ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়দানকারীদের তৎপরতায় আসলরা বিব্রত

অপরাধ রাজধানী

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভুয়া উপ-পরিচালক

পরিচয়দানকারী চক্রের প্রধান গ্রেফতার

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই ভুয়া পরিচয়দানকারী সচিব, সামরিক-বেসমারিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের তান্ডব চলছে। এরা কখনো সচিব, মেজর-কর্নেল, ডিবি-সিআইডি’র কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করছে।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয়েও প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে আটক ও গ্রেফতারও করছে। তারপরও এসব ভুয়া পরিচয়দানকারী প্রতারকচক্রের প্রতারণা চলছে। আর এদের প্রতারণার কারণে আসল সরকারি কর্মকর্তাগণ বিব্রত।
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভুয়া উপ-পরিচালক পরিচয়দানকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাকে র‌্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। তার নাম নাজমুল হাসান ওরফে আমিনুল ইসলাম জন (৩৯)।
জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর সহযোগীতায় র‌্যাব-৪ এর একটি দল মিরপুর-১, আহম্মেদ নগর, জোনাকি রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। র‌্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জনকে গ্রেফতারের সময় তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নথিপত্র ও ভুক্তভোগী কর্তৃক ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদত্ত ১ লাখ টাকা প্রদানের স্লিপ, ১৯টি উপ-পরিচালক, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো এর ভিজিটিং কার্ড, ১টি উপ-পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর ভুয়া পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।
র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত নাজমুল আহসান বিজয় ওরফে আমিনুল ইসলাম জন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর উপ-পরিচালক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করে আসছিল। আর এসব অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব ও এনএসআই তদন্তে মাঠে নামে। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় গোয়েন্দারা। এরপর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত জন র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর উপ-পরিচালক, কখনো এনএসআই এর উপ-পরিচালক পরিচয় দিয়ে সাধারণ ছাত্র, বেকার যুবক এবং দরিদ্র ছাত্রদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরীর আশ্বাস দিতেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া গত বছর ৯ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মো. বাবুল (৩৫) নামের এক ভুয়া সচিবকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টিএ রোডে ফুটপাতের দোকানিদের কাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) কর্মকর্তারা তাকে আটকের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। তার বাবার নাম গোলাম রাব্বানী। কসবা উপজেলায় তাদের বাড়ি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
এছাড়া, গায়ে র‌্যাবের জ্যাকেট, হাতে ওয়াকিটকি যে কেউ দেখলেই ভাববেন র‌্যাব কর্মকর্তা। আর এ সুযোগেই গ্রামের সহজ-সরল ব্যক্তিদেরকে বিদেশ পাঠানো বা চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। আর এসব অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাবের গোয়েন্দারা মাঠে নামে। একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর বিমানবন্দর থানার উত্তরার ফুড ডিলেজ এন্ড বিরিয়ানি হাউজ নামক রেস্টুরেন্টের সামনে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আজিম উদ্দিনকে (৫১) গ্রেফতার করে। র‌্যাব-১ এর এক বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এসময় তার কাছ থেকে ১টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি ভুয়া র‌্যাবের জ্যাকেট, ১জোড়া হাতকড়া, ৩টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ২টি মোবাইল ফোন, ১টি ব্যাগ, ১টি চাবি, ৪টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সিল এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
আবার গত বছরের জুন মাসে ফতুল্লায় সেনাসদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে আফজাল মিনহাজ সংগ্রাম (৪৮) নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি ভুয়া আইডি কার্ড ও লাঠি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আফজারের বাড়ি নাটোরে। তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেনা সদস্য বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে বেড়ায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ঘটনার দিন তিনি সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে সামাজিক দূরত্ব না মানায় সকলকে মারপিট শুরু করে। এরপর এক মাংসের দোকানে ৬৫ কেজি মাংসের অর্ডার দেয়। মাংসের দর কেজিপ্রতি ৫২০ টাকা হলেও মেমোতে ৬৫০ টাকা লিখতে বলে। আর টাকা না দিয়েই সিএনজিতে মাংস তোলায় লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটকের পর পুলিশের সোপর্দ করা হয়।


বিজ্ঞাপন