার মুল্য অপেক্ষা ২৬,০০,১৮,১৬৫/- টাকা বেশী মুল্েয কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

নিম্ন মানের কম ওজনের কোয়়ারেন্টাইন বিহীন ছাগল / ভেড়া এবং নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করা হলেও পিডি আর্থিক সুবিধা গ্রহন করায় এ পর্যন্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।
অন্যদিকে বিষয়টি ডিজির নোটিশে থাকলেও ঠিকাদার ডিজির কাছের লোক হওয়ায় এবং পিডি আর্থিক সুবিধা প্রদান করায় ডিজি কোন ব্যবস্থা নেন নি। কথিত আছে বর্তমান ডিজি ড. সুফিয়ান ডিজির দায়িত্ব নেয়া কালে যে টাকা জনৈক সমন্বয়ককে দিয়েছিলেন তার একটা বড় অংক আলোচ্য ঠিকাদার দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, পিডি ডা: আব্দুর রহিম বিএনপি প্রভাবশালী কর্মকতা হওয়ায় ডিজি, সচিব উপদেষ্টা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সাহস পান না।
এ বিষযে পিডির নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। ডিজি ড. আবু সুফিয়ানের নিকট ডিপিপি বহির্ভুত অধিক মুল্েয এপিপি অনুমোদন করার কারণ এবং নিম্নমানের ছাগল সরবরাহ ও মারা যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, নিয়মের বাইরে কিছুই করা হয়নি। আর সরবরাহকৃত ছাগল মারা যাওয়ার বিষয়ে় পিডি তাকে কিছুই জানান নি বা তিনি কিছুই জানেন না। আলোচ্য ছাগল/ভেড়া ক্রয়ে সরকারের ন্যনুতম ১০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে আর লাভবান হচ্ছেন পিডি, ডিজি ও ঠিকাদার।
সুবিধাভোগি খামারী ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদার ও পিডির বিরুদ্ধে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী তুলেছেন।