দেশ মাফিয়া, সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই মাগুরার মুর্তিমান আতংক হিসামের অপরাধ উপাখ্যান !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি (মাগুরা) :  মাগুরার এক মুর্তিমান আতংকের নাম মোঃ আশরাফুজ্জামান হিসাম। দেশ মাফিয়া, সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই সে। শিখ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এপিএস-২ নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই হিসাম মাগুরা জেলায় তার স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করে। গড়ে তোলে অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী, কিশোর গ্যাং এবং চাঁদাবাজ ও মাদক সিন্ডিকেট। এছাড়া ভুমিদস্যু হিসাবেও তার খ্যাতি রয়েছে। গোটা জেলায় মাদক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে হিসাম এক মাদক রাজত্ব গড়ে তোলে। তার অন্যতম কাজ ছিল ব্যবসায়ীদের ধরে এনে টর্চার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজ নাম লিখে নেওয়া ও মুক্তিপণ আদায় করা।


বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ আমলে সে তার ভাই এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সদর উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর সরকার থেকে যত উন্নয়ন বরাদ্দ আসতো তার চেকগুলো হিসামের কাছে জমা দিতে বাধ্য হতেন চেয়ারম্যানগন। এককথায় হিসামই পরিচালনা করতো সদরের সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদ। চেয়ারম্যানগন ছিলেন নামে মাত্র।

হিসাম আওয়ামী লীগ আমলে চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে দলীয় নমিনেশন বিক্রি করেই হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
এ ছাড়া মাছের ঘের ও অটো ইট ভাটার নামে অনেক হিন্দু ও মুসলমানের জমি দখল করে নিয়েছে। সেগুলো এখন বিএনপির নেতারা পাহারা দেয়।


বিজ্ঞাপন

হিসামের কাছে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার। সে প্রকাশ্যে বেআইনি অস্ত্র নিয়ে চলা ফেরা করতো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সে এক কার্টুন নাইন এম এম অস্ত্র ক্রয় করে এনে মাগুরা খান পাড়ায় তার ম্যানেজার ও ড্রাইভারের বাসায় রেখে দেয়। ঐ অস্ত্র হাতে তার ছবিও রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

হিসাম জেলার যতো ইট ভাটা আছে সবগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতো। জোর করে একটি ইট ভাটা লিখেও নেয়।
এছাড়া মাদক ব্যবসার সে ছিল গডফাদার। তার নিয়ন্ত্রণে কমপক্ষে ৩০০ মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা ও ফেনসিডিল ও গাজা বিক্রি করতো। এদের কাছ থেকে প্রতিমাসে মাসোহারা নিতো হিসাম। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা কিশোর গ্যাং দ্বারা জেলার ৪ জন প্রতিবাদি সাংবাদিককে মেরে রক্তাক্ত জখম করে।

তারা হলেন,সাংবাদিক মিরাজ আহমেদ, সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক, সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ ও সাংবাদিক,  তারা কেউই হিসামের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পাননি। কারন ঐ সময় মাগুরার থানা,পুলিশ, কোর্ট,কাচারি সব ছিল তার ভাই মাফিয়া এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের আজ্ঞাবহ।

শয়তান আশরাফুজ্জামান হিসাম ও তার বাহিনী যখন তখন যারে তারে ধরে এনে তার অফিসকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করতো। তাকে চাঁদা না দিয়ে জেলায় কেউ ঠিকাদারি ও সাধারন ব্যবসা করতে পারে নি। বিভিন্ন মামলা মকর্দমার কন্ট্রাক্ট নিয়ে সে বাদী ও আসামীকে ধরে এনে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে স্বাক্ষর করে নিতো। এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছে।

অন্যদিকে মাগুরা জেলার পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে অসংখ্য নিরিহ মানুষের নামে মামলা দিয়ে অর্থ আদায় করতো।
তার বিরুদ্ধে শতাধিক নারী ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। বন্ধুদের সাথে মিলে তার মাছের ঘের ও নির্মিতব্য অটো ব্রিকস এর সেডে নারী ধর্ষণ করতো। মাগুরা মাইক্রো বাস স্ট্যান্ডও নিয়ন্ত্রণ করতো হিসাম। প্রতিটি সেক্টর থেকে চাঁদাবাজী করে অতি অল্প সময়েই সে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। মাগুরা শহরে আলীশান এসি অফিস স্থাপন করে সেখান বসে এক বিকল্প প্রশাসন চালাতো। হিসাম জেলার ইট ভাটাগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতো। সে ছিল ইট ভাটা মালিকদের গডফাদার। প্রতিটি ভাটা থেকে তাকে চাঁদা দেওয়া লাগতো।

হিন্দুদের জমি দখলেও তার নাম সবার শীর্ষে রয়েছে। জেলার জাগলা,টেঙ্গাখালি,আঠারোখাদা,হাজীপুর, চাউলিয়া প্রভৃতি এলাকায় শতশত বিঘা জমি তারা দখল করে বাউন্ডারি করে রেখেছে। এ সব জমির না আছে রেজিঃ দলিল না আছে বায়না নামা।

শুধু কি তাই ? মাগুরা জেলায় যতগুলো সরকারী বালু মহল আছে সেগুলো দখলে নিয়ে গত ১৭ বছর হিসাম কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন কি নদীর বালুও রক্ষা পায়নি। নদীর বুক থেকে তুলে নিয়েছে হাজার হাজার টন বালু। ফরিদপুরের একটি ইন্ডষ্ট্রিও জোরপূর্বক লিখে নিয়েছে এমপি হোস্টেলে শিখরের অফিসে বসে। সেই ব্যবসায়ী এখন পথের ফকির। মদ খেয়ে নারকীয় উল্লাসে নারী পুরুষকে নির্যাতন করা ছিল তার প্রতিদিনকার রুটিন কাজ। কত নারী যে তার দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। মানুষ নামের এই দানব মাগুরাবাসীর শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে।

তার ভয়ে সবাই আতংকিত থাকতো। ব্যবসায়ীরা মুখে টু শব্দটি করারও সাহস পেতো না। হিসাম তার বড় ভাই এড. শফিকুজ্জামান বাচ্চুর মাধ্যমে জেলা জজ ও চীফ জুডিশিয়াল আদালতকেও নিয়ন্ত্রণ করতো। ফলে প্রতিদিন তার অফিসে মামলা সংক্রান্ত শালিস বসতো। সেই শালিসে লক্ষ লক্ষ টাকা জারিমানা আদায় করা হোত। তাদের ৫ ভাই ও এক বোনের নানা প্রকার অপরাধ অপকর্মের নিউজ লেখার কারণে হিসাম তার কিশোর গ্যাং দ্বারা ঢাকা প্রবাসী সাংবাদিক রোস্তম মল্লিককে মাগুরায় পেয়ে পিটিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে। সেই ঘটনায় সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক, তার স্ত্রী ও কন্যাও আহত হয়। তারা দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু পুলিশ হিসামের নামে মামলা নিতে সাহস পায়নি।

এ রকম আরো হাজার কাহিনী আছে। নরসিংদী থেকে মাগুরায় ব্যবসা করতে আসা এক ব্যবসায়ীকে তার অফিসে আটকে রেখে তার গাড়িখানা জোরপূর্বক লিখে নেয় হিসাম। মাগুরার মহম্মদপুর এলাকার একটি অসহায় মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে মাগুরা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী। ঐ মেয়ে মামলা করলে প্রকৌশলীর কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে সেই মেয়েকে ধরে এনে হিসামের অফিসে বসিয়ে মামলা মিমাংশার ডিডে সই করে নেয়।

এভাবে জেলার অসংখ্য নিরিহ মানুষের সর্বনাশ করেছে এই হিসাম। তার নিয়ন্ত্রনে এখনো ২৫/৩০ টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
কথায় আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সেটির বাস্তব প্রতিফলন হলো গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন। ৪/৫ আগষ্ট ২০২৪ এই হিসাম তার অস্ত্রধারী বাহিনী নিয়ে মাগুরায় আন্দোলনরত ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালায়। হত্যা করে। এরপর হাসিনা পালিয়েগেলে তারা ৫ ভাই,বাচ্চু,সাচ্চু,শিখর, হিসাম ও বিকাশ মাগুরা থেকে পালিয়ে যায়।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশন থেকে টাকার ব্যাগসহ গ্রেফতার হয় হিসাম। বর্তমানে সে মাগুরা জেলা কারাগারে আছে। আজ তাকে কোর্ট তোলা হবে। তার নামে কমপক্ষে ৫ টি ছাত্র হত্যা ও নাশকতার মামলা আছে মাগুরা ও ঢাকায়। মাগুরাবাসীর দাবী- হিসামকে পুলিশ রিমান্ডে এনে জোরাল জিজ্ঞেসাবাদ করলেই তার বাকি ৪ ভাই কোথায় পালিয়ে আছে তা জানা যাবে। তার কাছে থাকা ২৫/৩০ টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় আছে সেটি উদ্ধার করা যাবে। অবৈধ পথে উপার্জিত শতশত কোটি টাকা কোথায় সেটিও উদ্ধার করা যাবে।

মাগুরাবাসী এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের ভাষ্যঃ হিসাম গত ১৭ বছরে যে সব ভয়ংকর অপরাধ করেছে তাকে ১০ বার ফাঁসি দিলেও তার পাপ মোচন হবে না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *