ঢাকা বিভাগে বিবাহ বিচ্ছেদের শীর্ষে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর

Uncategorized অন্যান্য আইন ও আদালত জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

শরিফুল ইসলাম  : বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় ঢাকা বিভাগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর। বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে বরিশাল।


বিজ্ঞাপন

বিয়ে সবার জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যার মাধ্যমে নারী পুরুষ একত্রে বৈধভাবে মিলিত হয়। প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে সুখী নীড় গড়ে তোলার। সবাই চায় তার বিবাহিত জীবন সুখের হোক।

তালাক কেন হচ্ছে তা জানার জন্য গত ৩ মাস ধরে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর, লালবাগ,হাজারিবাগ,চক বাজার, বংশাল, জুরাইন, যাত্রাবাড়ি, বাসাবো,ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চ্যানেল নিউজ ২১, বাংলার কন্ঠ সংবাদ ও আলোচিত সংবাদ এর একটি অনুসন্ধানী টিম ৩৭৫ জন তালাক প্রাপ্ত পুরুষ ও মহিলার সাথে কথা বলেছি, কেন তালাক হলো?


বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে কামরাঙ্গীচরের ঝাউলাহাটি এলাকার তাসলিমা খাতুন বলেন, আমাদের মধ্যে তালাক হওয়ার কারণ হল, আমার স্বামী অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িত আছে। আমি কিছু বললেই আমাকে মারধর করে।


বিজ্ঞাপন

গত কয়েকদিন আগেও ওই মেয়ের সাথে পার্ক ঘুরাঘুরি করেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলেই আমাকে মারধর করে এজন্য আমি নিজেই তাকে তালাক দিয়েছি।

কামরাঙ্গীচর বড় গ্রাম এলাকার শিবলী বলেন, আমাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার কারণ হল স্বামী মাদক সেবন করে এবং টাকা না দিলে আমাকে ও বাচ্চাকে মারধর করে।

এর আগে মাদকের টাকা দিতে অস্বীকার করাই আমাকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। আমার মত অন্য কোন মেয়ে যেন এ ভুল না করে। কারণ খারাপ হলেও সে স্বামী। এখন বুঝতে পারছি স্বামী কি?

বাংলাদেশ বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, রাজধানীতে তালাকের শীর্ষে রয়েছে কামরাঙ্গীচর থানা। গত ৩ মাসে কামরাঙ্গীচরে ১২০ টি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। বাংলাদেশের শীর্ষে রয়েছে বরিশাল। এর মধ্যে বেশির ভাগ বিচ্ছেদ ঘটছে মাদক সেবন ও পরকিয়ার কারণে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিচ্ছেদকারী স্বামী স্ত্রীর ২ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশু সন্তান রয়েছে। বিচ্ছেদর কারণে এসব শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পুরুষ-মহিলার সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে মাদক সেবন, পরকিয়া ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর নতুন এক জরিপ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপে প্রতিবেদনটি গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। জরিপটিতে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছে তিন লাখের বেশি খানা (পরিবার)।

জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশকারী বিবিএসের এসভিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এসভিআরএস জরিপের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তথ্য আমরা অতীতেও সংগ্রহ করতাম। তবে প্রকাশ করা হতো না। এবারের জরিপেই প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হলো।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েকটি প্রধান কারণ বেশি দেখা গেছে।

@ বিবাহ বিচ্ছেদর প্রধান কারণসমূহ যথাক্রমে তুলে ধরা হলো, 

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক : বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদর অন্যতম প্রধান কারণ, বিষেশ করে ২৫ থেকে ২৯ বছর তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।

ভুল বোঝাবুঝি ও অসঙ্গতি : স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অমিলের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে।

মাদকাসক্ত :মাদক সেবনের ফলে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এ কারণেও বিবাহিত বিচ্ছেদ ঘটে।

পারিবারিক কলহ : শারীরিক, মানষিক বা দৌহিক অক্ষমতার কারণেও বিবাহিত বিচ্ছেদ হতে পারে।

এর মধ্যে ৭২ শতাংশ তালাক হয়েছে ভুলবুঝা বুঝি একে অপরকে অসন্মান করার জন্য। আর ১৮ শতাংশ তালাকের কারণ পরকীয়া। ১০ শতাংশ তালাক স্ত্রীর উচ্চ বিলাসিতা এবং অহংকার ও জোরে জোরে কথা বলার কারণে। ৭৮ শতাংশ তালাক হয়েছে মেয়ের কারণে। ২২ শতাংশ পুরুষের দোষে। অন্যতম আরো একটি বড় কারণ শুশুর বাড়িতে মেয়ের মায়ের কুবুদ্ধি দেওয়া।

মজার বিষয় হলো ৯২শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত মহিলা ও পুরুষ তালাকের পরে সত্যিই অনুতপ্ত। তারা বলছে সিদ্ধান্তটি আসলে ভুলছিলো। তালাক প্রাপ্ত ৮৯ শতাংশ মেয়েদের চেষ্টা করেও আর বিয়ে হচ্ছে না। ০৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ের প্রতি অনিহা দেখা দিয়েছে এবং ০৭ শতাংশ মেয়ে পথভ্রষ্টা হয়েছে।

ছেলেদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ পূনঃবিয়ে করে সংসার করছে। ১৩ শতাংশ ছেলে বিয়ের প্রতি অনিহা প্রকাশ করোছে। ০২ শতাংশ ছেলে বিয়ের ভয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আরো মাজার বিষয় হলো ১ম স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ৬৭ শতাংশ ছেলেই কুমারি মেয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু মেয়েরা তালাকপ্রাপ্তির পর যারা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, তারা কুমার ছেলে পেয়েছে মাত্র ০১ শতাংশ।

দ্বিতীয় বিয়ের পরে ১২ শতাংশ মেয়ের আবারও তালাক হয়েছে।সুতরাং আগে সতর্ক থাকুন। পরে পস্তাতে যাবেন না। অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে ৮৯ শতাংশ মেয়ে দ্বিতীয় সংসারে অসুখি।

অপর দিকে মাত্র ০২ শতাংশ ছেলের ২য়বার আবারও তালাক হয়েছে আর অসুখি ৩ শতাংশ পুরুষ। আরও অবাক করা বিষয় হলো দ্বিতীয় তালাক দেওয়া ছেলেদের যাদের স্ত্রী হয়েছিল কোন তালাক প্রাপ্ত মহিলা।

আর বিধ্বা মহিলাকে বিয়ে করে চরম সুখি হয়েছেন ৯৩ ভাগ পুরুষ। আশাকরি বুঝতে পারছেন।মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২৪ মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী কাজি অফিসে নিবন্ধন হয়।

মুসলিম আইনে তালাকের প্রকারভেদ-: মুসলিম শরিয়াহ ও মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ মোতাবেক তালাক দুই প্রকার। আবার, মুসলিম মুল আইন অনুযায়ী, তালাকের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রযোজ্য আইনের আলোকে ২ (দুই) প্রকারের তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

মুসলিম স্ত্রী তালাক দিলে স্বামীর থেকে মোহরের টাকা পাবে কিনা?: ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী একজন স্ত্রী তালাক দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

তবে কাবিননামার ১৮ নং কলামে স্বামী কর্তৃক যদি সেই ক্ষমতা অর্পণ করে থাকে তাহলে। যদি ১৮ নং কলামে স্বামী তালাকের ক্ষমতা অর্পণ না করে। মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২৪।

বাংলাদেশে ৩ ধরনের বিবাহ হয়ে থাকে- ১ম হচ্ছে মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী কাজি অফিসে নিবন্ধন হয়।

২য়টি হচ্ছে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন অনুযায়ী যেটাকে Traditional marriage এর category তে পড়ে এটা হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার কাছে নিবন্ধন করতে হয়।

৩য় হচ্ছে special marriage Act 1972 সনের আইন অনুযায়ী হয়। এই বিশেষ বিবাহের জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়কে একটা হলফনামা দিতে হবে যে, স্বামী স্ত্রী উভয় যার যার ধর্ম পালন করবে।

এই হলফনামাটি আইনজীবী দিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধমে সত্যায়িত করে আপনারা স্পেশাল ম্যারিজ রেজিস্ট্রারের নিকট বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন।

মনে রাখবেন মেয়েদের জন্য বিবাহের বয়স হচ্ছে ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ হতে হবে।

এই ৩ বিবাহ করতেই পাত্র /পাত্রীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ২ জন স্বাক্ষী সহ আপনাদের পাত্র /পাত্রীর জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পএ লাগবে।

মুসলিম শরিয়াহ ও মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ মোতাবেক তালাক দুই প্রকার ।আবার, মুসলিম মুল আইন অনুযায়ী, তালাকের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রযোজ্য আইনের আলোকে ২ প্রকার তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে । যেমন, ১) নোটিশ দ্বারা তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ । ২) পারস্পারিক / সম্মতিক্রমে বিবাহবিচ্ছেদ।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৭ অনুযায়ী, যখন একজন ব্যক্তি একতরফা তালাক দেয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *