চট্রগ্রাম প্রতিনিধি: চলতি আমন মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে ৫ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্যে একমাত্র আনোয়ারা উপজেলা থেকে ‘কৃষকের অ্যাপস’-এর মাধ্যমে সরাসরি প্রান্তিক চাষি থেকে সংগ্রহ করা হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য থেকে রক্ষা পাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষকগণ। বিষয়টি নিয়ে আনোয়ারায় ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছে উপজেলা খাদ্য অফিস। ‘কৃষক অ্যাপস’-এর মাধ্যমে সারা দেশের ৭৯টি উপজেলা থেকে এবার আমন ধান সংগ্রহ করা হবে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা। সারা দেশ থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫২ হাজার ৯৪৩ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা হবে রংপুর বিভাগ থেকে। চতুর্থ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা হবে ১৬ হাজার ৮৮৬ মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হবে। ওই হিসেবে ১৪ দিন আগে সংগ্রহ মৌসুম শুরু হয়েছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত খাদ্য বিভাগ ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম আজাদীকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে এখনো ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। কারণ মিলারদের সঙ্গে এখনো চুক্তি শেষ হয়নি। ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ আছে। তাছাড়া ধান তো এখনো পুরোপরি কাটাও হয়নি। আশা করছি ১৫-২০ দিন পর একটা রেজাল্ট আসবে।
চট্টগ্রামে কয়টি মিল আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৭০ থেকে ৮০ জন চুক্তি করার মতো যোগ্য। এখন তারা চুক্তি করে কিনা সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে একমাত্র আনোয়ারা উপজেলা থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে এবারই প্রথম আমন মৌসুমে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলো চট্টগ্রাম।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘কৃষকের অ্যাপস’ ডাউনলোড করা যাবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন কৃষকরা। অ্যপসটি ব্যবহার করে কৃষকরা ধান বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিবন্ধন ও আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর কৃষক বাছাইয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লটারি করা হবে। সরবরাহের জন্য নির্বাচিত কৃষককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন কুমার বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরা উপজেলাজুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রান্তিক চাষিদের বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করছি। অ্যাপসের মাধ্যমে ধান দিলে তারা লাভবান হবেন তা তুলে ধরছি। ‘কৃষকের অ্যাপসে’ কতজন রেজিস্ট্রেশন করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬০ জন করেছে। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ছিল। আশা করছি সেটা আরো বাড়াবে।
সন্দ্বীপ থেকে সংগ্রহ হবে না : খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা তালিকা পর্যালোচনায় জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে সন্দ্বীপ থেকে এবার আমন ধান সংগ্রহ করা হবে না। যদিও উপজেলাটিতে ৯৯ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া আনোয়ারা উপজেলা থেকে ৫৪ মেট্রিক টন, বাঁশখালী থেকে ৫১১ মেট্রিক টন, বোয়ালখালী ১৬৬ মেট্রিক টন, চন্দনাইশ ২৭৮ মেট্রিক টন, ফটিকছড়ি ৭৪১ মেট্রিক টন, হাটহাজারী ৩২৩ মেট্রিক টন, লোহাগাড়া ১ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন, মীরসরাই ৭৩৩ মেট্রিক টন, পটিয়া ৩৮৫ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়া ৫১৫ মেট্রিক টন, রাউজান ৩৯৮ মেট্রিক টন, সাতকানিয়া ৪১৭ মেট্রিক টন, সীতাকুণ্ড ২১৭ মেট্রিক টন এবং কর্ণপুলী উপজেলা থেকে ৬৯ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি নগরীর পাঁচলাইশ থানা থেকে ৩৮ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা হলেও ডবলমুরিং ও পতেঙ্গা থানা থেকে সংগ্রহ করা হবে না।