বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) কমিশনার রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা নেই তথা ছিনতাইকারী মুক্ত বললেও প্রকৃতপক্ষে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলছে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও ছিনতাই, ডাকাত ও অজ্ঞান চক্রের খপ্পড়ে পড়ে সর্বোস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। গুরুতর জখমের শিকার হয়েছেন অনেকে। তবে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী অভিযোগ না করায় এসব ঘটনা প্রচার পাচ্ছে না। এর মধ্যে গত বুধবারও শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে ছিনতাই চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। যথাযথ প্রতিকার না পাওয়া, ঝামেলা এড়ানো এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা বা জিডি করতে নিরুৎসাহিত করায় প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ঈদ সামনে রেখে রোজার মাসে রাজধানীর ৩০০টি স্পটে অর্ধশতাধিক ছিনতাই চক্রের প্রায় ৫ শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অনেককে গ্রেফতার করা হলেও খুব দ্রুত জামিনে বেড়িয়ে আবারও একই কাজ শুরু করে এসব অপরাধীরা। তবে তাদের প্রতিরোধে ডিএমপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলা হলেও যথাযথ সফলতা মিলছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, রাজধানীর ছিনতাইপ্রবণ স্পটগুলোর মধ্যেÑ গুলিস্তান, মালিবাগ থেকে কাকরাইল মোড়, কমলাপুর রেলস্টেশন, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গুলশান শ্যুটিং ক্লাব, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, ও হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকাতেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর বাইরে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতেও রিকসা থামিয়ে যাত্রী বা ব্যবসায়ীদেরও নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
নগর সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রোজার মাঝামাঝিতে বেশি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাজধানীর বাসীন্দা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানীতে পণ্য কিনতে আসা ব্যবসায়ীরাও ছিনতাই ও ডাকাতির কবলে পড়ে সর্বোস্ব হারান। ছিনতাইকারীদের হাতে খুন, জখম ও অঙ্গহানির ঘটনাও ঘটেছে অনেক। গত ৬/৭ বছরে ছিনতাইকারীদের হাতে অর্ধশত মানুষ খুনের শিকার হয়েছেন। ঢাকায় রাতের চেয়ে দিনের বেলা ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা বেশি তৎপর থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য, ভুক্তভোগীরা যথাযথ প্রতিকার না পাওয়া এবং মাঝে মধ্যে ছিনতাইকারী ধরা পরার পর মামলা না করায় তারা গ্রেফতার হলেও আবার জামিনে বেড়িয়ে আসে। তাদের মতে, ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে বেশি সক্রিয় ছিনতাই চক্র। যানজটের মধ্যে কোন বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি থামলেই বাসের জানালা গিয়ে হাত ঢুকিয়ে ছো মেরে মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিস নিয়ে যায়। অনেকে মোটরবাইকে আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতি বহন করে ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে। তবে ব্যাংকিং লেনদেন বা কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধের টাকা বহনের সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এর বাইরে ছিনতাইকারীদের রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছদ্মবেশ ধারণ করে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে দেহ তল্লাশির নামে যাত্রীদের রিকশা বা গাড়ি থেকে নামিয়ে ভয় দেখিয়ে সর্বোস্ব হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ট্রেনের ছাদে ছিনতাই, ছিনতাইকালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে চলন্ত ট্রেন থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। অনেক সময় নেশাগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাও নেশার টাকা জোগাতে মোটরবাইক ও গাড়িতে করে ছিনতাই করছে। রিকশা চালক বা সিএনজি চালকদের সাথে আঁতাত করেও চলে ছিনতাই।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গত ২২ মে রাজধানীতে ছিনতাইকারী নেই বলে ঘোষণা দেন। পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে কমিশনারÑ ঢাকা শহরে চুরি নেই, ছিনতাই নেই, ডাকাতি নেই। এছাড়া ছিনতাই পার্টি, মলম পার্টি, মাইক্রো পার্টিসহ কোনটাই নেই বলে জানান। যদিও কমিশনারের এমন ঘোষণার মধ্যেও থেমে থাকেনি ছিনতাই।
গত বুধবার রাজধানী তেজগাঁও ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা থেকে ১০ ছিনতাইকারীেেক গ্রফতার করেছে র্যাব-২ এর একটি দল। তারা হলোÑ বিল্লাল, মনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম ওরফে রমজান, স্বপন, রানা আকন্দ, সুমন, রিচার্ড ফলিয়া সাগর, কবির, রুবেল ও ঝুম্মাদ। এর আগে গত ২৫ মে তেজগাঁও কাঁচাবাজর এলাকায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রাজীব মিয়া (২২) নামে এক আনসার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া একইদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তান এলাকা থেকে ছিনতাই, অজ্ঞান ও ডাকাত চক্রের ১৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ। এছাড়া ওইদিনই র্যাব-১০ এর অভিযানে গুলিস্থান আরও ৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ১৬ মে রাত ৮টার দিকে একই এলাকায় ট্রেনে দুই যুবককে কুপিয়ে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।