স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আজ

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয়

দিবসটি ভার্চুয়ালি পালন করবে ৫০ দেশ
লাল সবুজে আলোকিত হচ্ছে লন্ডন আই
উদ্ভাসিত অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক স্থাপনা

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল একটি ভূখ-, যার নাম বাংলাদেশ। সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের এ দেশটির স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে আজ।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ দিনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরও। এবার তাই উদযাপনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এর সাথে আর একটি নতুন পালক যোগ হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জাতিসংঘের চুড়ান্ত সুপারিশ।
জানা গেছে, জার্মান আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পঁচিশে মার্চ দিবাগত রাত থেকে ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহর পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টি দেশে বসবাসরত বাঙালিদের নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জার্মান আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সময় ২৫ মার্চ রাত ৯টা এবং ইউরোপের সময় বিকাল ৪টা থেকে ভার্চুয়াল ওই উৎসব শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী।
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন- বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হাই কমিশনার খলিলুর রহমান এবং বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ ও জার্মান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অনিল দাশ গুপ্ত, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের নামও রয়েছে।
অনুষ্ঠানটির সভাপতি জার্মান আওয়ামী লীগের সভাপতি বসিরুল আলম চৌধুরী, সঞ্চালনায় জার্মান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী চৌধুরী, সার্বিক সহযোগিতায় জার্মান আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ও প্রকৌশলী কাজী আসিফ হোসেন দীপ ও প্রচারে দায়িত্বে জার্মান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোল্লা হাবিবুর রহমান এবং উপ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।
অপরদিকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে লাল সবুজ রঙে আলোকিত হয়ে উঠবে আইকনিক স্থাপনা ‘লন্ডন আই’।
২৬ মার্চ সন্ধ্যায় টেমস নদীর তীরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম চাকা স্থাপনায় এ যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপিরেশন’ (বিবিপিআই) ও ‘লাস্টমিনিট ডটকম লন্ডন আই’।
বিবিপিআই ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি কাউন্সিলার আব্দাল উল্লাহ বলেন, লন্ডন আই এর উপরে উঠলে ৪০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত নগরীর দৃশ্য দেখা যায়। এটি লন্ডনে পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা। ফাউন্ডেশনের আরেক ট্রাস্টি আয়েশা কোরেশি জানান, করোনাভাইরাসে ব্রিটিশ বাংলাদেশি যারা মারা গেছেন ওইদিন তাদের স্মরণ করা হবে এ আলোকসজ্জার মাধ্যমে।
‘লাস্টমিনিট ডটকম লন্ডন আই’ এর মহাব্যবস্থাপক সানি জোহাল বলেন, সরকারের লকডাউন নীতিমালা ও করোনাভাইরাস নির্দেশিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপনে শুধু আলোকসজ্জা করা হবে। তবে জনসাধারণদের তা দেখার জন্য বাইরে যেতে উৎসাহিত করা হবে না।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের জন্য বড় বড় শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং ও দর্শনীয় স্থানে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাডিনবরার চেম্বার অব কমার্স বিল্ডিং ও সিটি এয়ারপোর্ট, নিউ ক্যাসলের মিলেনিয়াম ব্রিজ, মানচেস্টার সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, বার্মিংহ্যাম সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, নথার্ম্পটন ইউনিভার্সিটি বিল্ডিং, কার্ডিফ ক্যাসল ও লন্ডনের ক্যানারি হোয়ার্ফ।
এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল আসছে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয়মাসব্যাপি নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে বলে জানা গেছে।
সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে লাল-সবুজ আলোয় আলোকিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার দুই ঐতিহাসিক স্থাপত্য স্টোরি ব্রিজ এবং ভিক্টোরিয়া ব্রিজ। অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কুইন্সল্যান্ডের শহর ব্রিসবেনে বাংলাদেশ কমিউনিটি আয়োজন করে বর্ণিল আলোকসজ্জা। স্থানীয় বাংলাদেশিরা জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই দুইটি সেতু প্রতিদিনই আলোকিত করা হয় বিশেষ বিশেষ কারণে। এবারই প্রথম তা আলোকিত হলো বাংলাদেশের জন্য।
সন্ধ্যা ৭টায় আলো যখন পূর্ণভাবে জলে উঠে তখন ব্রিসবেন নদীতে আলোতে প্রতিফলিত প্রাণের লাল-সবুজ। ব্রিসবেনে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা মিলিত হন ব্রিজের নিচে। এক পর্যায়ে সবাই একসঙ্গে গেয়ে ওঠেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’।
বাংলাদেশি ড. জিশু দাস গুপ্ত এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন ব্রিসবেনের (ব্যাব) উদ্যোগ এবং অস্ট্রেলিয়ান লোকাল গভর্নমেন্টের সহযোগিতায় এ আয়োজন করা হয়।
এই প্রসঙ্গে ব্যাবের প্রেসিডেন্ট মুনির রহমান বলেন, একজন গর্বিত বাংলাদশি হিসেবে এই অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমাদের অনেকদিনের প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে এই আয়োজন করার। এটি আমাদের সূচনা মাত্র। আমরা আগামী দিনে ব্রিসবেন তথা সমগ্র অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশকে তুলে ধরব আরও উঁচু থেকে উঁচুতে, যা হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশের প্রতি দায়িত্ব এবং ভালবাসার দৃষ্টান্ত।
আরেকজন উদ্যোক্তা ড. জিশু দাস গুপ্ত বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ব্রিসবেনে বাংলাদেশ কমিউনিটির সব সদস্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চেষ্টার ফলেই আয়োজন। আমরা চাই এই অর্জন ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীর সকল আনাচে কানাচে এবং জ্বলে উঠুক বাংলাদেশের নাম।
উল্লেখ্য, মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা যোগ্যতা নির্ধারণের তিনটি সূচকের ২০১৮ ও ২০২১ সালের মূল্যায়নে মান অর্জন করায় এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি এ সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ করার এই ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল আছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তুলনা দেওয়া হয়েছে, তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই দেশগুলোও রপ্তানিভিত্তিক উন্নয়নের পথে হেঁটে আজ এত দূর গিয়েছে। আধুনিক ইতিহাসে দেখা গেছে, রপ্তানিমুখী উন্নয়নের বদৌলতে অতি নি¤œ আয়ের দেশও মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতি হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
যদিও স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এই মহান উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে, আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং একটি মর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যাতে কেউ আমাদেরকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে অবহেলা করতে না পারে।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, বিজয় অর্জনের পর ৫০ বছরের পথচলায় দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বতন্ত্র দেশ পেয়েছি, আর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চলেছি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
অনেক প্রাপ্তি নিয়েও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবার উদযাপিত হবে অন্যরকম ভাবে। এমন একটি সময়ে উদযাপন হবে, যখন বাংলাদেশসহ চারদিকে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবা। এর মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভা-ারী, ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং উপস্থিত ছিলেন। আজ ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকার কথা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সাভার জাতীয় স্মৃতি সৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন।
ইতিহাসের আলোকে, একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালীদের উপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৮২সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র তৃতীয় খন্ডে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের এই ঘোষণা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি। যা তৎকালীন ইপিআর এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস-এ ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। ঘোষণায় বলা হয়, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি- যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। তত দিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’


বিজ্ঞাপন