অনলাইন টিকিটে ভোগান্তি

স্বাস্থ্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোগীদের সুবিধার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগে অনলাইনে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিলো। তবে এতে সুবিধার বদলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা আসে এই হাসপাতালে। অনেক রোগীরাই টিকিট কাটতে না পেরে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মচারীরা। টিকিট কেটে দেওয়ার নাম করে ৩০ টাকার টিকিট বিক্রি করছেন দ্বিগুণ অথবা চার গুণ দামে।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে ভোগান্তির কোনও সুযোগ নেই।
চিকিৎসকরা জানান, বহির্বিভাগের প্রতিটি বিভাগে রোগী অনুসারে অর্ধেক অনলাইনে টিকিট কাটা রোগী ও বাকি অর্ধেক সরাসরি আসা রোগীদের দেখা হচ্ছে। তবে সাধারণ রোগীরা অনেকেই এসে দেখছেন টিকিট নেই, তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে।
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগ এক এবং দুই এর সামনে অসংখ্য মানুষ বসে আছেন। তাদের মধ্যে ফরিদপুরের নাসির মিয়া। স্ত্রী জোবেদা খাতুনের কিডনিরোগসহ আরও সমস্যা রয়েছে। ফরিদপুর থেকে রোববার রাতে ঢাকায় এসে উঠেছেন রামপুরায় এক আত্মীয়ের বাসায়। সোমবার সকালে তিনি ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসে শোনেন আগের নিয়মে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। অনলাইনে টিকিট কেটে আসতে হবে।
কিন্তু নাসির মিয়া অনলাইনে কীভাবে টিকিট কাটবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না, তিনি হন্যে হয়ে একেক জনকে মোবাইলফোনে নিজের সমস্যার কথা জানাচ্ছিলেন।
নাসির মিয়ার স্ত্রী জোবেদা খাতুন বলেন, ছয় বছরের সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি, ইচ্ছে ছিল ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাবো। বাড়িতে বড় দুই সন্তানসহ শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। আবার ঢাকাতে আত্মীয়ের বাসাতেই বা কয়দিন থাকা যাবে, এদিকে আবার এখন করোনার ভয়। কিন্তু এখানে এসে কোনোভাবেই টিকিট কাটতে পারিনি। আমরাতো অনলাইন বুঝি না, তাহলে কেমন করে ডাক্তার দেখাবো?
প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে অনলাইনে টিকিট কেটে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনলাইন টিকিটের সুযোগে প্রতিষ্ঠানেরই অসাধু কর্মচারীরা টিকিট বাণিজ্য করছেন। কেউ কেউ ১০টা টিকিট কিনে সেগুলো বিক্রি করছে বেশি দামে।
তারা বলছেন, কী কারণে অনলাইনের নিয়ম করা হলো সেটাও একটা প্রশ্ন। আর এটাতো করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়, এটা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। এ হাসপাতালে সেবা নেওয়া বেশিরভাগই দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তাদের কাছে এ অনলাইনের সুবিধা নেই, তারা এই বিষয়টি বোঝেনও না। শতকরা ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ রোগী যারা এ হাসপাতাল থেকে সেবা নেন, তারা ঢাকার বাইরের দূর দূরান্ত থেকে আসেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ অনলাইন সেবা বোঝে না। যে কারণে মানুষ সরাসারি হাসপাতালে চলে আসছেন এবং এসে সীমাহীন ভোগান্তিতে পরছেন। চিকিৎসা না নিয়েই অনেককে ফিরতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রোগীদের জন্য কাউন্টারে টিকিট রাখা হলেও সেটা বেশি সময় রাখা হয় না। আবার কাউন্টার খোলাও হয় সকালের দিকে। যখন রোগীরা এসে পৌঁছান না। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা টিকিট কেটে রাখেন, আর পরে রোগীদের কাছে সেটা বেশি দামে বিক্রি করেন।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পরিকল্পনা ছিল একজন রোগী দূর থেকে এসে যেন বঞ্চিত না হন। তার যদি টিকিট বুকিং দেওয়া থাকে, তাহলে সে সেবাটা পেয়ে যাবে- এটাই ছিল পরিকল্পনা।
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ভোগান্তির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটা হবার কথা নয়, কাউকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে আমাদের ভিজিল্যান্স টিম রয়েছে। এ সময় ফরিদপুর থেকে আসা নাসির মিয়ার ভোগান্তির কথা জানালে উপাচার্য বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখবো, এটা হবার কথা নয়’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা নতুন নিয়মের সুযোগ নিয়ে অনিয়ম করছেন, তারা যেহেতু অথোরিটির লোক, তাই অথোরিটিকে দায় নিতে হবে।
এক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে যাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব তাদেরকে সেভাবে চিকিৎসা দিয়ে বাকিদের সরাসরি টিকিটের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।


বিজ্ঞাপন