সিনহা হত্যায় পুলিশের ভূমিকাকে ম্লান করবে না

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকা-ের ঘটনা পুলিশের ভূমিকাকে ম্লান করবে না বলে মন্তব্য করেছেন এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর মিজানুর রহমান এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চারজন কমিটির সদস্য এখানে উপস্থিত হয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে আমরা যে কাজটি করেছি, যে রিপোর্টটি প্রণয়ন করেছি, সেটি হস্তান্তর করতে পেরেছি।’
কমিটির প্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রথমে সাত কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছিল। ১ আগস্ট আদেশটি হয় সেদিন ছিল ঈদের দিন। আমি আমার মাকে দেখার জন্য গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কমিশনার স্যার আমাকে বললেন, তোমাকে অর্ডার দেয়া হয়েছে। আমি ২ তারিখ হোয়াটস অ্যাপে (কমিটি গঠনের অর্ডার) পাই। ৩ তারিখ (আগস্ট) আমরা নমিনেশনের জন্য চিঠি লিখি, ৩ তারিখরই সশস্ত্র বহিনী বিভাগ ও পুলিশ থেকে আমাদের দুজন সহকর্মীর নাম আমাদের দেয়া হয়। আমরা ৪ তারিখে (আগস্ট) কক্সবাজারে গিয়ে প্রথম সভা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কর্মপরিকল্পনা করি, আমি সংযুক্তিতে দিয়েছি-আমরা ৩ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত কী কী করেছি। আমরা বিস্তারিত ক্যালেন্ডারের মতো করেছিলাম, সেটি সংযুক্তিতে আছে।’
‘আমি একটি কথা বলব, আমাদের পুলিশ বাহিনী যে আইনশৃঙ্খলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে, এই ঘটনাটি (সিনহা হত্যা) কোনোভাবেই তাদের ভূমিকাকে ম্লান করবে না। আমরা দেখেছি তারা পরিশ্রম করে।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেয়েছি আমাদের মন্ত্রণালয় যেটি নির্দেশনা দিয়েছে, এটির উৎস কী, কারণ কী, এই ধরনের ঘটনার প্রতিকারের ব্যাপারে কী ধরনের সুপারিশ করা যায়, সেই ব্যাপারে আমরা চারজন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে কমিটির প্রধান বলেন, ‘আমরা স্যার আপনার সদয় অবগতির জন্য বলব, কর্মপরিকল্পনায় আমরা নির্ধারণ করেছি কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ রকম একটা সম্ভাব্য তালিকা করেছি। এটি ইনক্রিমেন্টাল ছিল, শেষ পর্যন্ত ৬৮ জনে এটি দাঁড়িয়েছে। এই ৬৮ জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছি। এছাড়া আমরা ঘটনাস্থলগুলোতে রাত ৯টার দিকেও গিয়েছি। সাংবাদিক বন্ধুরা আমাদের সবসময় পাহারা দিয়েছেন, কিন্তু ওনারা আমাদের ধরতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাতে এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) ফোর্স নিয়ে ডেমো করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। যে পাহাড়ে মেজর সিনহা গিয়েছেন সেই পাহাড়ে গিয়েছি। ওখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে উৎস, কারণ ও আমাদের সুপারিশ প্রণয়ন করেছি।’
‘কতটি সুপারিশ করেছেন, প্রতিবেদন কত পৃষ্ঠার’-এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি তো হস্তান্তর করে দিয়েছি, এখন স্যারদের ব্যাপার। আমার তরফ থেকে আর কোনো বক্তব্য নেই।’
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনা প্রকাশের পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে ঘটনার উৎস, কারণ ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেই বিষয়ে সুপারিশ দিতে ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করে।
কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন-সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।
সাত কর্মদিবস অর্থাৎ ১০ আগস্টের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় ফের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এ সময়ের মধ্যে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২ সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করে।


বিজ্ঞাপন