বিল গেটস দম্পতির বিচ্ছেদ, অক্ষত থাকছে ফাউন্ডেশন

আন্তর্জাতিক

আজকের দেশ ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম বড় বেসরকারি দাতব্য সংস্থার দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ধনকুবের দাতা বিল এবং মেলিন্ডা গেটস সোমবার বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। বিয়ের ২৭ বছরের মাথায় তাদের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কারণে দাতব্য সংস্থাটি আক্রান্ত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে তারা দুই জনই ঘোষণা দিয়েছেন, বিচ্ছেদ হলেও মানবহিতৈষী কাজ একত্রে চালিয়ে যাবেন তারা।
দুনিয়াজুড়ে জনস্বাস্থ্য খাতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠেছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। গত দুই দশক ধরে এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পাঁচ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে তারা দারিদ্র্য এবং রোগ মোকাবিলায় বাণিজ্যিক মনোভাব আনার চেষ্টা করেছেন। ম্যালেরিয়া এবং পোলিও নির্মূল, শিশু পুষ্টি এবং টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন গেটস যুগল। গত বছর কোভিড-১৯ ত্রাণ হিসেবে ফাউন্ডেশনটি ১৭৫ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বিচ্ছেদের যৌথ আবেদনে ওই যুগল জানিয়েছেন, অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের আইনি সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। তবে বৈবাহিক সম্পদ কীভাবে বণ্টন হবে তা নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছেছেন বলেও জানান তারা। তবে ওই চুক্তির বিস্তারিত সম্পর্কে সিয়াটলের কিং কাউন্টি সুপিরিয়র আদালতে দাখিল করা আবেদনে কিছুই বলা হয়নি।
বর্তমানের ৬৫ বছর বয়সী বিল গেটস মাইক্রোসফট করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানিটিতে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস (৫৬)। দুই জনের পরিচয় সেখানে। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে হাওয়াইতে বিয়ে করার আগে কয়েক বছর তারা ডেটও করেছেন।
নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে আলাদাভাবে পোস্ট করা এক যৌথ বিবৃতিতে এই যুগল বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে অনেক চিন্তা এবং কাজের পর আমরা আমাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারা আরও বলেন, আমরা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে যুগল হিসেবে চলতে পারবো। নতুন এই জীবন পরিচালনার জন্য আমরা আমাদের পারিবারিক জীবনের জন্য কিছুটা জায়গা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা চাইছি।’
বিচ্ছেদের আবেদনে এই যুগল জানিয়েছেন, তাদের কোনও ছোট সন্তান নেই। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি সম্প্রতি ১৮ বছরে উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তারা।
অলাভজনক বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু ২০০০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসরকারি মানবহিতৈষী ফাউন্ডেশন এটি। এছাড়া বিশ্বের অন্যতম বড় দাতব্য ফাউন্ডেশনও। নিজেদের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বার্ষিক হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালের শেষে ফাউন্ডেশনটির নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় চার হাজার ৩৩০ কোটি ডলারে। ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই যুগল সিয়াটলভিত্তিক ফাউন্ডেশনটিকে মোট তিন হাজার ছয়শ’ কোটি ডলার উপহার দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ওই ওয়েবসাইট।
গত বছর বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট তার বার্কশায়ার হাথাওয়ে ইনকরপোরেশন থেকে গেটস ফাউন্ডেশনে দুইশ’ কোটি ডলার অনুদান দেন। মৃত্যুর আগে সব সম্পদ দান করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই অনুদান দেন তিনি।
বিচ্ছেদের আবেদনে গেটস যুগল তাদের বিয়ের ইতি টানার আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে তাদের যৌথ সম্পত্তি, ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং দায় বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী বণ্টনের আবেদন করেছেন। তবে এর কোনও কিছুই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি।
ফোর্বস সাময়িকীর তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার চারশ’ কোটি ডলার।
গেটস ফাউন্ডেশনের আলাদা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই যুগল ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার এবং ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন। বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ফাউন্ডেশনের কৌশল নির্ধারণ ও অনুমোদন, ফাউন্ডেশন ইস্যুতে পরামর্শ এবং সংস্থার সার্বিক নির্দেশনার কাজ চালিয়ে যাবেন।
সিয়াটলভিত্তিক আরেক ধনকুবের ও মানবহিতৈষী অ্যামাজন.কম ইনকরপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং তার তৎকালীন স্ত্রী ম্যাকেঞ্জির মধ্যে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার দুই বছরের মাথায় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন বিল এবং মেলিন্ডা গেটস।
১৯৭৫ সালে স্কুলবন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট শুরু করতে গিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন বিল গেটস। ১৯৮৬ সালে কোম্পানিটির শেয়ার ছাড়ার সময়ে তিনি ৪৯ শতাংশ মালিকানা পান। এর মাধ্যমে তিনি রাতারাতি ধনকুবেরে পরিণত হন। এরপর মাইক্রোসফট যত বিশালাকৃতি নিয়েছে তার সম্পদের পরিমাণ তত বেড়েছে।
নির্বাহী হিসেবে মাইক্রোসফটকে দুনিয়ার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে সহায়তা দেওয়ার পর ২০০০ সালে তিনি মাইক্রোসফটের সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরে যান। এরপর ২০২০ সালের মার্চে তিনি কোম্পানির বোর্ড থেকেও সরে যান।
অন্যদিকে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস বেড়ে উঠেছেন ডালাসে। মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এবং অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি পিভোটাল ভেঞ্চার নামে একটি বিনিয়োগ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। নারী এবং পরিবারই এই কোম্পানির মূল লক্ষ্য। ২০১৯ সালে তিনি নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে ‘দ্য মোমেন্ট অব লিফট’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন।


বিজ্ঞাপন