কারা কিনছে বিদেশে ফ্ল্যাট, খোঁজে নেমেছে দুদক

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনা বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
তিনি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে দুদক মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) আ ন ম আল ফিরোজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নেয়া বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক।
‘বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশিদের তালিকা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, ব্যাংক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে থাকে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত তার মূলধন হারানোয় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশকে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য যে পরিমাণ দেশীয় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার রোধ করা একান্ত দরকার।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে (ওহাবংঃসবহঃ ছঁড়ঃধ) বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের নাম উঠে এসেছে। এই ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ রোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘এর ফলে একদিকে যেমন অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যান্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত এ দুরূহ কাজ সম্পন্ন ও কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা সম্ভব নয়।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি দমন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরবরাহ করলে কমিশন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে পারবে। এ অবস্থায় ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশি নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য বা তালিকা আমাদের সকল দূতাবাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে কি না তা জানানোর জন্য কমিশনের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যক্তির অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াসহ ৫০টি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। যার মধ্যে ২২টি দেশ দুদকের পাঠানো চিঠিতে সাড়া দিয়েছে।


বিজ্ঞাপন