বেদে সেজে ইয়াবা পাচারে গ্রেফতার ৫

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রীজ এলাকায় বেদের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে ৭৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. তারিকুল ইসলাম (২৩), মো. সিনবাদ (২৩), মো. মিম মিয়া (২২), মো. ইমন (১৯), ও মো. মনির (২৮),
র‌্যাব জানায়, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একদল মাদক কারবারী মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে নদী পথে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রীজ এলাকায় হস্তান্তরের উদ্দেশে আসছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-২ এর একটি দল রাত সোয়া ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর বসিলা মধ্যপাড়া এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে সেখান থেকে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্য মো. তারিকুল ইসলাম (২৩), মো. সিনবাদ (২৩), মো. মিম মিয়া (২২), মো. ইমন (১৯) ও মো. মনিরদের (২৮) গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশীকালে তারা জানায় যে ভাসমান বেদে দলের ছদ্মবেশ ধারণ করে তারা মাদক পাচার করে থাকে। এসময়ে তারা সাথে থাকা বহনযোগ্য রান্না করার টিনের চুলার ভিতরে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ইয়াবার কথা স্বীকার করে। আর রান্না করার চুলার নীচের অংশ কেটে তার ভিতর থেকে মোট ৭৭,০০০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এসময় তাদের নিকট থেকে ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জামাদি, রান্নার হাড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র‌্যাক এবং নানান ধরণের ইমিটেশন অলংকার উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা পারস্পরিক যোগসাজশে নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্র পথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা ট্যাবলেট দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করে নিয়ে আসত। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্না করার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা লুকিয়ে তা আবার ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিত।
এছাড়া, তারা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি, টেম্পু ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিত। আর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে ১ম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসতো।
সেখান থেকে নোয়াখালীর-চৌমুহনী-সোনাইমুরী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসতো। আবার দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করত। এই দীর্ঘ সময় তারা বেদেদের মতই জীবন-যাপন করত এবং সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনিহারী দ্রব্য যেমন-চুড়ি, কড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, শিশুদের কোমড়ে বাঁধার ঘন্টা, চেইন, সেইফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করতো। মাদক পরিবহনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরণের কৌশলের মুখোমুখি এর আগে কখনও হয়নি বলে র‌্যাব কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন