বিশেষ প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ যতবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, শেখ হাসিনার হাত ধরে ততবারই ফিনিক্স পাখির মতো নতুন রূপে ফিরে এসেছে প্রিয় দেশ। কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনোই থেমে থাকেনি। মিথ্যা মামলায় ২০০৭ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জেলে ঢোকানোর পর, একের পর এক মোট ১৩টি মামলা সাজানো হয় তার নামে। কিন্তু একটুও বিচলিত হননি তিনি। উল্টো ৩৩১ দিনের জেলজীবনে নিয়মিত ডায়েরি লিখে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প তৈরি করেছেন। তাকে গ্রেফতারের খবর শুনে প্রথম দিনেই তাৎক্ষণিকভাবে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ঝিনাইদহ, নাটোর, চাঁদপুর ও ভোলার মোট চার জন কর্মী। দেশজুড়ে ফুলকি ফুলকি করে জ্বলতে শুরু করে ক্ষোভের আগুন। সারা বছরজুড়েই তার মুক্তির দাবি জানান ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি-জামায়াত চক্র এবং কতিপয় সামরিক সদস্য নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও হয়রানি শুরু হয়। ফলে তাদের গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। তবে শেখ হাসিনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত দলের কোনো কাউন্সিল করা হবে না বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
অবশেষে, ২০০৮ সালের ২৩ মে, আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের ৭২টি সাংগঠনিক শাখার তৃণমূল নেতারা শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন এবং তাকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য দেশজুড়ে চলমান আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। ২৭ ও ২৮ মে, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়- শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। আওয়ামী লীগের এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় গণগ্রেফতার। প্রায় ২০ হাজার মানুষকে আটক করা হয়। কিন্ত তবুও শেখ হাসিনার পক্ষে গণজোয়ার থামানো যায়নি।
অবশেষে জননেত্রীর জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্বের সামনে কুচক্রীদের সব রকমের ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ১১ জুন, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তারা। এমনকি গাড়িতে করে তার নিজ বাসভবন সুধাসদন-এ পৌঁছে দিয়ে আসা হয় তাকে।
এরপর মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন ‘দিন বদলের সনদ’। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জনগণের জন্য সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিতের ঘোষণা দেওয়া হয় এই ইশতেহারে।
শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও দুঃসাহসী নেতৃত্বে ভর করে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনে একচেটিয়া জয় লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোট। জোটের মোট অর্জিত ২৬৭ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগই পায় ২৩০টি।
এই সরকারের উদ্যোগে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করে পাঁচ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্ত উন্নীত করা হয়। মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়তে থাকে মানুষের। দেশ এগুতে থাকে সমৃদ্ধির পথে। বাংলাদেশ উন্নীত হয় মধ্যম আয়ের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করে, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে, টানা তৃতীয় বার ও মোট চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন উন্নত বিশ্বের তালিকায় নাম লেখানোর স্বপ্নময় পথ অতিক্রম করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্নের গণ্ডি ছড়িয়ে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বীরের জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মান ফিরে পেয়েছে বাঙালি জাতি।