অধ্যাদেশ জারি
নিজস্ব প্রতিবেদক : ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ জারি করেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার অধ্যাদেশে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত সোমবার (১২ অক্টোবর) ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদ-। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করার দাবির মধ্যে সরকার এ পদক্ষেপ নিল।
২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় বলা হয়, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তা হলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-নীয় হবেন।’
অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
আইনের ৯(৪)(ক) উপধারায় ছিল, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-নীয় হইবেন।’ এখানেও সংশোধন করে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে’র পরিবর্তে ‘মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’ করা হয়েছে।
৯(৫) উপধারায় ছিল, ‘যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনো নারী ধর্ষিতা হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা অর্থদ-েও দ-নীয় হইবেন।’ এখানে ‘দায়ী’ শব্দ পরিবর্তন করে ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে অপরাধ আপসযোগ্য হবে। এছাড়া আগের আইনে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের রেফারেন্স ছিল। এখন সেখানে হবে ‘শিশু আইন, ২০১৩’।
আগের আইনের ৩২(১) বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিক্যাল পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোনো বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘কোনো হাসপাতালে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য উপস্থিত করা হইলে, উক্ত হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাহার মেডিকেল পরীক্ষা অতিদ্রুত সম্পন্ন করিবে এবং উক্ত মেডিকেল পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করিবে এবং এইরূপ অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি স্থানীয় থানাকে অবহিত করিবে।’
৩২ ধরায় সংশোধন এনে বলা হয়েছে, ‘অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা’র পরিবর্তে ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা’ করা হয়েছে। ‘অপরাধের শিকার ব্যক্তির’ পরিবর্তে করা হয়েছে ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া’।
সংশোধিত আইনে ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষা’ শিরোনামে ৩২(ক) নামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন সংঘঠিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধের শিকার ব্যক্তি মেডিকেল পরীক্ষা (ধারা-৩২ এর অধীন) ছাড়াও ওই ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক ‘ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৪’ এর বিধান অনুযায়ী ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছিল।
এ ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী মহাসমাবেশ থেকে সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়।
‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ চেয়ে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।