মূল্যায়নে উত্তীর্ণ

এইমাত্র শিক্ষাঙ্গন

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারির পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলতি বছরে আর হচ্ছে না মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও অভিবাবকরা। তারা বলছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্তটি অত্যান্ত ইতিবাচক।
বুধবার ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, চলামান করোনা পরিস্থিতির জন্যই চলতি বছর কোনো পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই মূল্যায়নে যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি না হয় সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, পরবর্তীতে তাদের কিভাবে অতিরিক্ত ক্লাস করানো হবে বা কিভাবে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা যায় সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এবার কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না।
আমরা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের একটি মূল্যায়নের পরিকল্পনা করেছি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। এজন্য ৩০ কর্মদিবসে সম্পন্ন করা যায় এমন সিলেবাস প্রণয়ণ করেছে এনসিটিবি। আমরা লক্ষ্য রাখছি যাতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি না হয়। শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে যাওয়ার জন্য যতটুকুু জানা প্রয়োজন সেটি বিবেচনায় করেই এ সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে, বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরবর্তী ক্লাসে উঠতে এ মূল্যায়ন পদ্ধাতি কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এবার অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে তাদের যেতে হবে। তবে তাদের ক্ষেত্রে সনদের একটি বিষয় রয়েছে। তাদের সনদ বিষয়ে পরবর্তীতে জানিয়ে দেবো। কারণ তারা কোনো সনদ পাবে না সেটি তো উচিত নয়।
মূল্যায়ন বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের তো তাদের ইতোপূর্বের রেজাল্টে অনেকটা মূল্যায়ন করা যেতে পারে। শিক্ষকরা তো শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ধারণা রাখে। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাইন্স, কমার্স, আর্টস বিভাগে কে কিভাবে যাবে সেটিও আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব।
শিক্ষাবর্ষ বৃদ্ধির বিষয়ে দীপু মনি বলেন, আমরা সব পরিকল্পানাই মাথায় রাখছি। শিক্ষাবর্ষ বৃদ্ধির প্রয়োজন কিনা সেটির জন্যও চিন্তায় রাখছি। এখন যে অবস্থায় আছি তাতে এখনও শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে যাবে সেটি এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত। যারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি বা করতে পারছে না, নভেম্বর-ডিসেম্বরে তাদের রিচ করার চেষ্টা করব। যারা ক্লাস করেনি শুধু তারা নয়, যারা করেছে তাদের মধ্যেও দুর্বলদের এগিয়ে নিতে আরও বেশি ক্লাস করাতে হবে। কিভাবে সেসব ক্লাস হবে সেই পরিকল্পনাও করছি।
সামনের বছরে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন এমন অবস্থায় আমরা বলতে পারছি না একমাস পর কি অবস্থায় থাকব। ভর্তি কখন শুরু করতে পারব কীভাবে হবে সেটিও এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অনলাইনে সেটি করব কিনা সেটিও দেখছি, কিন্তু অনলাই সবার জন্য অ্যাকসেসেবল না। সুতরাং কীভাবে করব পরবর্তিতে সেটি জানিয়ে দেবো।
কোভিডের কারণে অনেক পরিবার হয়ত এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন, সেই সব পরিবারের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, এক হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্টগুলো ওয়েবসাইটে ও টেলিভিশনে পাবেন, সুতরাং সেখান থেকে নিয়ে শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকেরা স্কুলে জমা দিতে পারবেন। অথবা বর্তমান আবাসস্থলের কাছের মাধ্যমিক স্কুলটিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিলেবাস এবং অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন এবং অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে সেই প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে পারবেন।
মূল্যায়ন হবে যেভাবে : সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে চার সপ্তাহে চারটি অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হবে, এবং তার উত্তর সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হবে অনলাইনে, এবং উত্তর অনলাইনে জমা দেয়া যাবে। একই সাথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্কুলে গিয়েও অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবেন এবং একটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবার পর পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করা যাবে। এই সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্য কোন পরীক্ষা বা ক্লাসওয়ার্ক প্রদান বা জমা নিতে পারবে না। এরপর চারটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার পর একটি মূল্যায়ন করবে কর্তৃপক্ষ। তবে এই মূল্যায়ন পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। মূল্যায়ন যেন ‘শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি’ না করে সে বিষয়টি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সচেতন থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এটি (মূল্যায়ন) কেবল আমাদের (কর্তৃপক্ষের) বোঝার জন্য যে শিক্ষার্থীর কোন বিষয়ে দুর্বলতা আছে, যাতে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ওই বিষয়ে বাড়তি নজর দেয়া যায়, যতœ নেয়া যায়, সেজন্য। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এভাবেই মাধ্যমিকের পাঠ কার্যক্রম চলবে।
এদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম সকালের সময়কে বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানায়। কোভিড-১৯ এর কারণে যেহেতু আমরা একটা আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেক্ষেত্রে সরকারের এ ধরণের নমনীয়তা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, সারা বছরের গাঠনিক মূল্যায়নকে বিবেচনায় রেখে এনসিটিবি’র সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তটি গ্রহনযোগ্য। কারণ চরম দুরবস্থার মধ্যে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। আমি মনে করি এটাও মানব সভ্যতার জন্য একটা মহাযুদ্ধ। সেক্ষেত্রে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।


বিজ্ঞাপন