করোনায় আক্রান্ত ৩০ লাখ

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

*অর্ধেকে নেমে এসেছে দৈনিক মৃত্যু
*দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫২
*১৫ জুলাইয়ে করোনামুক্ত হবে বাংলাদেশ!

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্তি বিশ্ব। এর মধ্যে কয়েকটি দেশে এর প্রকোপ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। তবে রোববার বিশ্বব্যাপী করোনার মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। অনেক দিন ধরে ছয় হাজারের বেশি করে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছিল সেখানে রোববার বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১ জন। এই সংখ্যায় আশা দেখছে বিশ্ববাসী। একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া একদিনে বিশ্বে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪২ হাজারের বেশি করোনা রোগী। এ তথ্য জানিয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে লাইভ আপডেট দেয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫২ জনে দাঁড়াল। নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে সোমবার এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
এর আগে রোববার দেশে করোনা ভাইরাসে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়ায়। একই দিন ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল উহানে কোনো রোগী না থাকার ঘোষণা দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটিতে তেমন পাত্তা দেয়নি। অনেক দেশই ধারণা করেছিল, এটি চীনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ হয়তো ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়বে না। এজন্য সেখানকার দেশগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। এর ফলও দিতে হচ্ছে তাদের। কারণ সংক্রমণ সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দেশগুলোর তালিকার মাঝেই নেই চীন।
এতে সবচেয়ে টালমাটাল অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপের দেশগুলোর। ভাইরাসটি ছড়াতে যখন শুরু করে তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, এটা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। তবে সেই সুর পাল্টাতে হয়েছে তাকে।
গেল কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, ভাইরাসের সংক্রমণের ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে মারা যেতে পারেন। তবে তার সেই অনুমানও ভেস্তে যাচ্ছে। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে এখন ৬০ হাজার ছুঁইছুঁই।
তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভাইরাসটির সংক্রমণও এখনও কম বলে বিশ্লেষণ করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে দেড়শো কোটির দেশ ভারতে শনাক্তের সংখ্যা এখনও ৩০ হাজারের কম।
এদিকে ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে গবেষকরা এর ভ্যাকসিন ও ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করে গেলেও এখনও পর্যন্ত তা অধরাই রয়েছে। তারা সম্ভাবনার কথা শোনালেও শঙ্কার কথাও জানাচ্ছেন অনেকে।
তবে সিঙ্গাপুরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশ করা পরিসংখ্যান বলছে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বেশিরভাগ জায়গায়ই কমবে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। ওই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, মে মাসেই বেশিরভাগ সংক্রমণ কমে যাবে এবং জুলাইতে শতভাগ সংক্রমণ মুক্ত হবে বাংলাদেশ।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
১৫ জুলাইয়ে করোনামুক্ত হবে বাংলাদেশ! : করোনায় পুরো বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে আছে। বাংলাদেশেরও যেন প্রাণ নেই। মানুষ ঘরবন্দি। কবে শেষ হবে এই মহামারী, এই প্রশ্ন এখন সবার মনে। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা কেউই এ নিয়ে কিছু বলতে না পারলেও সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইনের ডাটা ড্রাইভিং ইনোভেশন ল্যাবরেটরি রোববার (২৬ এপ্রিল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কবে নাগাদ করোনাভাইরাস মুক্ত হবে তার একটি অনুমান ভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১১ এপ্রিল থেকে বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে ৯৭ শতাংশ, ১৭ জুনের মধ্যে ৯৯ শতাংশ এবং চলতি বছরের ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ব শতভাগ করোনাভাইরাস মুক্ত হবে বলে অনুমান করা হয়।
এ পরিসংখ্যানে গত ২৩ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরিসংখ্যান অনুসারে, আগামী ১৯ মে’র মধ্যে ৯৭ শতাংশ, ৩০ মে’র মধ্যে ৯৯ শতাংশ এবং আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত জুলাইয়ের ২৫, ইতালি আগস্টের ২৪, সিঙ্গাপুর আগস্টের ৭, স্পেন আগস্ট ৬, যুক্তরাজ্য আগস্ট ১৩, ফ্রান্স আগস্ট ৪, জার্মানি জুলাইয়ের ৩১, জাপান সেপ্টেম্বরের ২৫ যুক্তরাষ্ট্র আগস্ট ২৬ এ করোনামুক্ত হবে বলেও প্রতিবেদনে জানা যায়।


বিজ্ঞাপন