দলবিহীন স্বামী-স্ত্রী এমপির কাহিনি!

অপরাধ আইন ও আদালত আন্তর্জাতিক

আজকের দেশ রিপোর্ট : রাজনীতিতে পোড়খাওয়া প্রবীণ নেতারা এমপি হতে না পারলেও হঠাৎ বিদেশ থেকে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসেই’ হয়ে গেছেন বাংলাদেশের আ’ইন প্রণেতা বা জাতীয় সংসদ সদস্য। শুধু কী তাই? এই ‘এমপি’র স্ত্রীর শখ পূরণে তাকেও সংসদে এনেছেন একই পথে। ‘দলবিহীন’ স্বামী-স্ত্রী এমপি হতে অবশ্য ‘কোটি-কোটি’ টাকা লগ্নি করতে হয়েছে বলে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল। এ হলো লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ও সেলিনা ইসলাম দম্পত্তির ঘটনা। কুয়েতে অর্থ ও মানব পাচার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পুলিশের হাতে আটক ও রি’মান্ডে থাকা বাংলাদেশের আ’ইন প্রণেতা পাপুল এখন বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছেন।


বিজ্ঞাপন

অর্থ ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিশ্ব যখন এক অভিন্ন সুরে কথা বলছে, তখন অভিযুক্ত বাংলাদেশের একজন আ’ইন প্রণেতার কারণে দেশের মাথা নত হয়ে আসছে। এমপি হওয়ায় তিন বছর আগেও যাকে কখনো এলাকায় দেখা যায়নি, একদিনও রাজপথে মিছিল মিটিং করতে হয়নি-সেই ব্যক্তি ও স্ত্রীর এমপি হওয়া যেন রূপকথার গল্পের মতোই।

লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনই সব তথ্যই পাওয়া গেছে। জানা গেছে, জন্মের পর পাপুলের বেড়ে ওঠা ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ১৯৯২ সালে তার ভাই বিএনপি নেতা কাজী মঞ্জুরুল আলমের হাত ধরেই মরুভূমির দেশ কুয়েতে পাড়ি জমান তিনি। মরুর বুকে গড়ে তোলেন টাকার পাহাড়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড়-দুই বছর আগে ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুরে আবির্ভূত হন কাজী পাপুল। স্থানীয় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন এলাকায় জনসেবা করতে এসেছেন তিনি। নিজে মুখেই বলেন, ‘জন্মের পর প্রথম এসেছি। রায়পুরকে জেলায় রূপান্তরিত করতে চাই।’

এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদ কবিরের হাত ধরে দান-খয়রাত শুরু করেন। স্থানীয় কিছু নেতা ও যুবকদের মোটরসাইকেল কিনে দিয়ে নিজের দলভারী করেন। কথায় কথায় টাকা পয়সা ঢেলে এলাকায় অল্প দিনে মানবতার সেবক বনে যান।

২০১৮ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বিশাল শোডাউন করে ধানমন্ডি দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। আর তার স্ত্রী সেলিনা ই’সলাম সিআইপি নৌকা পেতে কুমিল্লা-১ (মেঘনা-দাউদকান্দি) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি আওয়ামী লীগ মহাজোট প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়। মহাজোটের প্রার্থী করা হয় জে’লা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্ম’দ নোমানকে। আর কুমিল্লা-২ আসনে নৌকার টিকিট পান প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও ‘এমপি’ হওয়ার দৌড়ে থেমে থাকেননি পাপুল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। পাপুলের শখের ‘এমপি’ হতে বা’ধা হয়ে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির নোমান। তার সঙ্গে সমাঝোতার চে’ষ্টা করেন পাপুল। অবশেষে সফল হন।

১৯ ডিসেম্বর হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তিতে তিনি নিজ দল জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অ’স্থিরতা, লক্ষ্য নির্ধারণে অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহী’নতা এবং মহাজোটের স্বতন্ত্র প্রার্থী পাপুলের (আপেল প্রতীক) নির্বাচনে বহাল থাকার কথা উল্লেখ করেন নোমান।

ওই সময়ে ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে লেখা হয়, ‘আপনারা সদয় অবগত আছেন যে, লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসন ২৭৫ এর মহাজোট মনোনীত প্রার্থী মো. নোমান মহাজোটের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শহীদ ই’সলামের সমর্থনে তাঁর প্রার্থিতা প্র’ত্যাহার করেছেন।

আপনাদের জানা আছে যে, মো. শহীদ ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত নেতা ও সক্রিয় কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর স্বার্থে এই আসনের বিজয় দলের পক্ষে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই লক্ষে মো. শহীদ ইসলামকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে নির্বাচন কমিশনকৃত তার প্রতীকে বিজয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ অ’তীব জরুরি।

এই মর্মে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শহীদ ই’সলামকে সমর্থন প্রদানের জন্য আপনারা নি’দের্শ দিতে পারেন। এই বিষয়ে আপনাদের সর্বত্মক সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।’ দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের পক্ষে চিঠি স্বাক্ষর করেন সমন্বয়ক ড. সেলিম মাহমুদ। সেলিম মাহমুদ বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।

এরপর ২২ ডিসেম্বর শহরের তাজমহল সিনেমা হলের সামনে দলের জরুরি সভায় জে’লা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু প্রকাশ্যে বলেন, ‘বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নোমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।…অনেক টাকা, অনেক টাকা।’ তার এই বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সভায় নেতাদের মধ্যে বিতন্ডা ও হাতাহাতিও হয়।

তখনকার জাপা দলীয় এমপি নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী শাহ আলম নিজেও তখন গণমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, ‘পাপুলের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে তিনি (নোমান) সরে দাঁড়িয়েছেন বলে আমরা শুনেছি। তবে ওনাকে (নোমানকে) কয়েক দিন ধরে ফোনেও আমরা পাচ্ছি না।’

আর পাপুল তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘গত আড়াই বছরে আমি এলাকায় বিপুল কাজ করেছি। প্রায় ৩২ কোটি টাকা মানবসেবায় খরচ করেছি।’ নোমানের সঙ্গে টাকার লেনদেনের বিষয়ে পাপুল তখন বলেছিলেন, ‘উনি ফাইন্যান্সিয়ালি (আর্থিকভাবে) দু’র্বল। নির্বাচনে থাকলে বড়জোর ৫ হাজার ভোট পেতেন। এসব বুঝেই উনি সরে দাঁড়ান। এখানে লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি।’

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় এমপি প্রার্থী ঠিক করা বা মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করে থাকেন। কিন্তু আদম ব্যবসায়ী পাপুলের ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। সূত্রটির দাবি, এজন্য নানা রকম কল্পকাহিনী দলের ভিতরে-বাইরে আলোচনা আছে।

এক-দুজন প্রভাবশালী নেতা পাপুলকে আওয়ামী লীগের ফ্লেভার দিয়ে ‘দলহীন’ ব্যক্তিকে এমপি বানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাঠানোর চিঠি পেয়ে আওয়ামী লীগের সব শ্রেণির নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাপুলের বিজয় নিশ্চিত করেন। এ হলো পাপুলের এমপি হওয়ার গল্প।

নিজের স্বপ্ন পূরণ হলেও নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে সংসদে আনার মিশনে নামেন হঠাৎ এমপি হওয়া পাপুল। প্রথমে স্বতন্ত্র কোটায় এমপি করার মিশনে নামেন তিনি। বর্তমান সংসদে তিনজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য থাকায় কিছুটা হোঁচট খান। কারণ সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে হলে ছয়জন এমপির ভোট প্রয়োজন হয়।

সে সময়ে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার পরামর্শে এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পাপুল। এবারও তার সাফল্য হাতে ধরা দেয়। বউকে এমপি বানাতে তার স্বপ্ন পূরণ হয়। এতে অবশ্য কোটি কোটি টাকার খরচ করতে হয়েছে বলেও পাপুলের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ ভিসা ব্যবসার দায়ে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েত সিআইডি রিপোর্ট করলে গা ঢাকা দিতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তখন খবর আসে ‘কুয়েত থেকে লাপা’ত্তা পাপুল।’ এবার তিনি করোনার মধ্যেই কুয়েত ফিরে নিজেকে জাহির করতে ৯ মার্চ ফেসবুক লাইভে আসেন এবং সেখানে দম্ভ নিয়ে বলেন, ‘আমি কাচের পাহাড় তৈরি করিনি, আমি পাথরের পাহাড় তৈরি করেছি… এটা ভাঙবে না, কেউ ভাঙতে পারবে না।’

গত শনিবার রাতে তিনি কুয়েত সিআইডি পুলিশের হাতে আটক হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন। বিষয়টি শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের একজন আ’ইন প্রণেতার অর্থ ও মানব পা’চারের ঘৃ’ণ্য অ’পরাধটির।

এ প্রসঙ্গে লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম পিন্টু বলেন, এমপি পাপুল কান্ডে আমরা লক্ষ্মীপুরের মানুষসহ সারা দেশের মানুষ এখন বি’স্মিত ও ল’জ্জিত। আমাদের দেশ ও প্রিয় জে’লা এখন আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। দেশের ভাবমূ’র্তি ন’ষ্ট হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় এক-দুজন প্রভা’বশালী নেতাকে ম্যানেজ করার মাধ্যমে এমপি হন পাপুল।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, আমিসহ প্রায় ১৮ জন ওই আসনে নৌকা পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করি। কিন্তু এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির নোমানকে প্রার্থী করা হয়। আমরা সবাই মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ শুরু করি।

কিন্তু ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ড. সেলিম মাহমুদ স্বাক্ষরিত জে’লা-উপজে’লা আওয়ামী লীগকে চিঠি পাঠান স্বতন্ত্র প্রার্থী পাপুলের পক্ষে কাজ করার জন্য। মহাজোট প্রার্থী বসে যাওয়ায় ধানের শীষ ঠেকাতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পাপুলকে বিজয়ী করি। এখন পত্রিকা ও টিভি পাপুলের গ্রেফতার সংবাদ দেখছি ও পড়ছি।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে এবং বক্তব্য দেবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। এ প্রসঙ্গে রায়পুর উপজে’লা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, ৩ বছর আগে রায়পুরে এসে প্রচুর টাকা খরচ করেন অঢেল টাকার মালিক পাপুল।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে যখন জাতীয় পার্টির মোহাম্ম’দ নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হলে, আমরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সবাই যথারীতি নোমানের পক্ষে কাজ শুরু করি। পাপুল তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। হঠাৎ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে মহাজোট প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে লা’পাত্তা হন। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নি’র্দেশে দলীয় নেতা-কর্মীরা সবাই তার ভোট করে এমপি নির্বাচিত করেন।

নির্বাচনের আগে তিনি প্রচুর টাকা খরচ করলেও নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় অ’নিয়মিত হয়ে পড়েন। মাঝে মধ্যে এলাকায় আসতেন। নির্বাচিত হয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বি’ভক্তি করার চে’ষ্টাসহ নিজস্ব বলয় তৈরি করার চে’ষ্টা করেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ এফ জসীম উদ্দিন আহমদ বলেন, সারা দেশ যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা পিছিয়ে পড়ছি। রাজনীতিবিদ না হয়েও পাপুল এমপি হওয়া এটি স্থানীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দেওলিয়াপনারই বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি।

স্ত্রী কন্যা শ্যালিকাসহ এমপি পাপুলের তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি : অর্থ ও মানব পা’চারের অ’ভিযোগে কুয়েতে গ্রে’ফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ই’সলাম পাপুলের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দু’র্নীতি দ’মন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ই’সলাম, মেয়ে ওয়াফা ই’সলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ দূত মারফত পাঠানো চিঠি গ্রহণ করেছেন পাপুলের স্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, তাদের জি’জ্ঞাসাবাদের চিঠি দেওয়া হয়নি বরং বিভিন্ন তথ্য চেয়ে অ’নুসন্ধান কর্মক’র্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্ম’দ সালাহ উদ্দিন চিঠি দিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার বিস্তারিত নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, পরিবর্তিত ও অপরিবর্তিত ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজী শহীদ ই’সলাম পাপুলের বি’রুদ্ধে অর্থ পা’চার, হু’ন্ডি ব্যবসা ও মানব পা’চারসহ বিভিন্ন অ’ভিযোগ অ’নুসন্ধান শুরু করে দুদক।

গত শনিবার রাতে কুয়েতের মুশরিফ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে পাপুলকে গ্রে’ফতার করে কুয়েত সিআইডি। রবিবার তাকে আ’দালতে হাজির করে জা’মিন আবেদন নামঞ্জুর করে জে’লহাজতে পাঠানো হয়। সোমবার তাকে রি’মান্ডে নিয়ে জি’জ্ঞাসাবাদের অ’নুমতি দেয় কুয়েতের আদালত।

কুয়েতে মুদ্রা ও মানব পা’চারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অ’ভিযোগে কুয়েতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী ৫ বাংলাদেশি। সাক্ষীদের সবাইকে কুয়েতে নিয়েছিলেন পাপুল। কুয়েতি আ’দালতকে তারা বলেন, ‘কুয়েত আসার জন্য তারা পাপুলকে তিন হাজার কুয়েতি দিনার করে দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি বছর আকামা নবায়নের জন্য দিয়েছেন ৩০০ দিনার বা তারও বেশি।