বিশেষ প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যার হাতে হাত রেখে দুর্ভাগ্যের পথ পেছনে ফেলে এসেছে বাঙালি জাতি। তার হাত ধরেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের প্রতীক। কিন্তু এই পথ সহজ ছিল না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন। এরপর প্রাণ হারানোর আশঙ্কা উপেক্ষা করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার হাত ধরেই ফিরে আসে সংসদীয় গণতন্ত্র। ১৯৯৬ সালে, প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েই দেশকে করে তোলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে নির্জন কারাগারে। কেন তাকে বারবার জনগণ থেকে দূরে সরানোর অপচেষ্টা করেছে কুচক্রীরা?
বিশেষ করে, ২০০৭ সালে, এক-এগারোর কুশীলবরা কীভাবে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিতে চেয়েছিল? জেনে নিন ইতিহাসের সেই সব অজানা ঘটনা।
মূলত, দুর্নীতি ও অপশাসনের ঘোরের মধ্যে শেষ হয়ে যায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদ। এরপর, খালেদা জিয়ার পরামর্শে, ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর রাতে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন বিএনপি সমর্থিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ফলে সৃষ্টি হয় সাংবিধানিক সংকট।
এই উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে, ১১ জানুয়ারি ২০০৭, সরকারের ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ নেয় সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য। ইয়াজউদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি রেখে, ফখরুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন তারা। এরপর দেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।
বেসামরিক ছদ্মবেশে এবং সামরিক শাসন শুরু হয় দেশে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ভাঙার চেষ্টা করা হয়। নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র হয় সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে।
এর আগে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলায় শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। তাই দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার চলছিল তার। ক্ষতিগ্রস্ত কান ও চোখের চিকিৎসার জন্য, ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন নেত্রী। চিকিৎসা শেষে, ২৩ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা ছিল তার।
কিন্তু, ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাকে হুমকি দিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা।
তবে বিতর্কিত সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও হুমকি অগ্রাহ্য করে, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন জননেত্রী। সামরিক সদস্য নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হুমকি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ২০০৭ সালের ৭ মে, ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলেন। তাই তার অকুতোভয় কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখতে, ১৬ জুলাই, একটি সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয় তাকে।
শ্রাবণের বৃষ্টিমুখর ভোরে সুধাসদনে প্রবেশ করে যৌথবাহিনী। এরপর সংসদ ভবন এলাকার এক নির্জন সাবজেলে বন্দি করা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর প্রতিদিনই আন্দোলন-সংগ্রাম-প্রতিবাদ চলতে থাকে। ২৩ জুন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
এভাবেই নির্জন কারাগারে ৩৩১ দিন বন্দি করে রাখা হয় তাকে। কিন্তু একটুও বিচলিত হননি তিনি। বরং পিতার মতোই, জেলখানায় বসে ডায়েরিতে লিখে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প তৈরি করেছেন।
অবশেষে জননেত্রীর জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্বের সামনে কুচক্রীদের সব রকমের ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ১১ জুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কুশীলবরা মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তাকে। এরপর দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। জনদাবির মুখে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শিতা ও দুঃসাহসী নেতৃত্বের ওপর ভর করে, সেই নির্বাচনে ২৬৭ আসনে একচেটিয়া জয় লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোট। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৩০টি আসন।
শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন উন্নত বিশ্বের তালিকায় নাম লেখানোর স্বপ্নময় পথ অতিক্রম করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নের গণ্ডি ছড়িয়ে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।