শিশু কন্যার জবানবন্দিতে উন্মোচিত হলো ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : রোজিনা আক্তার দুলালী(২৫),হত্যা কান্ডের শিকার হয়েছিল তাঁর স্বামী কর্তৃক। হত্যাকরার পর রোজিনার স্বামী হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কৌশলে প্রচার করেছিল আত্মহত্যা বলে।


বিজ্ঞাপন

গত ১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ সন্ধাবেলা রোজিনা প্রতিদিনের ন্যায় দুগ্ধপোষ্য শিশু আয়েশা সিদ্দিকা(বয়স ১০ মাস), এবং তাঁহার পূর্বের স্বামীর কন্যাশিশু মারিয়া(০৫) সহ নীলফামারী থানাধীন সংগলশী ইউনিয়নের শিমুলতলী নামক স্থানে জনৈক ওমর আলীর ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিল।


বিজ্ঞাপন

রোজিনার স্বামী আসামী ইউনুস আলী(৩৮), পিতা-মৃত নাজির উদ্দিন, সাং-কাদিখোল, পোষ্ট-সংগলশী,থানা ও জেলা-নীলফামারী ২০০৬ সালে বিবাহ করেন রাশেদা বেগম নামের অপর এক নারীকে।

রাশেদাকে না জানিয়ে পরবর্তীতে বিবাহ করেন হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া রোজিনা আক্তার দুলালী(২৫),পিতা-মো: দুলাল হোসেন, সাং-ঢেলাপীর আবাসন, থানা-সৈয়দপুর, জেলা-নীলফামারীকে ২০১৬ সালে।

দুই স্ত্রী থাকার কারনে ইউনুসের সংসারে প্রতিনিয়ত চলতো পারিবারিক কলহ।
পূর্বের স্ত্রীর বাড়িতে আসামী ইউনুসের তিনটি ছেলে সন্তান এবং হত্যার শিকার হওয়া রোজিনার কোলে ছিল আয়েশা সিদ্দিকা নামের দুগ্ধপোষ্য শিশু।

হত্যাকান্ডের ঘটনার সময় মৃতার সাথে ঘরে ছিল আয়েশা এবং রোজিনার পূর্ব পক্ষের শিশু কন্যা মারিয়া(০৫)। একই বাসার অপর একটি কক্ষে ভাড়া থাকতো মৃতার ভাই রাকিবুল এবং তাহার স্ত্রী সিমরান।

ঘটনার দিন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। উক্ত সময় মৃতার ভাই ও তাহার স্ত্রী বাড়িতে না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসামী ইউনুস তাহার স্ত্রীকে প্রথমে হাত দিয়ে গলা চিপে ধরে। উক্ত সময় রোজিনা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাহাকে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের সহিত ঝুলিয়ে রাখে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য।

উক্ত সময় ঘরে থাকা মারিয়া(০৫) কে ঘরের দরজা বন্ধ করে চুপ থাকতে বলে সে বাড়ি হইতে বেড় হয়ে যায়। অপরদিকে মৃতার ভাই রাকিবুল তাহার স্ত্রী সহ ভাড়া বাসায় ফেরার সময় দেখা হয় আসামী ইউনুসের ।

সে তখন রাকিবুলকে জানায় তাহার স্ত্রী ঘুমিয়ে। কিছুসময় পর আসামী ইউনুস পুন:রায় বাড়িতে ফিরে এসে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর

কৌশল হিসেবে তাহার স্ত্রীর নাম ধরে ডাকে, তাহার স্ত্রী ঘরের দরজা না খোলায় সে তাহার শ্যালক রাকিবুলকে জানায় তাহার বোন ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।

রাকিবুল তখন অন্য ঘরের সিলিং এর উপর দিয়ে তাহার বোনের ঘরে প্রবেশ করে গলায় প্যাচানো ওড়না কেটে রোজিনাকে নামায়। সৈয়দপুর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় রোজিনা। হাসপাতাল কতৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে সৈয়দপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা নং-১৯(১২)২১ রুজু হয়।

মরদেহের ময়না তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে জানা যায় রোজিনা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে মৃতার পিতা দুলাল হোসেন এর অভিযোগের ভিত্তিতে নীলফামারী থানার মামলা নং-২০ তারিখ: ২৩/০৩/২০২১ ধারা-৩০২/৩৪ রুজু করা হয়।

মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বিপিএম, পিপিএম পুলিশ সুপার, নীলফামারী মহোদয়ের প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় উক্ত হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং অপরাধিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে গঠন করা হয় একটি চৌকশ টিম ।

বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে শুরু হয় তদন্ত। তদন্তের এক পযায়ে শিশু কন্যা মারিয়ার মাধ্যমে জানা যায় মৃতার স্বামী ইউনুস তাহার স্ত্রী রোজিনাকে গলা টিপে এবং ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে তাহার মা কে হত্যা করে এবং তাহাকে ঘরের দরজা বন্ধ করতে বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

শিশু মারিয়া ইং-০৬/০৪/২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার বিষয়ে ফৌজদারী কাযবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেছে। আসামী ইউনুসকে গ্রেফতারপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে ইং-০৭/০৪/২০২০১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। উক্ত আসামী হত্যাকান্ডের বিস্তারিত উল্লেখ পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।