নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীসহ সারাদেশে শ্রমজীবী মানুষ করোনা ভাইরাসকে তোয়াক্কা করছেন। গ্রাম গঞ্জের হাটবাজার থেকে শুরু করে মসজিদ এমনকি গণপরিবহনেও নেই সচেতনতাও। শুধু তাই নয়, এসব মানুষের জানা নেই যে বাংলাদেশ কতজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বা কতজন মারা গেছেন।
তবে ভাসমান, বস্তিবাদি কিংবা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোন সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। আর এজন্যই ধারনা করা হচ্ছে তারা খুব একটা আক্রান্তও হচ্ছেন না। নিম্নবিত্ত মানুষরা ঘনবসতিপূর্ন স্থানে থাকায় সেখানে করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু এরকম কোন সংবাদও পাওয়া যাযনি।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষা না করার কারনে তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার নির্নয় করা যাচ্ছে না। কারো কারো মতে এ শ্রেনীর মানুষ শারীরিক পরিশ্রম বেশী করায়, রোদ, বাতাস ও মাটির সংস্পর্শে থাকায় এবং করোনা নিয়ে আতঙ্কে না থাকার কারনে তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী। তবে কেন নিন্মবিত্ত বা শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে করোন সংক্রমনের হার কম কিংবা কতটা এ বিষয়টি নিয়ে গবেষনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবহন শ্রমিক, বস্তিবাসী, গৃহ কর্মী, রিকশা চালক কিংবা হকারদের মত কায়িক পরিশ্রমী মানুষদের জীবনাচারন পর্যবেক্ষন করে এবং তাদের সাথে কথা বলে দেখা যায়, করোনা মোকাবেলার জন্য যেসব সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় তার বেশীরভাগই তারা অনুসরণ করেন না। নিয়মিত হাত ধোওয়া কিংবা মাস্ক ব্যবহারের মত বিষয়গুলো তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
বগুড়ার বাসিন্দা মাহমুদুল ইসলাম রাজধানীতে গত ১০ বছর ধরে রিক্সা চালাচ্ছেন। আর নগরীর যাত্রাবাড়ির ধলপুরের একটি বস্তিতে বসবাস করেন। তিনি অন্যসময় মাস্ক ব্যবহার না করলেও রিকসা চালানোর সময় যাত্রী গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই মাস্ক ব্যবহার করেন। আর মুখের মাক্সটিও ময়লা হয়ে গেছে। ময়লা মাস্ক ব্যবহার করছেন কেন-জানতে চাইলে বলেন, মাস্ক পড়ে কি হবে। আমারা গরীব মানুষ। আমাগো কিছু হইবো না। শুধু যাত্রীদের জন্য মাস্ক ব্যবহার করি। না হলে যাত্রীরা রিক্সায় উঠতে আপত্তি করে। তিনি আরো জানান, তাদের বস্তিতে কারো করোনা হয়নি। সবাই ভালো আছেন।
আবার মিরপুর বালুর মাঠের বস্তি, ঝিলপাড় বস্তি ও চিড়িয়াখানা এলাকায় বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। আর এসব বস্তিকে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। তাছাড়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন ধলপুর সিটি পল্লির বস্তিটি বেশ পুরনো এবং বড়। এই ওয়ার্ডের সিটি পল্লি বস্তি ছাড়াও তার ওয়ার্ডে বেশ কিছু এলাকা ঘন বসতিপুর্ণ। এখানে অনেক নি¤œবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের বসবাস। এসব মানুষদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি আগুনে পুড়ে যাওয়া কমলাপুর টিটিপাড়া বস্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেখানেও কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। এই বস্তির সবাই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এখানকার বাসিন্দা সীমা আক্তার জানান, তাদেরকে ময়লা নিয়ে কাজ করতে হয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদেরকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও অধিকাংশই তা মানেন না। আবার আমরা এক কক্ষে ৫/৭ জন করে থাকি। ইচ্ছে করলেও ঘনবসতিপূর্ণ এই বস্তিতে আমাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব না। তারপরও এখানে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেছেন, শারীরিক শ্রম, রোদ,বাতাস ও মাটির সংস্পর্শে থাকলে শরীওে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিন স্থানে বেশী থাকেন, ফ্রিজে রাখা সংরক্ষিত খাবার খান, শারীরিক শ্রম কম করেন তাদেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শুধু কোভিড-১৯ নয় সব ভাইরাসের জন্যই এসব শর্ত প্রযোজ্য। হয়তো এসব কারনেই শ্রমজীবী মানুষদের করোনয় আক্রান্তের হার কম হচ্ছে।
তাদের মতে সচেতনতা ও সামর্থের অভাবে নিন্ম আয়ের মানুষরা সাধারণ জ্বর-সর্দি খুব একটা পাত্তা দেননা। এজন্যই হয়তো তাদের মধ্যে আক্রান্তের বিষয়ে জানা যাচ্ছে না। আবার করোনায় আক্রান্তের ৮০ শতাংশের কোন উপসর্গ থাকে না। অনেকে আবার এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে এ বিষয়ে গবেষনা না করে নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুন্নাহান বলেন, কেন শ্রমজীবী বা নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে করোনা সংক্রমনের হার কম তা আমরা জানি না। এজন্য গবেষনার প্রয়োজন। তাদের কি ইমিউনিটি আছে তা জানতে গবেষনার দরকার। সামাজিক-আর্থিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের কারনে ইতমধ্যেই তারা অনেক ধরনের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন।