চ্যালেঞ্জের মুখে ট্যানারি শিল্প

অর্থনীতি

৩১ বছর পর চামড়া রফতানির সুযোগ


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাসহ নানা সঙ্কটের কারণে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ১২৫টি ট্যানারি উৎপাদনে গেলেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) এখনও পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না চামড়া খাত দেখভাল ও গবেষণায় নিয়োজিত সরকারী সংস্থাগুলো। এ কারণে এবার কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির মতে, কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে রফতানির সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
ভারত ও চীন কাঁচা চামড়া রফতানির বড় বাজার। এ দুটি বাজার মাথায় রেখে কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়টি সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ভারত ও চীনে এ মুহূর্তে কাঁচা চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া অন্য দেশের তুলনায় এখানে দামও ভাল। তাই কোরবানির চামড়া রফতানি হবে ভারত ও চীনে। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, চামড়া দিয়ে যেসব পণ্য তৈরি হতো, সেখানে এখন সিনথেটিক বস্ত্র ও কৃত্রিম চামড়ার ব্যবহার বেড়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী চামড়ার দাম কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ সেন্ট থেকে দেড় মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম দাঁড়ায় ৪৩ থেকে ১২৯ টাকা। তবে কমিশন এবার চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা সুপারিশ করেছে। গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার নির্ধারিত দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এবার কমিশন তা ৩০ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া ছাগলের চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকার জায়গায় ১৫ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চামড়া শিল্পের কাঁচামাল। এটির বাজার মূল্য অনেক। এ কারণে দাম নির্ধারণ করে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চামড়া খাতের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে অর্থনীতিতে। কিন্তু নানা ধরনের সঙ্কট ও চ্যালেঞ্জের মুখে চামড়া শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। পরিবেশবান্ধব কারখানায় উৎপাদন করতে না পারায় প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ভাল বিক্রি হচ্ছে না। পরিবেশ মানদ- বজায় থাকলে এলডব্লিউজি গ্রুপের সার্টিফিকেট মিলবে। ক্রেতাদের আস্থাহীনতার সঙ্কট দূর হবে। আর এই সার্টিফিকেট পেতে হলে কারখানায় অবশ্যই বর্জ্য শোধনাগার থাকতে হবে। কিন্তু এসব শর্ত অনেক ট্যানারি পূরণ করতে পারছে না। এখানেই এখন নজর দেয়া প্রয়োজন।
করোনায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশের রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম চামড়া শিল্প খাত। তবে কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ৩১ বছর পর কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এবার সোয়া কোটি চামড়া আসবে কোরবানির পশু থেকে। চামড়া কিনতে আগ্রহী ভারত ও চীন।
জানা গেছে, ট্যারিফ কমিশনের করা এই প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দিতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণসহ রফতানির বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকেই দাম নির্ধারণসহ কাঁচা চামড়া রফতানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। কাঁচা চামড়া রফতানি হলে সঠিক দাম নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াবে এ খাত। এছাড়া কোরবানির চামড়া নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে। ট্যানারিগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া এ খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে চামড়া খাত উন্নয়নে গঠিত টাস্ক ফোর্সের দ্বিতীয় সভা সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের কোরবানির চামড়া সংগ্রহে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক পিস চামড়াও যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে সরকারের নজর থাকবে। তিনি বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার দ্রুত চালুকরণে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, কোরবানি ঈদের আগে সব সমস্যার সমাধান হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্যানারিগুলোর পানির দামে চামড়া কেনা এবং একচেটিয়া মুনাফা করার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া উচিত। এতে করে চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে আড়ত মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হতে পারবেন। এতে চামড়া বাণিজ্যে স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েল এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, পচে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ থাকা উচিত। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে এবার রফতানির সুযোগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পের কাঁচামাল, বাজার মূল্য আছে। এটি ফ্রি বা পানির দামে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ট্যানারি মালিকদের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।