স্বাস্থবিধির বালাই নেই গণপরিবহনে

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ম অনুযায়ী এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী বসানোর কথা গণপরিবহনগুলোতে। সেই সঙ্গে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এক সিট ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও রাজধানীর বেশকিছু গণপরিবহনগুলোতে দেখা গেছে সেই আগের চিত্র। স্বাস্থবিধির তোয়াক্কা না করেই যাত্রীদের সিটে বসাচ্ছে বাসের হেলপার। হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে বাসের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকার কথা থাকলেও কোনো গণপরিবহনেই সেই চিত্র দেখা যায়নি। ফলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেই বাসে উঠছে যাত্রীরা।
রজনীগন্ধা বাসের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের তো যেতে হবে! আমরা তো নিরুপায়। গণপরিহনের মালিক শ্রমিকদের কাছে আমরা জিম্মি। তাই তারা যেভাবে নিবে আমাদের তো সেইভাবেই যেতে হবে।
একই বাসের ড্রাইভার জলিলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা তো যাত্রীদের জোড় করে ওঠায় না। তারা যদি সিট ফাঁকা না রেখে বসে তাহলে আমাদের কী করার আছে।
আপনার বাসে স্যানিটাইজার নেই কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্যানিটাইজার ছিল; শেষ হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের পর ঢাকা এখন প্রায় ফাঁকা। তবুও যাত্রীরা সিট ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও তারা স্বাস্থবিধি মানছে না। আবার বাসের হেলপাররাও যাত্রীদেরকে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে পারছে না। সুতরাং গণপরিহনে করোনাভাইরাসের মারাত্বক ঝুঁকি রয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে গণপরিবহন ও যাত্রী দুইই ছিল কম। সরকার ঘোষিত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপের চতুর্থ দিনে করোনা নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনে সরকারি নির্দেশনা মানছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্থান সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। এদিকে শুধুমাত্র আসনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানছে চালক হেলপাররা। তাছাড়া অন্য কোনো নির্দেশনা মানছে না তারা।
যাত্রী কম থাকায় প্রায় সব বাসেরই অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা ছিল। তবে স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীর হাত পরিষ্কার করা, ট্রিপের আগে পরে বাস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা, পরিবহন-শ্রমিক ও যাত্রীদের সবার মাস্ক পরিধান করা, গ্লাভস নিশ্চিত করা এসব কোনোকিছুই চোখে পড়েনি। বাসের চালক হেলপার কারোর হাতেই ছিল না হ্যান্ড গ্লাভস। অধিকাংশ হেলপারদে দেখা গেছে মাস্ক ছাড়াই যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে। আবার গ্লাভস ছাড়াই যাত্রীদের সঙ্গে টাকার আদান-প্রদান করছেন হেলপাররা।
ধানমন্ডির জিগাতলা বাস স্ট্যান্ডে মিডলাইন পরিবহনের হেলপার রাজনের মুখে মাস্ক ছিল না। তার মুখে মাস্ক নেই কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মাস্ক পড়া থাকলে কথা বলা যায় না।
এ ব্যাপারে যাত্রীরা বলছেন, শর্ত অনুযায়ী ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে আসন একটা করে ফাঁকা রাখার কথা ছিল। কিন্তু অনেক সময় বাসের আসন ফাঁকা রাখা হয় না।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ সদু সকালের সময়কে বলেন, গণপরিবহনের চালক কিংবা হেলপারদের আমরা যতটুকু পারি সতর্ক করে দেই। তারপরেও যদি তারা নিয়মের বাইরে যায় তাহলে তো আমাদেরও কোনোকিছু করার থাকে না। কারণ আমরা তো প্রতিটা বাসে গিয়ে চালক হেলপারদের সঙ্গে বসে থাকতে পারি না। তাদেরকে তো বলে দেয়া হয়। তারপরেও তারা কেন মাস্ক পড়ে না, কেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে না এই কারণটাই আমরা বুঝতে পারি না।
তিনি বলেন, এদিকে যাত্রীদেরও কিছুটা ত্রুটি আছে। আমরা দেখেছি, অনেক সময় যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে যায়। তবে এখানেও হেলপারদের অনেকটা ত্রুটি আছে তা আমি মানছি। বাস স্যানিটাইজ করা বা পরিবহন-শ্রমিকদের মাস্ক পরানো এটা আমরা তাদেরকে বাধ্য করতে ব্যর্থ।
তিনি আরও বলেন, হেলপাররা আসলে এতটা শিক্ষিত না। তাই তারা অনেক কিছু বুঝে না। স্বাস্থবিধি কাকে বলে এটাও অনেক বাস চালক-হেলপাররা জানেন না। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা, যাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ করা, বাস স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি এতো কিছু আসলে তারা গুলিয়ে ফেলে। তাই হয়তো অনেকটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে আমরা এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো তাদের সঙ্গে। যতটা সম্ভব তাদের সতর্ক করার চেষ্টা করবো।


বিজ্ঞাপন