রাইড শেয়ারিং
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকায় অ্যাপভিত্তিক রাইডের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। রাইডাররা অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহণ করলে অ্যাপের নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারে না। যার কারণে রাইডাররা অনেক সময় কিছু বাড়তি আয়ের আশায় সরাসরি কন্ট্রাকের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। আর এরই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে একটি ছিনতাইকারী চক্র। রাজধানী ঢাকায় চলাচলরত অ্যাপভিত্তিক রাইডারদের একটি অংশ বিভিন্ন সময়ে অ্যাপের বাইরে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। কিছু বাড়তি আয়ের আশায় অ্যাপের নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে তারা এভাবে কন্ট্রাকের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহণ করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)- এর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, এ ব্যাপারটি আমাদের বিআরটিএ সম্পর্কিত না। এই বিষয়টি দেখবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) অলিদ হোসেন সকালের সময়কে বলেন, যারা অ্যাপের মাধ্যমে রাইড সেবা দিয়ে থাকে তাদের একটু সতর্ক হতে হবে। সামান্য কিছু বাড়তি আয়ের আশায় অ্যাপরে বাইরে রাইড করা খুবই বিপজ্জনক। আর এর পাশাপাশি যাত্রীদেরকেও সতর্ক হতে হবে। যাত্রীরাও অনেক সময় অ্যাপের বাইরে রাইড সেবা নিয়ে বিপদে পড়েন।
ডিএমপির এই উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে রাইড সেবা নিলে সেখানে অ্যাপের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। কিন্তু অ্যাপরে বাইরে সরাসরি কন্ট্রাক করলে অ্যাপের মাধ্যমে তা মনিটরিং করা যায় না এবং ছিনতাইকারীরা এই সুযোগটা নিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, এদিকে যারা এ ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত আমরা সবসময়ই তাদের দিকে নজর রাখার চেষ্টা করি এবং তাদের গ্রেফতার করি।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাত্রীরা যেন অ্যাপের বাইরে কোনোভাবেই রাইড সেবা না নেই। সে ব্যাপারে আমরা যাত্রী এবং রাইডারদের বিভিন্ন সময় উৎসাহিত করে থাকি। এবং এ ব্যাপারে আমরা একটি প্রেস ব্রিফিংও করেছি।
জানা গেছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রীবেশে অ্যাপের বাইরে রাইডারদের সাথে প্রথমে সরাসরি কন্ট্রাক করে। পরে তারা গাড়িতে করে নিজেদের পূর্ব নির্ধারিত পথে নিয়ে যায় রাইডারদের। এরপর তাদের পূর্ব নির্ধারিত সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে চালকের কাছ থেকে তারা গাড়ি ছিনিয়ে নেয়। আর যদি চালক বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে অনেক সময় চালকদের হত্যা করা হয়। ছিনতাইকৃত গাড়ি তারা প্রথমে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর গাড়ির নম্বর প্লেটও পরিবর্তন করা হয়। পরে ভারতীয় চোরাই গাড়ি হিসেবে দেখিয়ে কাস্টম কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে নিলামের জাল কাগজ বানিয়ে অন্য কারো কাছে গাড়িটি বিক্রি করা হয়।
এমনই একটি চক্রের এক সদস্যকে সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার বাগেরহাটের চিলমারী উপজেলা থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উত্তরা জোনের একটি দল। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা হলেন- ইমরান হোসেন ও মাসুম মোল্লা।
উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের সঙ্গে একটি ভুয়া নিলামের কাগজ পাওয়া যায়। যেখানে ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেট ফেলে দিয়ে ভারতীয় টিভিএস কোম্পানির স্ট্রাইকার ১২৫ মডেলের গাড়িটি বেনাপোল কাস্টমস থেকে নিলামের মাধ্যমে মশিউর রহমান নামে একজন কিনেছেন এমন একটি ছাড়পত্র লাগানো হয়। এছাড়া নিলামে কেনার কারণে কাস্টমস থেকে একটি নাম্বার দেয়া হয় যা সম্পূর্ণই ভুয়া।
এছাড়া নিলামের ছাড়পত্রের সঙ্গে গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বরের সঙ্গে কোনো মিল নেই। ফলে চক্রটি এভাবে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে ভুয়া নিলামপত্র দেখিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিতকায় গত ২১ আগস্ট উত্তরা থেকে ছিনতাই হওয়া ঢাকা মেট্রো-হ-৫৪-৮৫০৭ গাড়িটি বিক্রি করে দেয়। তবে কত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে সেটি এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের বিষয়ে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিএমপি উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লুর বলেন, এই ছিনতাইকারী চক্রটি মূলত রাজধানী ঢাকার মধ্যে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে আসছিল। গত দুই বছর ধরে এই চক্রটি ছিনতাই করে আসছিল। চক্রের সদস্যরা জোড়ায় জোড়ায় দুইজন করে একসঙ্গে থাকে। এ পর্যন্ত ঢাকার মধ্যে কতটি ছিনতাই করেছে বা কোনো হত্যাকা- ঘটিয়েছে কি না তার সঠিক কোনো খবর এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। এই বিষয়টির ব্যাপারে জানতে আমরা আাদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা তদন্ত করছি।
অ্যাপের বাইরে যাত্রী তোলার বিষয়ে রাইডারদের নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে অ্যাপসভিত্তিক রাইড কোম্পানি পাঠাওয়ের জন সংযোগ কর্মকর্তা নাদিয়া মাহবুব বলেন, আমরা এই বিষয়ে রাইডারদের কাছে এসএমস, ভয়েস বা বিভিন্ন অফার দিয়ে অ্যাপ ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে থাকি। আমরা পুলিশের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগও নিচ্ছি। অ্যাপের বাইরে যাত্রা করা গাড়ির চালক ও যাত্রী দুজনের জন্যই বিপজ্জনক। এখানে যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন। যে কারণে আমরা সবসময় রাইডারদের নিরুৎসাহিত করি।