আজকের দেশ রিপোর্ট : সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের আওতায় আরোপি ত বিধিনিষেধ তদারকিতে ডিসিসির কাকা অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে মামলা ও জরিমানা নিরূপণ করা হয়।
রবিবার (১৮ এপ্রিল ) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) আওতাধীন এলাকায় একযোগে ১১ ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে।
ঢাদসিক এর অঞ্চল ১-৭ ও ১০ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের (আনিক) পাশাপাশি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতসমূহের নেতৃত্ব দেন।
অভিযানে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা, অনুমোদনবিহীন দোকানপাট খোলা রাখা ও মশার লার্ভা পাওয়ায় ঢাকা নিবাস নামীয় একটি ডেভেলপার কোম্পানীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে আদালতগুলো মোট ৩৩টি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় সর্বমোট ৭৫ হাজার ১ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ঢাদসিক এর আঞ্চল-১ এর আনিক মেরীনা নাজনীন আজ ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোড, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা ও বেইলি রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে তিনটার পরে খোলা রাখায় সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ ৩০টি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অঞ্চল-২ এর আনিক সুয়ে মেন জো এর তত্ত্বাবধানে ৪নং ওয়ার্ডের বাসাবো বালুর মাঠ সংলগ্ন এলাকার কাঁচা বাজার, বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন রোডে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা এবং অননুমোদিতভাবে দোকান খোলা রাখায় প্রায় ৫০ ব্যক্তি ও দোকানকে সতর্ক করা হয়।
অঞ্চল -৩ এর আনিক বাবর আলী মীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত করেন। এ সময় ২৫টির অধিক অননুমোদিত দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং প্রয়োজন ছাড়া মাস্ক না পরে বের হওয়ায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১টি মামলা দায়ের ও ১ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অঞ্চল -৪ এর আনিক মো. হায়দর আলী ৩৬ নং ওয়ার্ডের তাঁতীবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় অনুমোদনহীন দোকান খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় মোট ১৮টি মামলা দায়ের করেন এবং নগদ ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
অঞ্চল -৫ এর আনিক মো. শাহীনুর আলম ৪৯ নং ওয়ার্ডের ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজার অভিযান পরিচালনা করেন এবং ৩টার পরে খোলা রাখায় ৫টি দোকান বন্ধ করে দেন।
অঞ্চল -৬ এর আনিক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার ৭৫নং ওয়ার্ডের শেখের জায়গা, মোস্তামাঝির মোড়, নাগদারপাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে অনুনোমোদিতভাবে খোলা রাখা ৮০টি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অপ্রয়োজনে ঘুরাফেরা করা প্রায় ৫০ ব্যক্তিকে সতর্ক করা হয়।
অঞ্চল -৭ এর আনিক ড. মোহাম্মদ মাহে আলম মান্ডা ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি অনুনোমোদিত ২০টির অধিক দোকান বন্ধ করে দেন।
অঞ্চল-৮ এর আনিক শহিদুল ইসলাম ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন গলিতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি প্রায় ২৫টি দোকানকে লকডাউন সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রতিপালনের বিষয়ে সতর্ক করেন। এছাড়াও মাস্কবিহীন পথচারীদের সতর্ক করা হয়েছে।
অঞ্চল-১০ এর আনিক মোহাম্মদ মামুন মিয়া শনির আঁখড়া জিয়া সরণি এলাকায় রাস্তার দু’পাশের কাঁচা বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে অনুনোমোদিত দোকানপাট বন্ধ পেলেও প্রচুর লোকসমাগম দেখতে পান।
এদিকে ঢাদসিক এর সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামানের নেতৃতত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ মালিবাগ রেলগেইট বাজার, শান্তিনগর বাজার ও ফকিরাপুল বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। পরিদর্শন করা হয়। এ সময় সরকারি নির্দেশনা না মানায় ৭টি মামলার মাধ্যমে ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ আজ ওয়ারী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, জয়কালী মন্দির এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে সরকারী বিধি নিষেধ অমান্য করায় আদালত ৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং নগদ ৩৩ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আদায় করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা কবীর ত্রপার নেতৃত্বে এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণের লক্ষে আজ মালিটোলায় ২৬টি স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ১টি মামলা দায়ের ও নগদ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
আজকের অভিযান প্রসঙ্গে অঞ্চল-১০ এর আনিক মোহাম্মদ মামুন মিয়া বলেন, “আজ শনির আঁখড়ার জিয়া সরণি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এ সময় অনুনোমোদিত দোকানপাট ও ৩টার পর অনুমোদিত কাঁচাবাজার বন্ধ পেয়েছি। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে প্রচুর লোকসমাগম করতে দেখেছি। পরে সেসব লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও বিনা প্রয়োজনে বের না হতে সতর্ক করেছি।”
অভিযান প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা কবীর ত্রপা বলেন, “এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে আজ মালিটোলায় অভিযান পরিচালনা করেছি। ২৬টি স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে ১টি নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পাই। ‘ঢাকা নিবাস’ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানী বাড়িটি নির্মাণ করছে। পরে সেই ডেভেলপার কোম্পানীর বিরুদ্ধে ১টি মামলা দায়ের ও নগদ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি।”
অভিযানকালে আনিক -২ এর সাথে কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, আনিক -৪ এর সাথে ৩৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জন বিশ্বাস, আনিক -৬ এর সাথে কাউন্সিলর মো. আকবর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানকালে সব ক’টি আদালতই লকডাউনের নির্দেশনা মেনে চলতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে মাইকিং করেন। এছাড়াও বিনা প্রয়োজনে অযথা বাড়ির বাইরে বের না হওয়া, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেন।