বাতাসে ছড়াচ্ছে করোনা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী সারাদেশ স্বাস্থ্য

দেশে শতাধিক মৃত্যু

 

এমএ স্বপন : ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র চতুর্থ দিনে দেশে করোনায় আজও সর্বোচ্চ ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার একদিনে সর্বোচ্চ ১০১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ হাজার ২৮৩ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ৪৭৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৯০৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৮ হাজার ৮১৫ জন।
এদিকে লালা বা ড্রপলেটের তুলনায় বাতাসের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়ায় অনেক বেশি। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই তথ্য জানিয়েছেন একদল গবেষক। এনডিটিভি।
সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, বা করোনাভাইরাসের ছড়ানো নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় জন গবেষকের একটি দল। দলের অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বৌল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কো অপারেটিভ ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন এনভায়ার্নমেন্টাল সায়েন্সের (সিআইআরইএস) রসায়নবিদ জস লুইস জিমেনেজ, আমাদের গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য বলছে, লালা বা ড্রপলেটের তুলনায় বাতাসে এই ভাইরাসটি অনেক দ্রুত ও অবাধে ছড়ায়।
জিমেনেজ বলেন, আমাদের মতে, করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে অবিলম্বে এই তথ্যটি অন্তর্ভূক্ত করা উচিত এবং কিভাবে ভাইরাসটির বায়ুবাহিত সংক্রমণ কমানো যায়— এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গবেষক দলের সদস্যরা তাদের নিবন্ধে আরো বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত মৃদু উপসর্গের রোগী অর্থাৎ যাদের ঘন ঘন হাঁচি বা কাশির মতো উপসর্গ নেই তারা ভাইরাসটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখেন। বিশ্বজুড়ে মোট সংক্রমণের অন্তত ৪০শতাংশ ঘটেছে এই মৃদু উপসর্গের রোগীদের কারণে।
বাতাসে এই ভাইরাসটির সংক্রমণের হার এত বেশি যে, হোটেলে পাশাপাশি কক্ষে থাকা লোকজন একে অপরের কাছাকাছি না এলেও শুধু বায়ুবাহিত কারণে এই ভাইরাসটি এক কক্ষ থেকে অপর কক্ষে থাকা লোকজনের দেহে প্রবেশ করতে সক্ষম।
করোনা মহামারির শুরুর দিকে বিশেষজ্ঞদের একাংশ যদিও বলেছিলেন, লালা বা থুথুর (ড্রপলেট) মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ব্যপকভাবে ছড়ায়, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় এর পক্ষে তেমন জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এই গবেষক দলের সদস্যরা।
গবেষকদলের প্রধান ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ট্রিশ গ্রিনহালফ বলেন, মহামারির শুরু থেকেই ঘন ঘন হাতধোওয়া এবং আশপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারটিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তবে তারচেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই রোগের বায়ুবাহিত সংক্রমণ রোধে কার্যকর উপায় বের করা।
কারণ বায়ুবাহিত হওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর থেকে দূরে থাকা স্বত্বেও তার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনো সুস্থ মানুষ। এমনকি বাসায় অবস্থান করেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন বেশ কিছু নজির আমরা পেয়েছি। এ কারণে আমরা বলব, বাইরে বেরোনোর সময় তো বটেই, ঘরে অবস্থান করার সময়ও যতক্ষণ সম্ভব মাস্ক পরে থাকা উচিত।
গবেষক দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবানুবিশেষজ্ঞ কিমবার্লি প্রাথার বলেন, আমরা যেহেতু জানতে পেরেছি, এই ভাইরাসটি প্রধানত বায়ুবাহিত, এখন সেটিকে আমরা সেইভাবে মোকাবিলাও করতে পারব। বিভিন্ন দেশ শুরু থেকেই এভাবে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে এবং অনেকটা সফলও হয়েছে। আমরা তাদের অনুসরণ করতে পারি।’
‘সর্বাত্মক লকডাউন’র চতুর্থ দিনে দেশে করোনায় আজও সর্বোচ্চ ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার একদিনে সর্বোচ্চ ১০১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ হাজার ২৮৩ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ৪৭৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৯০৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৮ হাজার ৮১৫ জন।
এর আগে শুক্রবার দেশে আরও ৪ হাজার ৪১৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া মারা যান দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১০১ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন ১২ হাজার ৫১৪ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫২ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ লাখ ১২ হাজার ৭ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটি ৫ লাখ ১১ হাজার ৪২৫ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার ৭০৯ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ২৩ লাখ ৫ হাজার ৯১২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪২ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৪৫ লাখ ২১ হাজার ৬৮৩ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৩ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪২ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৩২১ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ৪০৪ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৪ হাজার ৭৯৫ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, তুরস্ক সপ্তম, ইতালি অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন