
নিজস্ব প্রতিনিধি (খুলনা) : মোঃ হায়দার আলী। গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী। তার হায়দারী হাকডাকে সহকর্মী প্রকৌশলী তথা ঠিকাদাররা থাকেন তটস্থ ভীত-সন্ত্রস্থ। তাবে এই হায়দারী হাক ব্যবহৃত হয় মূলতঃ অনিয়ম দুর্নীতি আর লুটপাটের সুবিধার্থে। অবৈধ অর্থের দাপটে দলবল নিয়ে রঙ্গিন পানির নেশায় মত্ত থাকাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তথ্য সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

এক অভিযোগে জানা যায়, ২০০৬ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের চাকরিতে ঢুকে মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে তিনি এখন গাড়ীবাড়ি পরনারীসহ অগাধ ধন-সম্পদের মালিক। সাবেক উচ্চ পর্যায়ের এক বিএনপি নেতার সুপারিশে চাকরি হলেও সময়-সুযোগ বুঝে গিরগিটির ন্যায় ক্ষণেক্ষণে রং পাল্টান তিনি। তবে ২০০৯ সালে আ’লীগ ক্ষমতায় আসলে ভোল পাল্টে সাচ্চা আ’লীগার হয়ে যান তিনি। আ’লীগের মিছিল-মিটিং সভায় থাকতেন প্রথম সারিতে।
প্রতিবছর ১৫ আগষ্টে কথিত কাঙ্গালী ভোজের আয়োজনসহ দলীয় বিভিন্ন কাজে-কর্মে বড় অংকের টাকা ব্যয় করতেন তিনি। এর বদৌলতে শেখ পরিবার ও আ’লীগের নেতৃবৃন্দের সান্নিধ্য পেয়ে বেনামী ঠিকাদারী ব্যবসাসহ বিভিন্নভাবে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেন গণপূর্তের ই/এম উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) মোঃ হায়দার আলী।

এর পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অদৃশ্য আলাদ্দিনের চেরাগের বদৌলতে ধনে-মানে তর তর করে একের পর এক সিড়ি বেয়ে শুধুই উপরে উঠেছেন। স্থানীয় আ’লীগ নেতা ও কাউন্সিলর, শেখ পরিবারের সদস্য সকলের সাথেই ছিল

দহরম-মহরম সম্পর্ক। ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আ’লীগের সভাপতি খুরশিদ আলম টোনা-মনির ছোট ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেনের সাথে তোলা ছবি সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ চর্চা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, শেখ পরিবার ও আওয়ামী নেতৃবৃন্দের নজরে পড়তে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাজারে কয়েকবার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়েছেন তিনি। মাজার জিয়ারতের ছবি সে সময়ে ফলাও করে প্রচার করতেন। শেখ মুজিবের মাজারে ফুল দেওয়া ছবিটিও বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল।
তবে গত বছরের ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আ’লীগ সরকারের পতন হলে, পোষাক পরিবর্তনের ন্যায় আবারো খোলস পাল্টান এই সুযোগ সন্ধানী লুটেরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। গত ১৭ বছরে গণপূর্ত বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের নেতা পরিচয়ে অগাধ সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
অথচ সময়ের পরিবর্তনে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বর্তমানের সর্বাধিক জনপ্রিয় দলের নাম ব্যবহার করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নেতা হয়েছেন। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অবৈধ অর্থ ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির জোরে ওই নির্বাচনে খুলনাঞ্চলের সহ-সভাপতির পদ আদায় করেন হায়দার আলী।তারপর থেকেই শুরু হয় এই সময়ের গল্প।
বর্তমানে তিনি খুলনা আইনজীবী সমিতি সংলগ্ন গণপূর্ত ১ কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। এর আগে খুলনা নুরনগরের গণপূর্ত ২ কার্যালয়ে ছিলেন। সে সময়ে ভাইয়ের নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য কাজ বাগিয়ে নেওয়াসহ আরো
২/৩ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে পরোক্ষভাবে ব্যবসা করেছেন এই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আ’লীগের ১৭ বছরে খুলনা, বরগুনা, ভোলাসহ কয়েকটি জেলায় গণপূর্তের কার্যালয়ে কর্মকালীন সময়ে ঠিকাদারদের সাথে গভীর সখ্যতা তৈরি হয়। সে সময়ে এপিপি’র কাজের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ উঠনো বাবদ চুক্তিমূল্যের ৫৫% কোন ক্ষেত্রে ৬০% আবার বিশেষ ক্ষেত্রে ৬৫% অর্থ নগদ গ্রহণ করার তথ্য পাওয়া গেছে। গণপূর্তের বৈদ্যুতিক/যান্ত্রিক শাখায় কর্মরত থাকার সুবাদে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারদের মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক বিষয়ে বহু অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। এভাবে তিনি অবৈধ ইনকাম করেছেন বড় অংকের টাকা। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন অনেকে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে , চাকরির প্রায় ২০ বছরের ক্যারিয়ারে বিভিন্ন খাত থেকে অর্জিত আয় বহির্ভূত অবৈধ অর্থ দিয়ে তিনি গড়েছেন নামে-বেনামে সহায়-সম্পদের পাহাড়। একজন সাধারণ উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) হয়ে চড়েন বিলাশবহুল প্রাইভেট গাড়িতে।
গাড়ীর ড্রাইভার জ্বালানীসহ মেনটেইনেন্স খরচ বাবদ মাসে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই অংকের বেতনও পান না তিনি। সংসার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ অন্যান্য খরচ তিনি কীভাবে মেটান? এ প্রশ্ন সচেতন মহলের। তিনি খুলনা বাগেরহাটসহ বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে কিনেছেন জমি। এছাড়া খুলনা খালিশপুর এর নেভি চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় করেছেন
চোখ ধাঁধানো বিলাশবহুল বাড়ি। খুলনা খালিশপুর মহিলা পলিটেকনিক কলেজের সামনে রয়েছে আরেকটি বাড়ি। পাশাপাশি পাইকগাছায় চিংড়ি মাছের ঘেরসহ খুলনা শহরে বিভিন্ন মার্কেটে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। যখন যে দলের সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ছলেবলে নেতৃবৃন্দের সাথে লিয়াজো করে ভাইদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। আ’লীগের তৎকালীন নেতাদের সুপারিশে তার এক ভাইকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট সার্ভিস অপারেটর হিসেবে চাকরী পাইয়ে দেন। সর্বকনিষ্ঠ ভাই অহিদকে দিয়ে গণপূর্তের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করান।
ভাইয়ের নামে প্রকৃতপক্ষে তিনিই করেন। এছাড়া তিনি নিজে সরকারি চাকরি করায় ছোট ভাইদেরকে দিয়ে স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করান। সর্বকনিষ্ঠ ভাই অহিদকে খুলনা ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বানান।
বড় ভাই হায়দার আলীর সাথে খুলনার বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সু-সম্পর্ক থাকায় অহিদ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় সরকারি জমি দখল, টেন্ডারবাজি, অসামাজিক কর্মকান্ড চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই অহিদ এর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে উপসহকারী প্রকৌশলী হায়দার আলীর সাথে কথা হয় গণমাধ্যমের তিনি গণমাধ্যম কে বলেন এই সব মিথ্যা ভিত্তিহিন। এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধান করে সত্যতা পাওয়া যায়। তিনি বলেন ততকালীন সময় আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা না করলে চাকরি টিকিয়ে রাখা মুস্কিল ছিলো। এবং আমার ভাই অহিদ পিডব্লউডির ঠিকাদার তার ব্যবসা সে করে তাতে আমার কি করার আছে। আমার কি ক্ষমতা আছে ভাইকে কাজ পাইয়ে দেবো।